নারী হোক দুর্গা, ধর্ষক অসুর শায়েস্তা করুক
শিতাংশু গুহ
দেবীদুর্গা আসেন, সাথে অসুরও আসে। কয়দিন হৈহুল্লোড় করে দেবী সপরিবারে চলে যান, কিন্তু অসুরগুলো থেকে যায়? অসুরের আক্ষরিক বাংলা অর্থ হচ্ছে, ‘অ-সুর’, মানে অসুন্দর। দুর্গোৎসবের মূল থিম হচ্ছে, সুর ও অসুরের লড়াই, অর্থাৎ সুন্দর-অসুন্দর বা ভালো-মন্দ বা সত্য-অসত্যের মধ্যে লড়াই। সুর সত্য বা সুন্দর। সত্যের জয়, সুন্দরের জয় অনিবার্য। সেই গান, ‘সত্যম শিবম সুন্দরম।’ জগতে যা কিছু অসুন্দর, তা-ই অসুর। চুরি, ডাকাতি, ব্যাংক লুট, ধর্ষণ, মূর্তি ভাঙা সবই আসুরিক কাজ। এগুলো বাড়ছে। অসুরের সংখ্যা বাড়ছে। দেবী আর কত অসুর মারবেন? একঘেয়ে অসুর মারতে মারতে তিনি বিরক্ত। তাই হয়ত এবার তিনি ‘করোনাসুর’ বধ করবেন।
বাংলাদেশে ব্যাপক পুলিশ প্রহরায় ‘শান্তিপূর্ণ’ পূজা হয়ে থাকে। এবার নাকি পুলিশ থাকবে না? সরকার হয়ত আশা করছেন, করোনার ভয়ে সব অসুর ভালো হয়ে গেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যথাসম্ভব দুর্গাপূজার মন্ডপ কমানোর অনুরোধ জানিয়েছেন। সামাজিকমাধ্যমে একজন মন্তব্য করেছেন, মণ্ডপ কেন হিন্দু’র সংখ্যাই কমিয়ে দিন’না কেন? ঢাকা শহরে এবার ঠিক কয়টি পূজা হচ্ছে, সেই পরিসংখ্যান পাচ্ছিনা, তবে নিউইয়র্কে মন্দিরগুলোতে নিয়ম মেনে পূজা হলেও বিভিন্ন সংগঠন ঘটপূজা করছেন, বা এবারের মতো চুপচাপ থাকতে পছন্দ করছেন। পূজা এমন একটা সময়ে হচ্ছে, যখন চারিদিকে সাজ সাজ রব যে, দ্বিতীয় দফা করোনা আবার আসছে! তাই হৈচৈ কম?
অসুরের বিরুদ্ধে দেবীদুর্গা বারবার জয়ী হন। এবার সাধারণ অসুর নয়, ‘করোনাসুর’। করোনা নাকি অনেক রকমের, অসুরও তা-ই, বিভিন্ন রকমের এবং ছোট অসুর, বড় অসুর আছে। ছোট অসুরেরা ধরা খায়, বড় অসুরেরা জানে যুদ্ধে জেতা যাবে না, তাই তারা দেবীকে ‘তেল’ মারে, দেবীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকে। যুগে যুগে অসুরদের চেহারাও পাল্টেছে। আগেকার দিনে অসুরেরা ছিল মাথামোটা, নিশ্চিত পরাজয় জেনেও যুদ্ধ করে মরত। এখনকার অসুরেরা স্মার্ট, দেবীকে তুষ্ট রাখতে ষোড়শোপচারে পূজা, দান-দক্ষিণা বা দামী উপহার দেয়। দেবী তো ‘মাতৃরূপেণ সংস্থিতা’, মায়ের কাছে তো ভালোমন্দ সকল সন্তানই সমান! দেবীর দয়ায় অসুর এভাবেই বেঁচে যায়।
দেবীর সাথে যুদ্ধে মহিষাসুর বারবার ভোল পাল্টাতো। এ যুগের অসুরাও ওস্তাদের মতো ভোল পাল্টাতে পারদর্শী। দেবীর যেমন ভক্ত থাকে, অসুরের থাকে অনুসারি। এদের ছোট অসুর বলা যায়। মানববন্ধন করা গেলে হয়ত দেখা যেত দেবীর ভক্ত কম, অসুরের দিকে মানুষ বেশি! অসুরের মধ্যে আবার সামাজিক অসুর, রাজনৈতিক বা ধর্মীয় অসুর আছে। রাজনৈতিক অসুর অন্য অসুরদের নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করে। বিনিময়ে রাজনৈতিক অসুরের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে অন্য অসুররা সমাজে সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার-নিপীড়ন চালায়। দেবীদুর্গা স্বর্গ থেকে মর্ত্যে নেমে আসেন মাত্র কয়েকদিনের জন্যে, তাঁর এত সময় কোথায় সকল অসুর বিনষ্ট করার?
তাই ফি বছর দেবীদুর্গাকে আসতে হয় অসুর দমনে! ললনারা দুর্গার মতো চন্ডিকা হউক, অসুররূপী ধর্ষকদের শায়েস্তা করুক। দুর্গাদেবী এবারে ‘করোনাসুর’কে বধ করুন, এবং ধর্ষকদের শায়েস্তা করুন।❐
লেখক: নিউ ইয়র্ক প্রবাসী