অগ্নিঝরা মার্চনির্বাচিত কলামমুক্তিযুদ্ধ

এমন বাংলাদেশের কথা ভাবি নি

মুনতাসীর মামুন



১৯৭১ সালে যখন বাংলাদেশ স্বাধীন হলো তখন চারদিক তাকিয়ে যা দেখেছি তা আজ কেউ বিশ্বাস করবে না। অবকাঠামো বলতে কিছুই ছিল না। প্রায় প্রতিটি পরিবার কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। সমষ্টিগত বিষণ্নতা সারাদেশে।

খাবার নেই, অনেকের আশ্রয় নেই, ৩০ লাখ পরিবার নিঃস্ব, কে কাকে সান্ত্বনা দেয়। একটি হিসাব দিই, পাকিস্তানিরা সারাদেশে ১৮ হাজার প্রাইমারি স্কুল, ৬ হাজার হাইস্কুল ও মাদ্রাসা এবং ৯০০ কলেজ পুড়িয়ে দিয়েছিল। শূন্য হাতে বঙ্গবন্ধু যাত্রা শুরু করেছিলেন। এ রকম অবস্থায় তার মতো ব্যক্তিত্ব না থাকলে বাংলাদেশে কোনো শাসক শাসন করতে পারতেন কিনা সন্দেহ।

নানা রাজনৈতিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও যদি বিচার করি তাহলে দেখব, আজকের বাংলাদেশের ভিত বঙ্গবন্ধুই গড়ে দিয়েছিলেন। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। ১৯৭৫ সাল থেকে প্রবৃদ্ধি শুরু হয়েছিল।

পরবর্তীকালে সামরিক শাসক ও সমরনায়ক সমর্থিত এবং যুদ্ধাপরাধী সমর্থিত সরকারগুলো বাংলাদেশের মৌলিক অর্জনগুলো বিনষ্ট করেছে। সংবিধান থেকে শুরু করে মূল্যবোধ তছনছ করেছে। প্রবৃদ্ধি খুব কিছু বাড়ে নি, জাতি বিভক্ত হয়েছে এবং স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হয়েছে। তবে এদের প্রায় ৩০ বছরের শাসনামলে, অবকাঠামোর উন্নয়ন হয়েছে, বিশেষ করে এরশাদ আমলে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার ঘটনাটি ঘটে নি।

পরিবর্তন এনেছেন শেখ হাসিনা। তার টানা প্রায় এক যুগের শাসনে জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়নি বটে তবে স্থিতিশীলতা ফিরেছে এবং সর্বক্ষেত্রে উন্নয়ন হয়েছে। বিশ্ব সেটি স্বীকার করেছে এবং ক্ষুদ্র রাষ্ট্র সত্ত্বেও বাংলাদেশ এখন গণনীয়।

ইতিহাসের ছাত্র হিসাবে আমি জেনেছি, সোনার বাংলা একটি মিথ। এ দেশের সাধারণ মানুষ বছরে দু’প্রস্থ পোশাক, দুই বেলা খাওয়া জোটাতে পারে নি। আজ অতি সাধারণের পায়েও একটি স্যান্ডেল, দুই বেলা মোটা ভাত তিনি খেতে পারেন, থাকারও তার জায়গা হয়েছে।

‘রুটি, কাপড়, মকান’ স্লোগান অনেকে দিয়েছেন বটে কিন্তু বাস্তবায়িত করা সম্ভব হয় নি, শেখ হাসিনা তা করেছেন। অতি সম্প্রতি ৫০ হাজার ঘর দিয়েছেন গরিবদের, আর কোনো দেশে কোনো সরকার এমনটি করতে পেরেছে কিনা সন্দেহ, আমাদের দেশে তো নয়ই।


এখন প্রবৃদ্ধির হার ঊর্ধ্বমুখী, অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন, জমাকৃত বৈদেশিক মুদ্রা, দুই বেলা খাবার সবকিছুই বাঙালির বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার চিত্র। ১৯৭১ সালে আবাদি জমির পরিমাণ যা ছিল তা থেকে কমপক্ষে ২০ ভাগ জমি আর আবাদি নেই। ওই সময় মানুষ ছিল ৭ কোটি আর এখন প্রায় ১৭ কোটি। কিন্তু ফসলের অধিকাংশ দেশে উৎপাদিত। এগিয়ে যাওয়ার এর চেয়ে বড় উদাহরণ কী হতে পারে?

বাংলাদেশ এরকম হবে এটি ভাবি নি। আজ ৫০ বছরে এ ব্যাপক উন্নয়ন দেখে যেতে পারছি। এটি ইতিহাস আর আমাদের জেনারেশন এ ইতিহাসের সঙ্গে ছিলাম, আছি। বাংলাদেশ এখন যে পর্যায়ে সেখান থেকে অবনতি খুব একটা হবে না। উন্নতিই হবে। আর এর জন্য মানুষ শেখ হাসিনাকে স্মরণ করবেন। পিতা রাষ্ট্র দিয়েছিলেন, কন্যা সে রাষ্ট্রকে বাসযোগ্য করে গেলেন।❐

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension