বাংলাদেশরাজনীতি

ছাত্রদলের কাউন্সিল: মাঠের সমীকরণ কী?

রূপসী বাংলা নিউজ ডেস্ক: আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের শীর্ষ দুই পদে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এই দুই পদে ২৭ জন ছাত্র নেতা লড়াই করছেন। এর মধ্যে সভাপতি পদে ৮ জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ১৯ জন প্রার্থী রয়েছেন। আর জয়ী হতে ভোটের জন্য সারাদেশের ১১৭টি ইউনিটের কাউন্সিলরদের কাছে ছুটে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। তবে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের বিভিন্ন অভিযোগ এবং যাচাই-বাছাই কমিটি প্রার্থিতার বৈধতা দিলেও আপিল কমিটি প্রার্থিতা বাতিলের ঘটনায় বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছে দলের হাইকমান্ড। যার ফলে কাউন্সিলে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সৃষ্টি হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন নেতা-কর্মীরা।

ছাত্রদলের ভোটে কাউন্সিলরদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কাউন্সিলে সভাপতি পদে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন সংগঠনের সাবেক বৃত্তি ও ছাত্র কল্যাণ সম্পাদক কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমানের। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-সভাপতি সাজিদ হাসান বাবুও রয়েছেন আলোচনায়।

অপরদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-সভাপতি আমিনুর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক শাহনেওয়াজ, সাইফ মাহমুদ জুয়েল, তানজিল হাসান, ইকবাল হোসেন শ্যামল।

নেতাকর্মীরা জানান, সংগঠনের সভাপতি পদে প্রার্থীদের মধ্যে কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ মামলা (১৭ টি) রয়েছে। এছাড়া ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি কর্মসূচি পালনকালে সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে হস্তান্তর করলে আদালত তাকে ৩ মাসের কারাদণ্ড দেন।

জানা গেছে, পারিবারিকভাবে শ্রাবণের পুরো পরিবার আওয়ামী লীগ রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তবে তার রাজনৈতিক জীবনের শুরুটাই হয়েছে ছাত্রদল দিয়ে। ছাত্রদলের তৃণমহলে রাজনীতি থেকে উঠে আসা এ নেতা পারিবারিক রাজনৈতিক স্রোতের সম্পূর্ণ বিপরীতে অবস্থান নিয়ে পথ চলা শুরু করেন। এতে একদিকে যেমন তিনি পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছেন তেমনি বিগত দিনে যোগ্যতা ও ত্যাগ থাকার পরও ছাত্রদলের কমিটিতে অবমূল্যায়িত হয়েছেন। সাংগঠনিক নেতা হিসেবে পরিচিত এ নেতার মূল্যায়ন নিয়ে এবার আশার সঞ্চার ঘটেছে নেতাকর্মীদের মাঝে।

তারা বলছেন, পারিবারিক রাজনৈতিক ঐতিহ্যের বিবেচনায় এতোদিন তাকে মূল্যায়নের জায়গায় নিয়ে যেতে না পারলেও এবার শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে নিজের অবস্থানকে জানান দিতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।

শ্রাবণের জন্মস্থান যশোর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাজিদুর রহমান সাগর জানান, দলের জন্য শ্রাবণের ত্যাগ রয়েছে। আমরা পরিবার নয়, প্রার্থীর যোগ্যতাকে বিবেচনায় নিতে চাই। দলের প্রতি তার দায়বদ্ধতা কেমন তা বিবেচনায় নিতে চাই।

সভাপতি প্রার্থী হাফিজুর রহমানকে নিয়েও সংগঠনের একটি অংশ আশাবাদী। ভোটের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতে ইতোমধ্যে তিনি সারাদেশে সফর করেছেন। নিয়মিত যোগযোগ রাখছেন ভোটারদের সঙ্গে। তবে তার নিজ গ্রুপের বড় একটি অংশ তাকে মেনে নিতে চাইছেন না। তারা তার পক্ষে প্রচারণা এখনো সরব হয়ে ওঠেনি। তাই সবাইকে নিজের পক্ষে নিতে পারলে ভালো ফল করতে পারবেন বলে মনে করছেন নেতা-কর্মীরা।

হাফিজুর রহমান বলেন, তিনি সারাদেশে সফর করেছেন। ভোটারদের মধ্যে যে উৎসাহ পেয়েছেন, সাড়া পেয়েছেন তাতে তিনি আশাবাদী।

এদিকে সাজিদ হাসান বাবু কাজ করছেন পর্দার অন্তরালে। প্রচারণার ঢাক-ঢোল না পিটিয়ে নীরবে কাজ করছেন। বিগত আন্দোলনে সক্রিয় এ নেতাকে নিয়েও আশাবাদী সংগঠনের ভোটাররা। তিনিও প্রত্যেক জেলা সফর করে ভোট চাইছেন। উত্তরবঙ্গের নির্দিষ্ট ভোট ব্যাংকে আঘাত হানতে পারলে ভালো ফল করতে পারবেন তিনি।

বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বগুড়ার সন্তান ফজলুর রহমান খোকনকে নিয়েও নানান সমীকরণ করছেন নেতাকর্মীরা। তবে কোন কারণে তিনি সরে দাঁড়ালে ভোটের মাঠে একচেটিয়া প্রভাব রাখতে পারবেন একই গ্রুপের শ্রাবণ।

সাধারণ সম্পাদক পদে সমানে সমান লড়াই করছেন আমিনুর রহমান, সাইফ মাহমুদ জুয়েল, মো. হাসান (তানজিল হাসান), শাহনেওয়াজ আর ইকবাল হাসান শ্যামল।

এদের মধ্যে জুয়েলের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা। কারাবরণও করেছেন দুইবার। ওয়ার্ড ছাত্রদল থেকে উঠে আসা এ নেতা সাংগঠনিক তৎপরতা আর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে এগিয়ে থাকবেন।

এছাড়া বিনয়ী হিসেবেই সমাদৃত আমিনুর রহমান। রাজপথের সক্রিয় এ নেতাকে নিয়ে আশাবাদী নেতাকর্মীরা। নির্যাতিত ছাত্রনেতা মো. হাসান (তানজিল হাসান) ভোটের মাঠে কাজ করছেন। নোয়াখালি অঞ্চলের নেতাদের আশীর্বাদ নিয়ে সারাদেশে কাজ করছেন। ইকবাল হাসান শ্যামলকে নিয়ে ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানের সমর্থকরা নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন।

ধারণা করা হচ্ছে- বিগত দিনে সারাদেশে কমিটি গঠন করায় আকরামুলের নিজস্ব একটি ভোট ব্যাংক রয়েছে। তবে একই সিন্ডিকেটের আরেকজন প্রার্থী শাহনেওয়াজ থাকায় ভোটের মাঠে উভয়েরই ক্ষতি হবে।

প্রসঙ্গত, আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সারাদেশের ১১৭টি ইউনিটের ৫৮০ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নতুন নেতা নির্বাচন করবেন।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension