যুক্তরাষ্ট্র

প্রেসিডেন্ট হতে সাহায্য চেয়ে জিনপিংয়ের কাছে মিনতি ট্রাম্পের!

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় দফায় নির্বাচনে জিততে চীনের কাছে সাহায্য চেয়েছেন। এর জন্য চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের কাছে রীতিমতো মিনতিও করেছেন তিনি। সম্প্রতি এই বিস্ফোরক তথ্য দিয়েছেন মাকিন প্রেসিডেন্টের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন।

‘ইন দ্য রুম হোয়্যার ইট হ্যাপেন্ড: এ হোয়াইট হাউস মেমোয়ের’ নামে প্রকাশিতব্য বইয়ে বোল্টন আরও লিখেছেন, ‘ট্রাম্প কৃষকদের ভোট নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। এর জন্য চীনকে বেশি করে সয়াবিন ও গম আমদানির অনুরোধ জানিয়েছিলেন তিনি। এছাড়া কৃষি পণ্য নেয়ার জন্যও অনুরোধ করেন তিনি।’

সাবেক মার্কিন এ উপদেষ্টার দাবি, ‘ট্রাম্প জিনপিংয়ের কাছে মিনতি করন, যেন তিনি দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে জিততে পারেন।’

ট্রাম্প প্রশাসনের তৃতীয় জাতীয় নিরাপত্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে হোয়াইট হাউসে ঘটে যাওয়া বেশ কিছু ঘটনা নিজের বইয়ে তুলে ধরেছেন বোল্টন। আসন্ন নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেট নেতা জো বাইডেনের বিরুদ্ধে দুর্নাম রটাতে ইউক্রেনের ওপর চাপ প্রয়োগের অভিযোগের বিষয়েও লিখেছেন তিনি।

বইয়ে প্রতিনিধি পরিষদের (হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস) বিরুদ্ধে ট্রাম্পের অভিশংসন নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন জন বোল্টন। তার দাবি, প্রতিনিধি পরিষদ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসনের জন্য যে অভিযোগ তুলেছিল, মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার চেয়েও গুরুতর খারাপ কাজে যুক্ত ছিলেন।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘দ্য রুম হোয়্যার ইট হ্যাপেনড’ নামে বইটি ২৩ জুন প্রকাশ হবার কথা রয়েছে। জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউস বলেছিল বইটিতে থাকা ‘টপ সিক্রেট’ তথ্য ও বর্ণনা বাদ দিতে হবে। যদিও এর প্রকাশনা বন্ধ করতে তাকে নির্দেশ দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। বইয়ে গোপন তথ্য প্রকাশ করলে জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের চুক্তিভঙ্গ হবে জানিয়ে এমন তথ্য বাদ দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাকে।

তবে বোল্টন সেসময় তা নাকচ করে দেন। এমনকি ট্রাম্পের অভিশংসন বিচারের ক্ষেত্রে যেসব প্রশ্ন উঠেছিল, তাও বইটিতে স্থান পেয়েছে।

অভিযোগটি উঠেছে মূলত জাপানের ওসাকায় গত বছরের জুনে জি-২০ সম্মেলনের ফাঁকে ট্রাম্প ও শি’র মধ্যে হওয়া এক বৈঠক নিয়ে।

নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত বইটির সারসংক্ষেপে বোল্টন দাবি করেন, চীনের প্রেসিডেন্ট অভিযোগ করেছিলেন, কিছু মার্কিন সমালোচক চান চীনের সঙ্গে যাতে নতুন করে স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হয়। ট্রাম্প ভেবেছিলেন শি হয়তো তার ডেমোক্রেটিক প্রতিপক্ষের কথা বলছেন।

বোল্টন বলেন, এরপর বিস্ময়করভাবেই ট্রাম্প আলোচনা ২০২০ সালে অনুষ্ঠিতব্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে ঘুরিয়ে দেন। চীনের অর্থনৈতিক সামর্থ্যের কথা উল্লেখ করে নির্বাচনে জেতার জন্য শি’র সাহায্য চান।

শি যখন বাণিজ্য আলোচনায় কৃষি উৎপাদনের ওপর জোর দেয়া হবে বলে মন্তব্য করেন, ট্রাম্প তখন তাকে ‘চীনের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ নেতা’ বলে উল্লেখ করেন।

বইটি নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা ধরনের বিতর্ক তৈরি হয়েছে। মার্কিন ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ রবার্ট লাইথিজার বলেন, “চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ঐ আলোচনায় দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে জেতার ব্যাপারে কোন আলোচনা হয়নি।”

জানুয়ারিতে ডেমোক্রেটিক দলের সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন ও তার ছেলে হান্টারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত শুরু করার জন্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে চাপে ফেলার জন্য সামরিক সহায়তা প্রত্যাহারের অভিযোগে ইমপিচমেন্টের মুখোমুখি হন ট্রাম্প। তখন তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেন, এবং রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত সেনেটে কোন সাক্ষীর বক্তব্য ছাড়াই দুই সপ্তাহব্যাপী ট্রায়ালের পর নিষ্কৃতি পান।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের এপ্রিলে হোয়াইট হাউজে যোগ দেন বোল্টন, একই বছরের সেপ্টেম্বরে জানান জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদ ছেড়ে দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্প বলেন, প্রেসিডেন্টের সাথে মতানৈক্য হওয়ার কারণে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension