আন্তর্জাতিকনিসর্গপ্রধান খবর

দক্ষিণ ক্যালিফোরনিয়ার সৈকত আর সাগর জ্বলে উঠল নীল তরঙ্গে

জাভেদ রেজোয়ান: এ মাসে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলে রাতের বেলায় মানুষের সাগরের ঢেউগুলো উজ্জ্বল নীল রঙের আলোক তরঙ্গ নিয়ে অন্ধকারে প্রসারিত হয়ে ভেঙে ভেঙে পড়ছে।

অতি সম্প্রতি দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার উপসাগরে এ ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা। কখনও কখনও সমুদ্রকে এমনিভাবে উজ্জ্বল হয়ে উঠতে দেখা যায়। এটি নিয়ে বিজ্ঞানীরা গেল ১২০ বছর ধরে অধ্যয়ন করে আসছেন।

তারা জানা এটি রেড টাইড বা শেত্তলা জাতীয় ফুলের সঙ্গে সম্পর্কিত। ডাইনোফ্লেজলেটস নামে উপকূলীয় ভাসমান সম্প্রদায়ের অতি ক্ষুদ্র এক কোষী জীব। এরা সমুদ্রপৃষ্ঠে ভাসমান অবস্থায় থাকে এবং জৈব পদার্থ নির্গমন করতে পারে।

সাধারণত ডাইনোফ্লেজলেটস যখন কোনও শিকারীর আক্রমণের শিকার হয় তখন আক্রমণকারীকে চমকে দিতে এই নীল আলো বিকিরণ করে।

সান দিয়েগোর স্ক্রিপস ইনস্টিটিউশন অফ ওশেনোগ্রাফিতে কর্মরত মেরিন বায়োলজিস্ট মাইকেল ল্যাট্জ‌ জানান,
কখনও কখনও এ জীবগুলোকে উচ্চ ঘনত্বের মধ্যেও দেখা যায়। রেড টাইড বা লাল জোয়ারের ফলে সমুদ্রের জলকে দিনের বেলায় গাঢ় লাল, বাদামী বা কমলা রঙে রাঙিয়ে দেয় এরা। আর রাতে ঢেউয়ের মাথায় বা নৌকার সঙ্গে ধাক্কা লেগে এগুলো সত্যিই খুব দর্শনীয় হয়ে ওঠে।

মাইকেল ল্যাট্জ আরও জানান, রেড টাইড বা লাল জোয়ার সম্পর্কে আগে থেকে বলা কঠিন। আর এদের সকলেই এভাবে উজ্জ্বল আলো বিকিরণ করতে পারে, ব্যাপারটা তাও নয়। বিজ্ঞানীরা এখনও এগুলোর সবরকম আচরণ বা যে কারণে এরা নিজেদেরকে এভাবে পরিচালিত করে, সেসব সম্পর্কে নিশ্চিত নন।

ক্যালিফোরনিয়ার বাজা থেকে লস অ্যাঞ্জেলেস পর্যন্ত বিস্তৃত জায়গা জুড়ে দারুণ দর্শনীয় এই সি স্পার্কল দেখা যায় বলে জানান মাইকেল ল্যাট্জ‌।

সি স্পার্কল ওই এলাকার রাতকে অসাধারণ আর দর্শনীয় করে তুলেছে। ফলে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে ঘরে থাকার বিধিনিষেধ অমান্য করে উৎসাহী মানুশেরা সমুদ্র উপকূলে ভিড় জমিয়েছেন।

গেল শনিবার রাতে, সৈকতের বালিতে আলোর এই ঝলক দেখতে বেশ কজন সৈকতপ্রেমী হারমোজা বিচে ভিড় জমিয়েছিলেন।

এ সপ্তাহের শুরুর দিকে, আলোকচিত্র শিল্পী প্যাট্রিক কোইন তার এক বন্ধুর সঙ্গে নৌকায় করে সমুদ্রের প্রাণীদের ছবি তুলতে গিয়েছিলেন। তারা আশা করেছিলেন যে ঝলমলে সমুদ্রের জলে সমুদ্রের প্রাণীরাও আলোকিত হয়ে উঠবে।

তারা দুজনে অরেঞ্জ কাউন্টির উপকূল ধরে অন্ধকারে অনেক দূরে চলে গিয়েছিলেন। কয়েক ঘন্টা কাটানোর পর যখন তারা আশা ছেড়ে দিয়ে ফিরে আসবার কথা ভাবছিলেন, তখনই তাদের নৌকার কাছে দুটি ডলফিন লাফিয়ে উঠল। কয়েক মিনিট পরে, আরও ডলফিন উপস্থিত হলো।

টরেন্সের বসবাস করা ওই আলোকচিত্র শিল্পী সে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছেন। সে অভিজ্ঞতাকে তিনি তাঁর জীবনের সবচেয়ে জাদুময় রাত হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

সম্প্রতি কেএএনসি-কেএএনসি-টিভি চ্যানেল ৭-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি খুব বেশি কৌতুহলী নই, তবে ডলফিনগুলো লাফিয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আমার চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছিল।

তিনি বলেন, ‘সেটি ঠিক এমন এক মায়াবী মুহূর্ত ছিল যে আমরা সত্যিই খুব ভাগ্যবান হয়ে উঠেছিলাম।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেড টাইড বা লাল জোয়ার কত দিন স্থায়ী হবে তা নির্ধারণ করা কঠিন। এর আগেরগুলো কয়েক দিন থেকে এক মাসেরও বেশী সময় ধরে উপকূল জুড়ে স্থায়ী হয়েছিল। ⛘

লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস্‌ অবলম্বনে

.

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension