ইসরায়েলের সঙ্গে আরব বিশ্বের সম্পর্ক নিয়ে সৌদি রাজপরিবারে দ্বন্দ্ব
ইসরায়েলের সঙ্গে আরব বিশ্বের নতুন সম্পর্ক নিয়ে সৌদি রাজপরিবারের সদস্যদের মধ্যে দ্বান্দ্বিক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরব সম্পর্ক স্থাপন করবে কি না, এ নিয়েই মূলত দ্বন্দ্বের শুরু। রাজপরিবার এবং সরকারের প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তির সাম্প্রতিক বক্তব্য, বিবৃতি ও ক্ষমতাধর যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের মৌনতা দেখে মধ্যপ্রাচ্যের বিশ্লেষকরা বলতে শুরু করেছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে সৌদি আরব এখনও দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে রয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যতই চাপাচাপি করুন আর যুবরাজ মোহাম্মদ যতই উৎসাহী হোন না কেন, সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপন এখনই হচ্ছে না। মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির বিশেষজ্ঞ নায়েল শামা বলেন, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা নিয়ে সৌদি রাজপরিবারের ভেতর এখনো যে অনেক দ্বিধা-দ্বন্দ্ব রয়েছে, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তার মতে, ‘ক্ষমতাধর যুবরাজ বিন সালমান দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে চাইছেন, কিন্তু তার বাবা বাদশাহ সালমান এখনো দ্বিধায় রয়েছেন।’
সেই দ্বিধার প্রথম লক্ষণ দেখা গেছে গত ২৩ সেপ্টেম্বর যখন বাদশাহ সালমান জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে তার ভাষণে পরিষ্কার বলেন, সৌদি আরব এখনো ২০০২ সালের আরব শান্তি পরিকল্পনার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেন, ইসরায়েলের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক তখনই সম্ভব, যখন তারা পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী মেনে নিয়ে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় রাজি হবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বা নিজের ছেলের ইচ্ছার তোয়াক্কা যে সৌদি বাদশাহ করছেন না, তার আরও নমুনা চোখে পড়ছে।
চুক্তির আগে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইনের সঙ্গে ইসরায়েলি ও আমেরিকান কর্মকর্তাদের মধ্যে গোপন দেন-দরবার, দর-কষাকষির ব্যাপারে সব কিছু সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ জানলেও বাবার কাছে তিনি তা গোপন রাখেন বলে দাবি ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের। বাদশাহ সালমান ক্ষিপ্ত হতে পারেন এই ভয়ে বাহরাইন চুক্তি করতে ইতস্তত করছিল, কিন্তু যুবরাজ মোহাম্মদ তাদের আশ^স্ত করেন। বাদশাহ সালমান এ নিয়ে ছেলের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েছেন এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ও জেরুজালেম নিয়ে সৌদি প্রতিশ্রুতি নতুন করে তুলে ধরার জন্য তার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে তিনি নির্দেশ দিয়ে দেন।
তাই আগস্টে আমিরাত সিদ্ধান্ত জানানোর পরপরই সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সল বিন ফারহান জার্মানিতে এক সফরে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ফিলিস্তিন সংকট সমাধানের ইস্যু অগ্রাহ্য করার প্রশ্নই আসে না। গত সপ্তাহে সৌদি রাজপরিবারের প্রভাবশালী সদস্য, সাবেক গোয়েন্দাপ্রধান প্রিন্স তুর্কি আল ফয়সল সৌদি দৈনিক আশরাক আল আওসাতে এক মন্তব্য প্রতিবেদনে লেখেন, ‘সংযুক্ত আরব আমিরাতের পথে যাওয়ার কথা বিবেচনা করছে এমন যেকোনো আরব দেশের উচিত ‘(ইসরায়েলের কাছে) উঁচুমূল্য দাবি করা’। বাদশাহ সালমানের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত প্রিন্স তুর্কি আরও লিখেছেন, ‘সৌদি আরব একটি দাম ধার্য করেছে। আর তা হলো, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে; যার রাজধানী হবে জেরুজালেম।’
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কমতে থাকা এবং সেই সঙ্গে শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ ইরানের সামরিক ও রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ নিয়ে সৌদি আরব আতঙ্কিত। সৌদি বাদশাহ এখন মুখে যত কথাই বলুন না কেন, এক দশকেরও বেশি সময় ধরে পর্দার আড়ালে তার সরকার ইসরায়েলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। কিন্তু সেই সম্পর্ককে প্রকাশ্যে নিয়ে আসার প্রথম ইঙ্গিত পাওয়া যায় ২০১৮ সালের এপ্রিলে যুবরাজ বিন সালমানের যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময়।❐