মুবিন খান
গেল ২২ মার্চ বেইলি রোডের মহিলা সমিতিতে মঞ্চায়িত হয়ে গেল থিয়েটারের ‘দ্রৌপদী পরম্পরা।’ নাটকটি রচনা ও নির্দেশনা করেছেন প্রবীর দত্ত। নাটকের নামটিই জানিয়ে দিচ্ছে থিয়েটারের ৪০তম প্রযোজনার এ গল্পটি আবর্তিত হয়েছে মহাভারতের ছায়া অবলম্বন করে। ওদিন ছিল দ্রৌপদী পরম্পরার ১৮তম মঞ্চায়ন।
নাটকে যাওয়ার আগে মহাভারত দ্রৌপদীকে নিয়ে কি বলছে সেটা একটু দেখা যাক। দ্রৌপদী মহাভারতের কেন্দ্রীয় ও সম্ভবত সবচেয়ে আলোচিত নারী চরিত্র। পাঞ্চালরাজ দ্রুপদের কন্যা। পঞ্চ পাণ্ডবের স্ত্রী। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে স্মরণীয় হিসেবে যে পাঁচজন নারীর কথা বলা হয়েছে, তাঁরা হলেন- কুন্তি, দ্রৌপদী, তারা, মন্দোদরী ও অহল্যা। রামায়ণ থেকে নেয়া হয়েছে অহল্যা, তারা ও মন্দোদরীকে। আর মহাভারত থেকে নেয়া হয়েছে দ্রৌপদী ও কুন্তীকে। এই পঞ্চনারীর মধ্যে দ্রৌপদীকে অন্যতম বলে গণ্য করা হয়।
কালীপ্রসন্ন সিংহ অনূদিত মহাভারত আমাদের জানাচ্ছে, দ্রৌপদীর পিতা পাঞ্চালরাজ দ্রুপদ চাইছিলেন তৃতীয় পাণ্ডব ধনুর্বীর অর্জুনের সঙ্গে দ্রৌপদীর বিয়ে দিতে। কিন্তু সেটি প্রকাশ না করে পাঞ্চালরাজ দ্রুপদ একটি ধনু তৈরী করালেন যেটাতে অসাধারণ ধনুর্বীর না হলে কেউ গুণ পরাতে পারবেন না। তারপর মাটি থেকে অনেক উঁচুতে এমনভাবে একটি লক্ষ্য স্থাপন করলেন যে নিশানা বিদ্ধ করতে একটি ক্ষুদ্র ছিদ্রের মধ্য দিয়ে তীর ছুঁড়ে ঝুলন্ত মাছের চোখ ভেদ করতে হবে। তারপর দ্রৌপদীর স্বয়ম্বর সভার আয়োজন করলেন। এবং ঘোষণা করলেন, যিনি ওই ধনুর্বাণ ব্যবহার করে লক্ষ্যভেদ করতে পারবেন তাঁকেই দ্রৌপদী বরমাল্য পরাবেন। পাঞ্চালরাজ দ্রুপদের মনে আশা ছিল অর্জুন ছাড়া এই কাজটি আর কেউই করতে পারবেন না।
স্বয়ম্বর সভায় সমবেত রাজারা একে একে ধনুতে গুণ পরাতে গিয়ে সকলেই ব্যর্থ হলেন। তবে আশাতীতভাবে কর্ণ সহজেই ধনুতে গুণ পরিয়ে ফেললেন। কিন্তু দ্রৌপদী স্পস্ট উচ্চারণে জানিয়ে দিলেন তিনি সূতজাতীয় কাউকে বিয়ে করবেন না। অপমানিত ও রাগান্বিত হয়ে কর্ণ স্বয়ম্বর সভা থেকে চলে গেলেন। এরপর আত্মগোপনে থাকা ব্রাহ্মণবেশী অর্জুন এসে তীর ছুঁড়ে সেই ঝুলন্ত মাছের চোখ ভেদ করে ফেললেন। আর দ্রৌপদী আনন্দচিত্তে সেই ব্রাহ্মণবেশী অর্জুনের গলায় বরমাল্য পরিয়ে দিলেন।
ভীম ও অর্জুন দ্রৌপদীকে নিয়ে বাড়ি ফিরে মাতা কুন্তিকে বললেন, তাঁরা ভিক্ষা এনেছেন। কুন্তি ছিলেন ঘরের ভেতর। কি আনা হয়েছে না দেখেই বললেন, যা আনা হয়েছে সেটা পাঁচভাইকে মিলে ভোগ করতে। অর্জুন মায়ের আদেশ লঙ্ঘণ করতে রাজি হলেন না। তখন পাণ্ডবরা স্থির করলেন দ্রৌপদী সবারই স্ত্রী হবেন। এভাবেই দ্রৌপদী একই সঙ্গে পাঁচ পাণ্ডব ভাইয়ের স্ত্রী হয়ে গেলেন।
দ্রৌপদীর কথা এলেই সবার আগে দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের কথাটি সামনে চলে আসে। যিনি মহাভারত কিংবা দ্রৌপদী সম্পর্কে পুরোপুরিই অজ্ঞাত তিনিও দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত। ব্যাপারটা ঘটেছিল দ্যূতক্রীড়া ও ধৃতরাষ্ট্রের সভায়। যুধিষ্ঠির দুর্যোধনের সঙ্গে পাশা খেলায় হেরে গেলে দুঃশাসনকে দিয়ে দুর্যোধন দ্রৌপদীর বস্ত্র খুলে নেওয়ার চেষ্টা করেন।। এটি মহাভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা যার ফলে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ পরিণতি লাভ করেছিল। যুধিষ্ঠির পাশা খেলায় তাঁর সর্বস্ব বাজি ধরেছিলেন। এই সর্বস্বর ভেতর যুধিষ্ঠির নিজে, তাঁর চার ভাই এবং দ্রৌপদীও ছিলেন। পাশা খেলার সে বাজিতে পরাজিত যুধিষ্ঠির নিজেকে উদ্ধার করতে দ্রৌপদীকে হেরেছিলেন।
স্বেচ্ছায় পঞ্চপাণ্ডবকে বিয়ে না করলেও উদ্ভূত পরিস্থিতির ফলে যখন দ্রৌপদীকে পঞ্চপাণ্ডবদের বিয়েটা করতেই হলো তখন দ্রৌপদী প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন তাঁর পঞ্চস্বামীর সকলকেই সুখী ও তৃপ্ত করতে। সচেতনভাবেই চেষ্টা করে গেছেন কারও প্রতি অবিচার না করতে। পঞ্চস্বামীকে তুষ্ট করবার এক অনন্য গুরুভার গ্রহণ করে ভারতবর্ষের পুরুষতান্ত্রিক সমাজের এক উদাহরণ হয়ে উঠেছিলেন দ্রৌপদী। কিন্তু কর্ণকে উপেক্ষা যিনি করতে পারেন, স্বয়ম্বর সভায় যিনি নিজে অর্জুনকে পছন্দ করে বরমাল্য পরাতে পারেন। যাকে তেজস্বিনী নারীর উদাহরণ বলা হয়, তিনি কেন আরোপিতভাবে চাপিয়ে দেওয়া পঞ্চপান্ডবের স্ত্রী হতে অস্বীকৃতি জানালেন না! নাট্যকার প্রবীর দত্ত সম্ভবত এই ভাবনা থেকেই ‘দ্রৌপদী পরম্পরা’ নিয়ে মঞ্চে হাজির হয়েছেন।
যখন দ্রৌপদী ঘোষণা করেন, ‘আমিই আমার প্রথম আমিই আমার শেষ; আমিই পতিতা এবং আমিই পবিত্রা; আমিই স্ত্রী অথচ আমিই কুমারী; আমিই মাতা এবং আমিই কন্যা; আমি অসম্মানিতা এবং আমিই শ্রেষ্ঠা’-আমরা মঞ্চের নাটকীয়তায় জানতে পারি, নাট্যকার আমাদের জানান, সেই পৌরাণিক যুগে নারীর মতামতের কোনও মূল্য ছিল না। ফলে দ্রৌপদী যদি তখন পাঁচজন পুরুষকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতিও জানাতেন কেউ সেই মতামতকে মুল্যায়ন করত না। এই কারণে নাট্যকার নাটকীয়ভাবে নাটকের ভেতরেই আরেক নাটক নির্মাণ করলেন। মহাভারতে দ্রৌপদী যে কথাগুলো বলতে পারেন নি, যে প্রতিবাদগুলো করতে পারেন নি, দ্রৌপদী পরম্পরার নাট্যকার দ্রৌপদীকে দিয়ে দ্রৌপদীর সেই কথাগুলো, সেই প্রতিবাদগুলো করিয়ে নিলেন। আর সেটি করতে গিয়ে তিনি দ্রৌপদীকে পুরাণ থেকে টেনে তুলে এনে এই আজকের আমাদের সামনে হাজির করে ফেললেন। আমরা দর্শক সারিতে বসে দেখলাম মহাভারতের তেজস্বিনী দ্রৌপদী পৌরাণিক কাহিনী থেকে বেরিয়ে এসে কেবল রক্তমাংসের একজন নারী হয়ে উঠলেন। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নারীর প্রতীক হয়ে উঠলেন। সে সমাজের নারীদের প্রতিনিধি হয়ে উঠলেন।
কি রাজনীতিতে, কি সমাজনীতিতে আর কি ধর্ম ব্যবসায়ীদের কাছে- সেই পুরাকালেও নারী যেমন ছিলেন মর্যাদাহীন ভোগের সামগ্রী, ছিলেন দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক; এই আধুনিক যুগে এসেও কি বদলেছে রাজনীতি, সমাজনীতি আর ধর্ম ব্যবসায়ীদের অথবা পুরুষের কিংবা রাষ্ট্রের চোখ? আমরা দেখতে পেলাম খুব সহজ অথবা খুব জটিল এই প্রশ্নটি ‘দ্রৌপদী পরম্পরা’ বেশ সফল আর সার্থকভাবেই দর্শকের মনে উত্থাপন করতে পেরেছে। আমরা দেখি, ‘স্বর্গ থেকে বিচ্যুত হয়ে সভ্যতার পর সভ্যতা পাড়ি দিয়ে’ এই আধুনিক যুগে আসবার পরও লোলুপ পুরুষ আর সমাজের শীর্ষজনেরা, নীতি নির্ধারকেরা শরীরবৃত্তীয় সুযোগ খোঁজে, দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের আয়োজন চালায়। আমাদের উপলব্ধিতে আসে, দ্রৌপদীর কষ্টগুলো, দ্রৌপদীর অভিযোগগুলো, দ্রৌপদীর জিজ্ঞাসাগুলো যে আসলে সকল যুগের সকল নারীর জিজ্ঞাসা, সেটি নাটক রচয়িতা ও নির্দেশক মুন্সিয়ানার সঙ্গেই উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। নাট্যকার-নির্দেশক প্রবীর দত্তকে অভিনন্দন।
কিন্তু তবু কিছু কথা থেকে যায়। নাটকের যবনিকাতে এসে আমরা দেখি, দ্রৌপদীকে পুরাণ থেকে আধুনিক যুগে নিয়ে এসেও, দ্রৌপদীকে সে যুগ তো বটেই, সফলভাবে এ যুগেরও নারীদের প্রতিনিধি হিসেবে হাজির করেও, এবং দর্শক সেটা মেনে নেবার পরেও দ্রৌপদী নিজেকে রক্ষা করতে পারেন না। নাট্যকার দ্রৌপদীকে রক্ষা করতে মহাভারত রচয়িতা কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন ব্যাসদেবের মতোই অলৌকিকতার আশ্রয় নিলেন। দ্রৌপদীকে রক্ষা করতে তিনি মহাভারত থেকে অর্জুনকেই রক্ষাকর্তা হিসেবে নিয়ে এলেন। যদিও দ্রৌপদীকে পঞ্চ স্বামীর স্ত্রী বানাবার সময় কিংবা দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের সময় অর্জুন দ্রৌপদীকে রক্ষা করতে ভূমিকা রাখেন নি।
তবে অর্জুনের আগমনে সুবিধে হলো এই যে, অর্জুনের প্রতি যে ক্ষোভ, যে অভিযোগ, যে অভিমান দ্রৌপদীর ভেতরে জমা হয়েছিল সেগুলো দ্রৌপদী সরাসরি অর্জুনের কাছেই উত্থাপন করতে পারলেন। মনের রাগানুরাগও প্রকাশ করতে পারলেন। অর্জুনকে অভিযুক্ত করতে পারলেন। কিন্তু আমরা দেখতে পেলাম অর্জুনকে ডেকে এনে আসলে দ্রৌপদীর অভিযোগগুলো খণ্ডনের ব্যবস্থাই করে দেওয়া হলো। আমরা দেখলাম, দ্রৌপদীর সকল অভিযোগের বিপরীতে অর্জুন আত্মপক্ষ সমর্থন করলেন। আর যে দ্রৌপদী ভরা রাজসভায় কুরুবৃদ্ধদের কাছে কৈফিয়ত দাবি করেছেন, যিনি সুস্পষ্টভাষী হিসেবে পরিচিতি অর্জন করেছেন, দুঃশাসনের রক্ত পান করতে চেয়েছেন, কীচককে হত্যা করা দরকার বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ভীমের সহযোগিতা চেয়েছেন, পঞ্চস্বামীর একাধিক স্ত্রী থাকবার পরও আপন গুরুত্ব ও অধিকার সম্পর্কে সচেতন থেকেছেন, সেই দ্রৌপদীই অর্জুনের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে অর্জুনের আত্মপক্ষ সমর্থনের যুক্তিগুলোকে মেনে নিলেন।
‘দ্রৌপদী পরম্পরা’ নাটকটির ‘হ্যাপি এন্ডিং’ সংঘটিত হলেও ওই প্রশ্নগুলো আমাদের ভাবনাতে রয়েই যায়। তার সঙ্গে যুক্ত হয় আরেকটি কৌতূহল। কৌতূহলটির নাম ‘শ্রীকৃষ্ণ।’ দ্রৌপদীর আরেক নাম কৃষ্ণা। তাঁর গাঢ় গায়ের বর্ণের জন্যেই এ নাম। মতান্তরে, তাঁর গায়ে নীলপদ্মের মত আভা থাকায় তাঁকে কৃষ্ণা বলা হত। এছাড়া তিনি যাজ্ঞসেনী নামেও পরিচিত। যজ্ঞবেদী থেকে তাঁর জন্ম বলেই। অনেকে মনে করেন যজ্ঞবেদী তাঁর জন্মের উৎস বলেই তিনি কৃষ্ণবর্ণা। এবং কৃষ্ণা শ্রীকৃষ্ণের সখী। পঞ্চপাণ্ডবের মত বীরদের স্ত্রী হবার পরও দ্রৌপদীকে পুরো জীবনে বহু অপমান সহ্য করতে হয়েছে। ধর্মপরায়ণ পাঁচ স্বামীর কাছে কোনও সহযোগিতা না পেয়ে দ্রৌপদী শ্রীকৃষ্ণের শরণাপন্ন হয়েছেন। আর শ্রীকৃষ্ণও যোগবলে সুদূরে থাকা সত্ত্বেও দ্রৌপদীর ডাকে সাড়া দিয়েছেন। দ্রৌপদীর হরণ করতে থাকা বস্ত্র হয়েছেন। দ্রৌপদীকে চরম লজ্জার হাত থেকে বাঁচিয়েছেন। নিজের উন্মুক্ত কেশগুচ্ছ কৃষ্ণের সামনে তুলে ধরে দ্রৌপদী পঞ্চ স্বামীকে নয়, কৃষ্ণকে অভিযোগে বলেছেন, কৃষ্ণ যেন মনে রাখেন দুঃশাসন এই কেশগুচ্ছ স্পর্শ করেছে!
পণদ্যুতে দ্বিতীয়বার পরাজিত হয়ে পাণ্ডবরা যখন বনবাস করছেন, তখন কৃষ্ণ ওঁদের দেখতে এসেছিলেন। দ্রৌপদী তখন সভাগৃহে তাঁর চরম লাঞ্ছনার কথা শুনিয়ে কৃষ্ণকে অনেক অনুযোগ করে বলেছেন যে, চারটি কারণে কৃষ্ণ যেন ওঁকে নিত্য রক্ষা করেন। প্রথমত, কৃষ্ণের সঙ্গে ওঁর সম্বন্ধ (তিনি কৃষ্ণের ভ্রাতৃবধূ – তিন পাণ্ডবভ্রাতা কৃষ্ণের পিসীমাতার পুত্র); দ্বিতীয়ত, ওঁর পবিত্রতা (উনি যজ্ঞবেদী সম্ভূতা); তৃতীয়ত, ওঁদের সখ্যতা (তিনি কৃষ্ণের অনুগতা সখী); এবং চতুর্থত কৃষ্ণের শক্তমত্তা। পঞ্চপাণ্ডব মহাবীর হওয়ার পরেও রক্ষক হিসেবে কৃষ্ণকে দ্রৌপদীর দরকার হয়েছে। আর কৃষ্ণও সখীর ডাকে সাড়া দিয়েছেন। কৃষ্ণ তাঁর সখীর প্রতি বন্ধুত্বের দায়বদ্ধতা নিয়ে সদা সজাগ ছিলেন। অথচ ‘দ্রৌপদী পরম্পরা’ নাটকে কৃষ্ণ প্রবেশাধিকার পেলেন না।
তারপরও ‘দ্রৌপদী পরম্পরা’ সফলতা অর্জন করতে পেরেছে। নাটকটি উপভোগ্য হয়ে উঠতে পেরেছে। আর অভিনয় শিল্পীরা তাঁদের অভিনয় শৈলীর সঙ্গে পেশাদারিত্ব ও পরিশ্রম দিয়ে নাটককে উপভোগ্য করে তুলতে পেরেছেন। তাঁদেরকে নিরলস সহযোগিতা করে গেছেন আলো প্রক্ষেপণ আর শব্দ নিয়ন্ত্রকেরা। তাঁদের সঙ্গে আবহ সঙ্গীতের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বরতরা তাল মিলিয়েছেন সমান তালে। এবং ড. আইরিন পারভিন লোপার পোশাক পরিকল্পনা মঞ্চে পৌরাণিক চরিত্রগুলোকে জীবন্ত করে তুলতে পেরেছেন।
দ্রৌপদীর তিনটি সময় উপস্থাপনে, ইউশা আনতারা দ্রৌপদীর কাল – আকেফা আলম ঐন্দ্রিলা দ্রৌপদীর কুমারী কাল – রিজভীনা মৌসুমী দ্রৌপদীর পরম্পরা কাল চমৎকারিত্বে ফুটিয়ে তুলেছেন। তাঁরা প্রত্যেকেই স্ব স্ব ভুমিকায় অসাধারণ অভিনয়ে প্রজ্বলিত হয়ে উঠেছেন। শাহরিয়ার ইসলাম ও তৌহিদুল ইসলাম বাদল পণ্ডিত ও ওস্তাদ চরিত্রে যথেষ্ট আমোদ দিয়েছেন। ধৃষ্টদুন্ম চরিত্রে রূপদানকারী তুহিন চৌধুরী অল্প সময় মঞ্চে অবস্থান করলেও তাঁর গাম্ভীর্যতা নজর কেড়েছিল।
সবশেষে প্রবীর দত্ত। ইনি একই সঙ্গে ‘দ্রৌপদী পরম্পরা’ নাটকের রচয়িতা, নির্দেশক এবং নাটকের একাধিক চরিত্র রূপদানকারী। এমন বহুমুখী প্রতিভা যিনি, তাঁর সম্পর্কে আর কিছু বলবার থাকে না আসলে। ভদ্রলোক রচনা থেকে মঞ্চ পর্যন্ত প্রচুর পরিশ্রম করেছেন। সবদিকেই তাঁর খুব খেয়াল। তবে সামান্য খুঁত তো থাকতেই পারে। সেটি সংলাপ উচ্চারণে। সবখানে নয় অবশ্য। নাটকের শেষ প্রান্তে এসে অর্জুন যখন খুব দ্রুততায় দ্রৌপদীকে নিজেকে নির্দোষ বলে বোঝাচ্ছিল, তখন। অল্প কয়েক জায়গায় সংলাপ জড়িয়ে যাচ্ছিল। কয়েক শব্দ বোধগম্য হয় নি। তাতে অবশ্য তেমন সমস্যাও হয় নি। ও পর্যন্ত আসতে আসতে গল্পটা আমাদের জানা-বোঝা হয়ে গিয়েছিল। তাছাড়া দেখা গেল, দত্ত বাবুর দারুণ অভিনয় গুণে দর্শকেরাও সেটা ধর্তব্য মনে করেন নি।
সবমিলিয়ে প্রবীর দত্ত আরেকটা অভিনন্দন পেতেই পারেন। আর ধন্যবাদটা থিয়েটার আর থিয়েটারের সকলের জন্যে।