নিউ ইয়র্ক টাইমস্ সম্পাদকীয়: ক্যাপিটলে হামলার জন্যে ট্রাম্প দায়ী
প্রেসিডেন্ট তার অনুসারীদেরকে সহিংসতায় প্ররোচিত করেছিলেন। অবশ্যই এর পরিণতি ভুগতে হবে।
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস এডিটোরিয়াল বোর্ড
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কংগ্রেসে তার রিপাবলিকান সমর্থকরা ক্যাপিটালে হামলায় উস্কানি দিয়েছেন। বুধবারের ঘটনাটি ছিল সেই সরকারের বিরুদ্ধে, যে সরকারকে তারা (রিপাবলিকানরা) নেতৃত্ব দেয় এবং যে দেশকে তারা ভালবাসে বলে দাবি করে তাদের বিরুদ্ধে। এ হামলাকে মেনে নেওয়া যায় না।
মি. ট্রাম্পের রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য হাজার হাজার মানুষকে মার্কিন ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালাতে উৎসাহিত করেছে। যার ফলে তাদের অনেকে প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেট ফ্লোরে ঢুকে পড়ে। সেখানে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা ইলেকটোরাল ভোট গণনা ও বাইডেনের প্রেসিডেন্ট হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে মিলিত হয়েছিলেন।
মার্কিন সরকারের আসনে হামলা চালানোর সময় এদের অনেকের হাতে কনফেডারেট ফ্ল্যাগ ছিল; তারা কংগ্রেশনাল বিতর্ক স্থগিত করতে আইনপ্রণেতাদের বাধ্য করে। দরজা-জানালা ভাঙচুর করে, নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়; সে সময় তারা চিৎকার করে ট্রাম্পের প্রতি তাদের সমর্থন জানায় এবং ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আইনসিদ্ধ ফলাফলকে অস্বীকার করে। এ ঘটনায় একজন নারী মারা গেছেন। আর জাতীয় নেতৃবৃন্দ তামাশার মতো নিরাপদ আশ্রয়ের জন্যে ছুটছিলেন।
ক্যাপিটল ও ওয়াশিংটনের অনেক জায়গায় বিস্ফোরক পাওয়া গেছে। ট্রাম্প সমর্থিত বিক্ষোভকারীরা পুরো দেশের স্টেটস্হাউজগুলো বন্ধ করে দেয়।
ট্রাম্প এসব হামলা উসকে দিয়েছেন। নভেম্বরে ভোটারদের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে তিনি গেল কয়েক মাস ধরে বিক্ষোভ করেছেন। তিনি বুধবার তার সমর্থকদের ওয়াশিংটনে সমবেত হতে ডেকে আনেন। তাদেরকে ক্যাপিটালে যেতে উৎসাহিত করেছেন । তাদের বলেছেন নির্বাচনে চুরি হচ্ছে। তিনি তাদের লড়াই করতে বলেছেন। তিনি তাদের সঙ্গে থাকবেন বলেছেন এবং ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালানোর দীর্ঘ সময় পর্যন্ত তাদের থামাতে কিছু বলেন নি। তাদের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানান নি; সংবিধান রক্ষায়—যা তিনি রক্ষার শপথ করেছেন—তিনি কিছু বলেন নি। অবশেষে যখন তিনি বললেন, তখন তিনি প্রতিবাদকারীদের ক্ষোভের সঙ্গে ঐক্য প্রকাশ করলেন এবং সেই সঙ্গে আবারও বললেন, নির্বাচনে চুরি করা হয়েছে। অবশ্য তিনি তাদের বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য বলেছেন। এই হলো তার আচরণগত দায়িত্ববোধ। তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালনে অনিচ্ছুক। তার এমন আচরণের ফলে কি পরিণতি হতে পারে সেটি তিনি ভাবতেও রাজি নন।
এই আচরণের জন্যে প্রেসিডেন্টকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত—ইমপিচমেন্ট কিংবা ফৌজদারি বিচার কার্যক্রমের মাধ্যমে। একই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত তার সমর্থকদের বিরুদ্ধেও যারা এমন সহিংসতা চালিয়েছে। এ হামলার ব্যাপারে তো আগেই প্রকাশ্যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।সময়মতো ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থতার দায়ে ক্যাপিটল পুলিশের ভূমিকার বিষয়েও তদন্ত হওয়া উচিত।
২০২০ সালের নির্বাচনের ফলাফলের ওপর এটা শুধু আঘাত নয়; বস্তুত এটি একটি উদাহরণ। ভবিষ্যত নির্বাচনের ফলাফলে অনুরূপ বিরোধিতার জন্য অনুমতি পত্র। এই প্রবণতাকে সুস্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করা উচিত, যা কিনা শুদ্ধ দায়িত্ববোধকে ম্লান করে দিয়েছে।
একইভাবে রিপাবলিকান পার্টির নেতারাও ক্যাপিটালে হামলায় কিছুটা দায় বহন করেন। কেননা রিপাবলিকান পার্টির অনেকে নির্বাচন সম্পর্কিত কঠিন মিথ্যাচার বিক্রিতে অংশ নিয়েছেন। তারা গণতন্ত্রের প্রতি জনগণের আস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেয়েছেন, কোনও প্রমাণ ছাড়াই মি. বাইডেনের বিজয়ের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের সেসব বক্তব্যে অনেকেই এই সহিংসতার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছে।
আধুনিক রিপাবলিকান পার্টি তার ভোট সাপ্রেশনের ধারাবাহিক প্রয়াস চালিয়ে যে নির্বাচনটি তারা হেরেছে সেটির বৈধতা স্বীকারে অস্বীকৃতি জানিয়েও রাজনীতি করতে চায়; একই সঙ্গে তারা ভোটাধিকার বঞ্চনার ভিত্তিতে রাজনৈতিক ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়। বুধবারের ঘটনা সংঘাতের মাধ্যমে সেই লক্ষ্য পূরণ করার ইচ্ছার স্মারক।
এটা স্পষ্ট যে কিছু রিপাবলিকান নেতা ট্রাম্পকে সক্রিয় করার পরিণতি সম্পর্কে ভয় পেতে শুরু করেছেন। হামলা শুরুর আগে সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা সিনেটর মিচ ম্যাককনেল নির্বাচনের ফলাফলকে উল্টে দেওয়ার জন্য তার সহকর্মী রিপাবলিকানদের প্রচেষ্টার সমালোচনা করেছেন। কিন্তু তার বক্তব্য বাগাড়ম্বর ছাড়া অন্যকিছু ছিল না। যেমন কর্ম তেমন ফল।
অন্য রাজনীতিবিদদের বক্তব্য সে তুলনায় দৃঢ় ছিল। সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মিট রমনি টুইট করেন, ‘ইউএস ক্যাপিটালে আজ যা ঘটেছে তা ছিল একটা বিদ্রোহ; যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের উসকানিতে এটি হয়েছে।
সংবিধান অনুযায়ী কংগ্রেস পরবর্তী ৬ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল অনুমোদনের জন্য গণনা এবং ঘোষণা করবে। তখনই একদল উচ্ছৃঙ্খল লোক এটিকে থামিয়ে দিল।
৬ জানুয়ারি ইতিহাসে একটি কালো দিন হয়ে থাকবে। প্রশ্ন হলো, মি. ট্রাম্পের সময় ফুরিয়ে গেলেও, একটা ঘোর কালো ও বিভাজিত সময়ের দিকে আমেরিকার পতন হতে যাচ্ছে? এ বিপদটি বাস্তবতা, তবে এর উত্তরটি পূর্বনির্ধারিত নয়। ক্ষমতা রিপাবলিকান রাজনীতিবিদদের হাতে। এবং দায়িত্ব।
আমেরিকান গণতন্ত্রের ওপর তাদের বাগাড়ম্বরপূর্ণ আক্রমণের অবসান ঘটিয়ে এবং দেশটির সেবা করার যে প্রতিশ্রুতি তারা দিয়েছিলেন, সে শপথ তাদের রক্ষা করতে হবে।❐
অনুবাদ: জাহান আরা দোলন