পর্ব চারের এক
গৌতম বুদ্ধ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মনীষীদের অন্যতম। অনেকেই তাঁকে প্রচলিত অর্থে দার্শনিক বলতে নারাজ। কারণ তিনি দার্শনিক আলোচনা থেকে শুধু বিরতই থাকেননি, বরং সেগুলোকে অহেতুক এবং সময়ের অপচয় বলে মনে করতেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, ‘যে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে না তা নিয়ে আলোচনা অর্থহীন।‘ কিন্তু এটাই যে একটা বড় দর্শন, বর্তমান শতাব্দীর যেক্তিক প্রত্যক্ষবাদীদের (logical positivist) তত্তবিদ্যাবিরোধী বক্তব্য থেকে তা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়।
গৌতম বুদ্ধের চারটি আর্য সত্যের (চতুরার্য সত্য )সব কটিই দু:খকে কেন্দ্র করে। তাঁর শিক্ষা ও দর্শনের মূল লক্ষ্য হলো মানুষকে কীভাবে দু:খের হাত থেকে বাঁচানো যায়। গৌতম বুদ্ধ দু:খের হাত থেকে পালিয়ে বাঁচতে চাননি, তিনি দু:খকে জয় করতে চেয়েছেন। দু:খের হাত থেকে বাঁচার জন্য গৌতম বুদ্ধ কারও কাছে সাহায্য না চেয়ে নিজের ইচ্ছাশক্তি ও সংযমের মাধ্যমে দু:খের হাত থেকে অব্যাহতি লাভের চেষ্টা করেছেন।
জগতে দু:খের কথা শুধু গৌতম বুদ্ধ একাই বলেননি, বিভিন্ন উপনিষদে দু:খ সম্পর্কে অনেক আলোচনা আছে। সাংখ্য দর্শনের অন্যতম প্রধান গ্রন্থ সাংখ্যকারিকার প্রথম সূত্রই ত্রিবিদ দু:খ নিয়ে শুরু করেছে। ভারতীয় দর্শনের একমাত্র চার্বাক সম্প্রদায় ছাড়া আস্তিক ও নাস্তিক সব কটি দার্শনিক সম্প্রদায়ই দু:খ নিয়ে আলোচনা করেছে এবং এর হাত থেকে অব্যাহতি লাভ করাকেই জীবনের চরম ও পরম লক্ষ্য বলে মনে করেছে। তবে প্রাচ্য বা পাশ্চাত্যের কোন দার্শনিকই গৌতম বুদ্ধের মত এত গভীরভাবে এবং যোক্তিকতার সঙ্গে দু:খ সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেননি।
–কাজী নুরূল ইসলাম।
ছবিঃ স্টোন ওয়ার্ক এশিয়া