অঙ্গনা

সফলতার জন্য সাহসের চর্চা জরুরি : বীণা ভেঙ্কাকাটারামান

ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন সাংবাদিক বীণা ভেঙ্কাকাটারামান ‘দ্য বোস্টন গ্লোব’ পত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগের প্রধান। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আজ সফলতার শীর্ষে।

সাব্বিন হাসান


শুধু বীণা নামেই বিশ্বের সাংবাদিক মহলে সুখ্যাতি ছড়িয়েছেন। পুরো নাম বীণা জুহি ভেঙ্কাকাটারামান। জন্ম ১৯৭৯ সালের ১১ অক্টোবর। বেড়ে উঠেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও উস্টার শহরে। উস্টার হাই স্কুলে তিনি ক্লাসের ভ্যালিডিক্টরিয়ান ছিলেন।

ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন সাংবাদিক বীণা ভেঙ্কাকাটারামান দ্য বোস্টন গ্লোব পত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগের প্রধান হিসাবে দায়িত্বরত রয়েছেন। কিছুদিন আগে ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিয়ে তরুণ মহলে বেশ আলোচিত হন।

২০০২ সালে ব্রাউন ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যাচেলর অব আর্টস ডিগ্রি অর্জন করেন। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আর পরিবেশ বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। ফুল ব্রাইট প্রোগ্রাম ফেলোশিপে ২০০২ থেকে ২০০৫ সাল অবধি রেইন ফরেস্ট অ্যালায়েন্সে কমিউনিকেশনস অ্যান্ড রিসার্চ কো-অর্ডিনেটর হিসাবে কাজ করেন। ২০০৬ সালে হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলে পাবলিক পলিসি পড়া শুরু করেন। ২০০৮ সালে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।

সংরক্ষণের জন্য জনমুখী প্রচারণার সমন্বয় করেন। যার মধ্যে আছে টেকসই কফির আশপাশে সচেতনতা বাড়াতে এবং আরেকটি প্রচারের জন্য টেকসই পর্যটন। বীণা তখন এশিয়াতে প্রিন্সটনের মাধ্যমে একজন রাইটিং অ্যান্ড রিসার্চ ফেলো হয়েছিলেন। এইচআইভি ও এইডস ক্লিনিকের জনস্বাস্থ্য অনুদান লেখক হিসাবে ভিয়েতনামের হ্যানয়তে কাজ করার সুযোগ পান।

ক্যারিয়ারে অনাকাঙ্ক্ষিত একটি ঘটনা তার জীবনে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসে। নিজের বিশ্বাস আর দক্ষতার ওপর আস্থা রাখা, নিজের জন্য ভেতরের আওয়াজ তোলার গুরুত্ব যে কতটা তা জানা জরুরি। সাহস খুঁজে পেয়েছিলাম, সবার সামনে সত্য তুলে ধরার। ক্ষমতার অপব্যবহারকারীদের মুখোশ উন্মোচন করার সাহস থাকতে হয়। জীবনের সাহসী হতে হয়। নিজের ক্যারিয়ারকে বাঁচানোর জন্য, সত্য প্রকাশে, ভবিষ্যতের জন্য কখনো কখনো সাহসী হতে হয়। ঠিক ১০ বছর আগে জ্যেষ্ঠ সম্পাদক এলেনের সঙ্গে উদ্ধত আচরণ করেছিলাম, যিনি আমার মুখের ওপর ফোন রেখে দিয়েছিলেন, সেই তিনিই ‘দ্য বোস্টন গ্লোব’ পত্রিকায় পদোন্নতি দেওয়ার জন্য অফিসে সুপারিশ করেছিলেন। তার সহযোগিতায়ই পরে পত্রিকাটির সম্পাদকীয় পাতার সম্পাদকের দায়িত্ব পাই। এমনকি তিনিই আমাকে হোয়াইট হাউসবিষয়ক প্রতিবেদন করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। অথচ আমি ভেবেছিলাম, আমাকে তিনি অপছন্দ করেন। কথাগুলো এভাবেই জানালেন সাংবাদিক বীণা ভেঙ্কাকাটারামান।

তিনি আরও বলেন, নতুন দায়িত্ব নেওয়ার পর এলেনকে ঘটনার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করায় তিনি বললেন, ‘সাহসিকতা তার ভালো লাগে। আমি যখন কঠিন প্রশ্নের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছিলাম, তখন আমি যেভাবে সত্যের সঙ্গে ছিলাম, তাতে এলেন মুগ্ধ হয়েছিলেন। ওই ঘটনার পর থেকে আমাকে তিনি সম্মান করতে শুরু করেছিলেন।’

সাংবাদিকতার পাশাপাশি বীণা একজন স্বণামধন্য লেখকও। জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশগত ন্যায়বিচার এবং জনস্বাস্থ্য নিয়ে তার গবেষণা ও প্রকাশনা রয়েছে। তার কাজ স্লেট ওয়াশিংটন পোস্ট এবং টাইমের মতো আউটলেটে জায়গা পায়। ২০০৬ থেকে ২০১০ সাল অবধি তিনি ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ এবং ‘দ্য বোস্টন গ্লোবে’ বিজ্ঞান ডেস্কে কাজ করেছিলেন। প্রথমে জেমস রিস্টন ফেলো এবং তারপর রিপোর্টার হয়ে। এ সম্পর্কে বীণা লিখেছেন, শহরের বৈচিত্র্যময় কণ্ঠস্বর এবং বোস্টনের যুগান্তকারী ধারণা এবং জ্ঞানকে আরও ভালোভাবে উপস্থাপনে কাজ করে যাবেন। এসব কাজে রাজনৈতিক নেতাদের এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে জনসেবার উচ্চ প্রত্যাশা পূরণে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবেন। ২০২০ সালের মার্চে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস রোগ ২০১৯ (কোভিড-১৯) মহামারি সম্পর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া সম্বন্ধে সম্পাদকীয় বোর্ডের সমালোচনা তত্ত্বাবধান করে বিশেষ আলোচনায় আসেন।

সাংবাদিক বীণা ভেঙ্কাকাটারামান বলেন, ব্যক্তি জীবনে সবাই ত্রুটিপূর্ণ। সাহস একটি চর্চার বিষয়। জীবনে এগিয়ে যেতে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ‘হিরো’ বানানো উচিত নয়। মনে রাখতে হবে প্রতিটি মানুষই কোনো না কোনোভাবে ত্রুটিপূর্ণ। আজ যে ব্যবসায়ী, শিল্পী, খেলোয়াড়, উদ্যোক্তা বা সাংবাদিককে জীবনের ‘হিরো’ মনে হচ্ছে কাল হয়তো তারই কোনো অন্যায় বা অপশক্তি চর্চা নজরে আসবে। তখন তার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহস দেখানো সহজ হবে না। অনুপ্রেরণার জন্য দূরের নয়, চারপাশেই তেমন মানুষ আছে। আজ অবধি যতদূর এসেছেন, যারা আস্থা রেখেছেন, তাদের জীবনের সংগ্রাম দেখে বড় হয়েছেন, আদর্শ হিসাবে তাদেরই এগিয়ে রাখতে হবে। সিনে জগতের রুপালি পর্দা নয়, হিরো খুঁজে নাও দৃষ্টিসীমার কাছ থেকেই। সমাজ বদল বা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জন্য নয়, বড় স্বপ্ন দেখার সাহস করতে হবে।

এমন স্বপ্ন বুনতে হবে, যা পূরণে নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার সামর্থ্য থাকতে হবে। চারপাশের অনেকেই হয়তো সম্ভব-অসম্ভবের বিশেষ জ্ঞান দিতে আসবেন। নিজের ভেতরে প্রশ্ন থাকতে হবে ‘যা অসম্ভব তা আদৌ সম্ভব করা যায় কি না। হয়তো অনেকের উত্তর হবে না। তখন নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে ‘কেন নয়’? আর তা দেখিয়ে দিয়ে স্বপ্ন পূরণের সাহস নিজেকেই দেখাতে হবে। যা সবার মধ্যেই আছে। আর সব বদলে দেওয়ার সাহসও আছে। তরুণদের উদ্দেশ্য নিজের জীবনের সফলতার গল্প এভাবেই বলেছেন বীণা ভেঙ্কাকাটারামান।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension