
প্রিয় শিতাংশু গুহ, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বলতে চাইলে সংযত হয়ে বলুন
মুবিন খান
২৬ ডিসেম্বর ২০২০ রূপসী বাংলায় ‘ভারত বিদ্বেষই বাংলাদেশে দেশপ্রেম?’ শিরোনামে একটি লেখা প্রকাশিত হয়েছে। আমি জানি না ঢালাওভাবে কোনও ব্যক্তি, সম্প্রদায় কিংবা জাতিকে গালাগাল করতে পারাকে যোগ্যতা হিসেবে আখ্যায়িত করা যায় কিনা। আলোচিত রচনাটি পাঠ করে মনে হয়েছে এর লেখক শ্রী শিতাংশু গুহ মনে হয় তেমনটিই ভাবেন। ভদ্রলোক পুরো লেখাটা জুড়ে একতরফাভাবে মনগড়া ও কাল্পনিক তথ্য উপস্থাপন করে আপামর বাংলাদেশ ও এর জনমানুষকে আক্ষরিক গালাগাল করে গেছেন। বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক ভালো কেন – এই তার রাগ।
আচ্ছা, বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক আসলেই এতটা ভালো নাকি! বাংলাদেশের আঠারো কোটি লোকেই কি ভারত বিদ্বেষী? আমি জানি না। বাংলাদেশের আঠারো কোটি লোকে— সে যে ভারত বিদ্বেষী- এটা প্রমাণ করতে চীনকে প্রেম-ভালোবাসা করে বেড়ায়? আমি এটাও জানি না!
ইস্! আমি কত কম জানি!
পড়ুন: ভারত বিদ্বেষই বাংলাদেশে দেশপ্রেম?
তো লেখাটির রচয়িতা শিতাংশু গুহ দাবী করে বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ নাকি চীনকে পছন্দ করে এবং দেশপ্রেম বলতে ভারতের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করাকেই বোঝেন। তারমানে বাংলাদেশের যে কোনও নাগরিকই যখন বলেন তিনি তার বাংলাদেশকে ভালোবাসেন, দেশপ্রেমের সংজ্ঞা পাল্টে দেওয়া শ্রী শিতাংশু গুহ সেটাকে শুনতে পান, তিনি ভারতের প্রতি বিদ্বেষ জানাচ্ছেন। কি সর্বনাশের কথা ভাবুন তো! লেখাটা পড়ে মনে হয়েছে শিতাংশু গুহ চাইছেন বাংলাদেশের মানুষদের প্রতি ভারতীয়রা বিদ্বেষ পোষণ করুন। চীনের সঙ্গে ভারতের একটা বৈরিতা আছে। সেকারণেই শিতাংশু গুহ চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রেম দেখাতে চেয়েছেন।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে ফাটল ধরুক- এটা কেন চাইছেন শ্রী শিতাংশু? কি উদ্দেশ্য তার?
তো এরপর তিনি অতীতে চীন বাংলাদেশের কি কি বিরোধিতা করেছে তার ফিরিস্তি দিয়েছেন। বলেছেন, চীন বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে বিরোধিতা করেছে। জানিয়েছেন, বাংলাদেশের জাতিসংঘ সদস্য প্রাপ্তি ইস্যুতে চীন ভেটো দিয়েছে। প্রশ্নবোধক চিহ্ন খাড়া করে বলেছেন, ‘চীন বাংলাদেশের বন্ধু হতেই পারে?’ বলে হয়ত বোঝাতে চেয়েছেন চীনের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক স্থাপন করা বাংলাদেশের পক্ষে উচিত নয়।
কিন্তু শিতাংশু গুহ একটিবারও বলেন নি, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি দখলদার সেনারা যখন বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করছিল, আমেরিকা তখন এই যুদ্ধ বন্ধ করবার চেষ্টা দূরে থাক, অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে পাকিস্তানকে সহায়তা করেছিল। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশে গণহত্যা বন্ধে উদ্যোগ নিতে আন্তর্জাতিক মহলকে আহ্বান জানিয়েছিলেন। অথচ কিসিঞ্জারের পরামর্শে নিক্সন সেটি বাতিল করে দেন। এই কথাগুলো শিতাংশু গুহ কেন বলেন নি? তিনি নিজে আমেরিকা থাকেন বলে? ভদ্রলোক ঠিকই বলেছেন, পৃথিবীতে ‘প্রভুভক্ত’ কুকুরের অনেক গল্প আছে।’
একটা প্রশ্ন জেগেছে মনে, শিতাংশু গুহ কোন্ দেশের নাগরিক ছিলেন? বাংলাদেশের না ভারতের? এখন যে এ দেশ দুটোর কোনটিরই নাগরিক নন সেটি বিলক্ষণ। এখন তিনি হয়ত ইউনাইটেড স্টেটস্ অব অ্যামেরিকার নাগরিক। কিন্তু আগে কোন্ দেশের নাগরিক ছিলেন? ধারণা করি বাংলাদেশেরই। কেননা বাংলাদেশের আঠারো কোটি মানুষকে শিতাংশু গুহ ভারত বিদ্বেষী ও সাম্প্রদায়িক আখ্যা দিলেও রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তিটিকে চটাতে চান নি। বলেছেন, ‘ভারত ও চীনের সাথে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবশ্য একটি সুন্দর কথা বলেছেন, সেটি হচ্ছে, ‘ভারত আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু, আর চীন বন্ধু।’
ফলে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে মূল ভূখণ্ডের বাইরে সবচেয়ে বড় নেভাল ফোর্স সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিল যে দেশটি, শিতাংশু গুহ হয়ত এখন সেই আমেরিকারই নাগরিক। তবে অতীতে তিনি বাংলাদেশ নামক দেশটির নাগরিকই ছিলেন বলে ধারণা করি। নাকি ছিলেন ভারতের নাগরিক? যে দেশটিরই ছিলেন- দুটোই অতীতকাল।
কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, শেখ হাসিনা যে দেশটির প্রধানমন্ত্রী, যে রাষ্ট্রটির মানুষ তাকে ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছেন, তার বক্তব্য যে রাষ্ট্রেরই বক্তব্য, সেটিকে খুব সযতনে অস্বীকার করেছেন শিতাংশু গুহ। বলেছেন ওটি নাকি ‘রাষ্ট্র পর্যায়ের কথা’, ‘আমজনতার’ কথা নয়! অদ্ভুত না!
তো এসবই না হয় মেনে নেওয়া গেল। কিন্তু শিতাংশু গুহ যেভাবে মুক্তিযুদ্ধর ইতিহাসকে বিকৃত করলেন, সেটি মেনে নেওয়া যায় না। ভদ্রলোক এক জায়গায় বলেছেন, ভারত নাকি ‘সাধের পাকিস্তান’ ভেঙেছে। মানেটা কি দাঁড়াল? মানেটা দাঁড়াল, পশ্চিম পাকিস্তানিরা পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের সঙ্গে যে পক্ষপাতমূলক অন্যায় আচরণ করছিল। বাঙালিরা অবিচার, নির্যাতন, নিপীড়ন আর শোষণের স্বীকার হচ্ছিল। বাঙালিদেরকে সবদিক থেকে কোণঠাসা করে ফেলে বঞ্চিত করা হচ্ছিল। সামাজিক থেকে মানবিক- সকল ক্ষেত্রে অবমূল্যায়ন করে বাঙালিদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক বানিয়ে রেখেছিল। এই বৈষম্যর অবসান ঘটাতে, পক্ষপাতমূলক অন্যায় আচরণ, অবিচার, নির্যাতন, নিপীড়ন, শোষণ থেকে মুক্তি পেতেই এ দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল একথা সত্য নয়। শিতাংশু গুহর মতে সত্য হলো, মুক্তিযুদ্ধটা হয়েছে ভারতের পাকিস্তান ভাঙার পরিকল্পনায়।
শিতাংশু গুহ ভারতকে মাথায় তুলে নাচতে গিয়ে লক্ষ্যই করেন নি কি অসম্ভব রূপকথা বলছেন। দাবী করলেন ভারত নাকি বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে!
স্বাধীনতা ছেলের হাতের মোয়া নয়, বাংলাদেশের আমজনতাও ছোট্ট শিশু নয় যে ভারত পাকিস্তানের হাত থেকে মোয়াটা ছিনিয়ে নিয়ে বাংলাদেশকে দিয়ে দিল। বাস্তবতা হলো ভারতীয় সেনারা এদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছিলেন।
নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে পাকিস্তানের সেনাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়েছে ১৩ দিন, ৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ থেকে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১। সেটি ছিল চূড়ান্ত লড়াই। তবে মুক্তিযুদ্ধে ভারত অভূতপূর্ব সহযোগিতা করেছে। মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা ভারতের মাটিতেই প্রশিক্ষণ নিয়েছে এবং ভারত তাদের অস্ত্র সরবরাহ করেছে। অন্যদিকে এক কোটি বাংলাদেশী শরণার্থীকে সহায়তা করেছে ভারত। বাংলাদেশের মানুষ ভারত আর ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কাছে কৃতজ্ঞ। তবে ইতিহাসভিত্তিক সত্যটা হলো, নয় মাস ধরে চলতে থাকা স্বাধীনতা যুদ্ধে আক্ষরিকভাবে সর্বস্ব হারিয়েছেন বাংলাদেশের মানুষেই।
ভারতের দাফতরিক হিসাবে শহীদ ভারতীয় সেনার সংখ্যা ২ হাজারের কম হলেও ২০১১ সালের এক প্রতিবেদনে সম্প্রচারমাধ্যম এনডিটি ৩ হাজার ৯০০ সেনা নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছিল। বাংলাদেশের কাছে তালিকাভুক্ত রয়েছে ভারতের ১ হাজার ৬০০ শহীদ সেনার নাম।
মানুষের প্রাণের কোনও মূল্য হয় না। সেটি অমুল্য। একজন মাত্র মানুষের মৃত্যু মাত্র নয়। একটি প্রাণ। একটি জীবন। সে জীবনকে উপেক্ষা করা যাবে না। আমরা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া প্রায় দু হাজার ভারতীয় সেনাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী আর তাদের দোসররা বাংলাদেশের ত্রিশ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছিল। দু লক্ষ নারীকে ধর্ষণ করেছিল। যদিও সংখ্যাটি আরও অনেক বেশী।
আর শিতাংশু গুহ যেচে ভারতের খয়ের খাঁ সেজে কি বিপুল স্পর্ধায় বাংলাদেশের ত্রিশ লক্ষ শহীদ আর দু লক্ষ নারী ধর্ষণকে শতভাগ উপেক্ষা করে দাবী তুলেছেন ‘ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে।’ এমন অর্বাচীন দাবী শিতাংশু গুহ করেন কি করে!
ইংরেজরা নিজেদের পছন্দর লোকেদের ‘রায়বাহাদুর’, ‘রায়সাহেব’ ইত্যাদি উপাধি প্রদান করত। এসব উপাধি বস্তুত তোষামোদকারীদের দেওয়া হতো। এই তোষামোদকারীরাই ‘খয়ের খাঁ’ হিসেবে পরিচিত। আমরা সে আমলের খয়ের খাঁ দেখি নি। তবে শিতাংশু গুহর বদৌলতে এ আমলে দেখে নিলাম। তিনি একটি ধন্যবাদ প্রাপ্য হয়েছেন।
শ্রী শিতাংশুকে গুহ বলতে চাই, চলচ্চিত্রর সস্তা সংলাপ আউরে আপনার ‘দেহ’ যুক্তরাষ্ট্রকে আর ‘মন’ ভারতকে দিন, আমাদের কোনও আপত্তি নেই। আমাদের আপত্তি থাকবার কথাও নয়। কিন্তু ভুলে যাবেন না একাত্তরের যুদ্ধটা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ। ভারতের নয়। বাংলাদেশ, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বলতে এলে সংযত হয়ে বলুন। ইতিহাস আর সত্য জেনে সত্য ইতিহাসটা বলুন।
‘বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, মানুষগুলো বাঙালি হয় নি, পাকিস্তানিই রয়ে গেছে।’- এমন স্পর্ধিত উচ্চারণ শিতাংশু গুহ কি করে করেন?
বাংলাদেশের মানুষকে ঢালাওভাবে ভারত বিদ্বেষী আর সাম্প্রদায়িক বলে গালাগাল করা শিতাংশু গুহ খুব কৌশলে এড়িয়ে গেছেন যে, ভারতের রাষ্ট্র ক্ষমতায় পরপর দু দুবার অধিষ্ঠিত হয়ে রয়েছে যে দলটি দেশটির হিন্দু সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী তথা রাজনৈতিক দল বিজেপি। বিজেপি তার সাম্প্রদায়িকতার সমর্থক নিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা গায়ের জোরে দখল করে নি। দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভোটে নির্বাচিত হয়েছে।
এই বিজেপি লাইম লাইটে এসেছিল চারশ’ বছর পুরনো বাবরী মসজিদ ভেঙে। ১৯৯২ সালে কয়েক লক্ষ উগ্রবাদী লোকজন সঙ্গে নিয়ে অনেকটা উৎসবের আমেজে চারশ’ বছর পুরনো ওই স্থাপত্যটি ভেঙেছিল শুধুমাত্র মুসলমানদের মসজিদ বলেই। বিজেপি এখন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত। গেল বছর লোকসভায় যে আইনটি পাশ করিয়েছে, তার পরিচিতিই ‘মুসলিম বিরোধী আইন ২০১৯।’
আর না বলি। কিন্তু আমরা ঢালাওভাবে ভারতের সকল সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষকে সাম্প্রদায়িক বলতে রাজি নই। যদি বলি তাহলে সেটি হবে নিজের ক্ষুদ্রতাকে মেনে নিয়ে ক্ষুদ্র স্বার্থকে চরিতার্থ করবার পাঁয়তারা। শিতাংশু গুহর মতো আমরা সেটি করব না। কেননা আমরা জানি, সাম্প্রদায়িক বিজেপির বিপক্ষেও বিপুল পরিমাণ ভোট পড়েছিল। তারা সাম্প্রদায়িক নন।
অপরদিকে যদি বাংলাদেশের কথা বলি, এদেশেও একটি সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল আছে। দলটির নাম জামায়াতে ইসলামী। এ দল নিজেরা সরকার গঠন করবে- একথা স্বপ্নেও ভাবতে পারে না। ভাবতে পারার মতো ‘বাতাবরণ’ বাংলাদেশের আবহাওয়াতে নেই। দলটি বাংলাদেশের ইতিহাসে জাতীয় নির্বাচনে সর্বোচ্চ ৩০টি আসন পেয়েছিল। সে সময় তারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা দলটির সমর্থক ও সহযোগী হয়েছিল বলে। বিএনপি সরকার যখন সরকার গঠন করে তখনও ৩০টি আসন পায় নি। আর ২০১৩ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট রুলের রায় ঘোষণা করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নামের এ সংগঠনটির নিবন্ধন অবৈধ এবং সংগঠনটিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষণা করে। তবু বলি, কোনও একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের লোকজনকে কখনও পুরো জাতি হিসেবে আখ্যায়িত করা যায় না। করলে সেটি হবে খুবই অনুচিত কাজ। শ্রী শিতাংশু গুহ এই অনুচিত কাজটিই করেছেন।
বাংলাদেশ জন্মলগ্ন থেকেই ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। ভারত স্বাধীন হয় ১৯৪৭ সালে। আর ১৯৭৬ সালের ৪২তম সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনাতে ধর্মনিরপেক্ষ শব্দটি যুক্ত করা হয়। যদিও ভারতের এখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী।
আর শিতাংশু গুহ বাংলাদেশের মানুষকে ঢালাওভাবে বলছেন সাম্প্রদায়িক! কিসের ভিত্তিতে? ভারত বিদ্বেষী দেখাতে চান বলে? কেন চান? ভদ্রলোকের স্বার্থটা কি?
সুদূর নিউ ইয়র্কে বসে বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে মরুর সংস্কৃতি বলে বলে দেওয়া শিতাংশু গুহ আরও জেনে গেছেন এদেশের মানুষ নাকি দন্ডিত যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর ওয়াজ শুনে ঘুমাতে যায়। কথাবার্তা, চলন-বলন, বইপুস্তক সর্বত্র একই অবস্থা। অথচ ২০১৩ সালে আদালত সাঈদীর ফাঁসির রায় দিয়েছিল। পরে সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগ চূড়ান্ত রায় রিভিউতে আমৃত্যু কারাদণ্ড বহাল রাখে।
নুন্যতম উপলব্ধি ও বোধ থাকলেও কেউ কোনও একটি দেশ সম্পর্কে এভাবে মন্তব্য করতে পারে না। পারে তখনই যখন সে মানসিক বিকৃতিতে আক্রান্ত থাকে। শিতাংশু গুহর মনের মাধুরী মেশানো রচনাটি পড়ে তার ব্যবহৃত সংলাপ থেকে ধার করে বলতে ইচ্ছে করছে, ‘স্বার্থ যখন জানলা দিয়ে ঢোকে, আদর্শ তখন দরজা দিয়ে পালিয়ে যায়।’
মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হলো নিজেকে দিয়ে অন্যকে যাচাই করা। অর্থাৎ নিজের মাপকাঠিতে অন্যকে ভেবে নেওয়া। ভাবে সে নিজে যেমন, অন্যেও বুঝি তারই মতো। সমগ্র বাংলাদেশের মানুষকে সাম্প্রদায়িক আখ্যা দেওয়ার ভাবনাটা শ্রদ্ধের শিতাংশু গুহর সহজাত প্রবৃত্তি ও নিজের সঙ্গে তুলনা বলেই মনে হয়।
শেষে শুধু বলতে চাই, মুক্তিযুদ্ধ কোনও ফাজলামো না। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ফাজলামো করবেন না। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বলতে চাইলে সংযত হয়ে বলুন। আবারও বলি, ইতিহাস আর সত্যটা ভালোভাবে জেনে নিয়ে সত্য ইতিহাসটা বলুন।❐