
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ভারতে নাটকীয়ভাবে কমতে শুরু করেছে কিছুদিন ধরে। বিশ্বের অন্য দেশগুলো যেখানে করোনা পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে ভারতে আক্রান্তের এমন নিম্নগতি কিছু মানুষ বিশ্বাস করছে, কিছু মানুষকে সন্দিহান করছে। ভারতের বর্তমান করোনা পরিস্থিতি নিয়ে বিবিসিতে একটি প্রতিবেদন লিখেছেন সাংবাদিক সৌতিক বিশ্বাস।
গত সেপ্টেম্বরের দিকেও ভারতে ১০ লাখের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত ছিল। অবিরাম করোনা পরীক্ষা এবং স্থানিক লকডাউনের কারণে সংক্রমণের হার কিছুটা কমতে শুরু করে। সেই থেকেই মূলত করোনা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যেতে থাকে। গত সপ্তাহের মাঝামাঝি ভারতে প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজার মানুষ সংক্রমিত হতো। ওই একই সময়ে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা সপ্তাহে গড়ে একশোতে নেমে আসে। গত মঙ্গলবারের পরিসংখ্যান বলছে, দিল্লিতে গত ১০ মাসে প্রথমবারের মতো একজন ব্যক্তিও করোনায় মারা যায়নি।
যতদুর জানা যায়, ভারতে এ পর্যন্ত ১ কোটির বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পরে ভারতেই সর্বোচ্চ সংক্রমণ। ভারতে করোনায় ১ লাখ ৫৬ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে। মৃত্যুর এই পরিসংখ্যান বলছে, ভারতে প্রতি ১০ লাখে ১১২ জনের মৃত্যু হয়েছে যা ইউরোপ অথবা উত্তর আমেরিকার চেয়ে কম। অধিকাংশ মহামারীরই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উত্থান-পতন হয়। ভারতেও এর ব্যতিক্রম হয়নি।
দেশটিতে করোনায় মৃতদের মধ্যে ৬৫-ঊর্ধ্ব মানুষের সংখ্যাই বেশি। ভারতের শীর্ষস্থানীয় ভাইরাসবিদ ড. শহীদ জামিল বিবিসিকে বলেন, ‘ভারতে সংক্রমণ কমতে থাকা কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। এর পেছনে কোনো মিরাকল নেই।’ ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের ভাইরাসবিদ ভ্রমর মুখার্জির মতে, ‘আমাদের কাছে এখনো কোনো বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা নেই। কিন্তু ভারতের জনগণ এখনো হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করতে পারেনি বলেই আমরা জানি।’ হার্ড ইমিউনিটির ঘটনা ঘটে তখনই যখন একটি সম্প্রদায়ের বিশাল অংশের শরীরে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ইমিউনিটি তৈরি হয় অথবা তারা ভ্যাকসিন নেয়।
হার্ড ইমিউনিটি অর্জিত না হলেও ভারতে একাধিক কারণেই সংক্রমণের ঘটনা কমছে বলে বিশ্বাস করেন বিশেষজ্ঞরা। দেশটির বিভিন্ন অংশের একাধিকবার একাধিক মহামারী মোকাবিলার ইতিহাস রয়েছে। ভাইরাসের সংক্রমণ হলে কী করতে হয় তা নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা রয়েছে।❐