আন্তর্জাতিকএশিয়া

থাইল্যান্ডে জরুরি অবস্থা

থাইল্যান্ডে রাজার ক্ষমতা খর্ব এবং প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে চলমান বিক্ষোভ দমাতে জরুরি অবস্থা জারি করেছে দেশটির সরকার।

নিষিদ্ধ করা হয়েছে সমাবেশ এবং স্পর্শকাতর সংবাদ প্রকাশ। বৃহস্পতিবার ভোর ৪টা থেকে এ জরুরি অবস্থা কার্যকর হয়েছে।

তবে এদিনও ব্যাংককে জরুরি অবস্থা উপেক্ষা করে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। পুলিশ সেখান থেকে বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করেছে। খবর বিবিসি ও এএফপির।

জরুরি অবস্থা কার্যকর হওয়ার পরপরই দাঙ্গা পুলিশ প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান-ওচার কার্যালয়ের বাইরে অবস্থান নিয়ে থাকা বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়।

বিক্ষোভকারীরা অস্থায়ী ব্যারিকেড তৈরি করে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেও পারেনি। বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়ার পর রাস্তায় কয়েকশ পুলিশ দেখা গেছে।

পুলিশ অন্তত ২০ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করেছে। যাদের মধ্যে কয়েকজন নেতাও রয়েছেন। বিবিসি জানায়, এদের মধ্যে মানবাধিকারবিষয়ক আইনজীবী অ্যানন নামপা, ‘পঙ্গুইন’ নামে সুপরিচিত অ্যাক্টিভিস্ট পারিত চিওয়ারাক ও পানুসায়া সিথিজিরাওয়াত্তানকুল রয়েছেন।

আগস্টে থাইল্যান্ডের রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে জনসমক্ষে প্রথমবার সমালোচনা করে এবং প্রথাগত ধারার সংস্কারের দাবি তুলে আলোচনায় আসেন অ্যানন। ওই মাসের শেষদিকে রাজতন্ত্রের নিয়ম সংস্কারের ১০ দফা দাবি পেশ করেন পানুসায়া সিথিজিরাওয়াত্তানকুল।

জারি করা জরুরি ডিক্রিতে পাঁচ বা তার বেশি মানুষের জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া ‘ভীতিকর’ এবং ‘জাতীয় নিরাপত্তায় হুমকি’ তৈরি করতে পারে- এমন সংবাদ প্রকাশও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জরুরি অবস্থা জারির ফলে যে কোনও সুনির্দিষ্ট এলাকায় মানুষের প্রবেশ আটকাতে পারবে কর্তৃপক্ষ।

দেশটির সরকার বলছে, রাজকীয় মোটর শোভাযাত্রায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, অস্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক ক্ষতি এবং করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এই জরুরি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর জারি করা জরুরি ডিক্রি থাই পুলিশের পক্ষ থেকে টেলিভিশনে প্রচারিত হয়।

এতে বলা হয়েছে, দ্রুত এবং কার্যকরভাবে এই পরিস্থিতির (বিক্ষোভ) অবসান ঘটিয়ে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরয়ে আনতে জরুরি পদক্ষেপ নেয়া খুবই প্রয়োজন ছিল।

বিদেশভ্রমণ শেষে থাইল্যান্ডের রাজা মাহা ভাজিরালংকর্নের দেশের মাটিতে পদার্পণে ফের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে ব্যাংকক। বুধবার হাজারও গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভকারী রাজার গাড়িবহরের সামনে বিক্ষোভ করে।

আন্দোলন-বিক্ষোভের প্রতীক হয়ে ওঠা ‘তিন আঙুল স্যালুট’ প্রদর্শন করে তারা। মূলত প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান-ওচার পদত্যাগের দাবিতে বুধবার ১০ হাজারের বেশি বিক্ষোভকারী রাজধানীতে জড়ো হয়। একই সঙ্গে রাজার ক্ষমতা খর্ব করার দাবিও জানাচ্ছে তারা।

বুধবার প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় বিক্ষোভকারীরা। প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থানের ঘোষণা দেয়। ২০১৪ সালে সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন প্রায়ুথ। পরে বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী হন তিনি।

গণতন্ত্রের সমর্থনে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে চলতে থাকা আন্দোলন থাইল্যান্ডের ক্ষমতাসীনদের জন্য সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে।

থাইল্যান্ডের সংবিধান যেন নতুন করে লেখা হয়, সেটি বিক্ষোভকারীদের আরেকটি দাবি। সম্প্রতি করা সংবিধানের কয়েকটি সংশোধনী বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

আগস্টে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর রাজতন্ত্রের সংস্কারের দাবীও জোরালো হতে থাকে। বর্তমানে থাই আইন অনুযায়ী, থাইল্যান্ডের রাজতন্ত্রের সমালোচনা করা বেআইনি, যেই ধারা দীর্ঘসময় ধরে চলে আসছে।❐

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension