প্রধান খবররাজনীতি

ভারতে বিশ্বের বৃহত্তম ভোট উৎসব শুরু

রূপসী বাংলা কলকাতা ডেস্ক: ভারতের জাতীয় নির্বাচনের প্রথম ধাপ শুরু হয়েছে আজ থেকে। এবারের নির্বাচনকে দেখা হচ্ছে ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি’র গ্রহণযোগ্যতা যাচাইয়ের নির্বাচন হিসেবে।

আজ প্রথম ধাপে কয়েক কোটি ভারতীয় দেশটির ২০ টি রাজ্য ও কয়েকটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৯১ টি আসনে ভোট দেবেন।

ভারতের সংসদের নিম্ন কক্ষ বা লোকসভার নতুন সংসদ গঠনের উদ্দেশ্যে সাত ধাপের এই ভোট উৎসব চলবে ১৯শে মে পর্যন্ত। ভোট গণনার দিন ২৩শে মে।

এই নির্বাচনে বৈধ ভোটার সংখ্যা ১৪ কোটির বেশি, যার কারণে এটি বিশ্বের সর্বকালের সর্ববৃহৎ নির্বাচনের তকমা পাচ্ছে।

নরেন্দ্র মোদি’র হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে ঐতিহাসিক বিজয় লাভ করেছিল।

ভারতে লোকসভা বা সংসদের নিম্ন কক্ষে মোট ৫৪৩টি আসন রয়েছে। সরকার গঠন করতে কোনো দল বা জোটের কমপক্ষে ২৭২টি আসন প্রয়োজন হয়।

বিজেপি টানা দ্বিতীয়বারের মত নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার উদ্দেশ্যে প্রচারণা চালালেও তাদের কড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে ফেলছে বিভিন্ন এলাকার শক্তিশালী কিছু আঞ্চলিক দল এবং ভগ্নদশা থেকে পুনরুজ্জীবিত হওয়া প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস।

কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা রাহুল গান্ধীর বাবা, দাদি এবং প্রপিতামহ তিনজনই ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এবছরের জানুয়ারি মাস থেকে তার বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন।

পর্যবেক্ষকদের অনেকে এই নির্বাচনকে কয়েক দশকের মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন।

নির্বাচনী প্রচারণার সময় থেকেই বিভিন্ন দলের নেতাদের কথার যুদ্ধে ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও তিক্ততার আভাস পাওয়া গেছে।

ভোটের লড়াইয়ের হিসেবে ক্ষমতাসীন বিজেপি’র তুরুপের তাস নরেন্দ্র মোদি-ই, যিনি দাবি করেন যে ভারতের নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে কঠোর ভাবমূর্তি সম্পন্ন এক নেতার দায়িত্ব পালন করেছেন।

তবে সমালোচকরা মনে করেন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান তৈরির যে আশ্বাস তিনি দিয়েছিলেন, তা বাস্তবায়িত হয়নি। আর মোদি’র নেতৃত্বে ভারতে ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্যবাদ এবং মেরুকরণের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও মনে করেন সমালোচকরা।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় নির্বাচন?

এই নির্বাচনের ব্যাপকতা আসলে মাথা ঘুরিয়ে দেয়ার মত। এ নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ১৪ কোটি ২০ লাখ। তাদের ভোট দেয়ার জন্য খোলা হয়েছে ১০ লাখ পোলিং স্টেশন। পোলিং স্টেশনে পৌঁছাতে কোনো ভোটারের ২ কিলোমিটারের বেশি সফর করতে হবে না।

ভোটের প্রচারে রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী

২০১৪ সালের নির্বাচনে মোট ভোটারের ৬৬% ভোট দিয়েছিলেন এবং ৪৬৪টি দলের ৮ হাজার ২৫০ প্রার্থী সে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলো।

ভোট গ্রহণের পুরো প্রক্রিয়ায় বিপুল সংখ্যক নির্বাচনী কর্মকর্তা এবং নিরাপত্তা কর্মী নিয়োজিত থাকার কারণে ১১ই এপ্রিল থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৭টি ধাপে চলবে ভোট গ্রহণ।

১৯৫১-৫২ সালে ভারতের ঐতিহাসিক প্রথম নির্বাচন শেষ হতে সময় লেগেছিল তিন মাস।

১৯৬২ থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত নির্বাচন শেষ করতে সময় লাগতো ৪ থেকে ১০ দিন।

১৯৮০ সালে হওয়া ৪ দিনের নির্বাচন ভারতের ইতিহাসের সবচেয়ে অল্প সময় ধরে হওয়া নির্বাচন ছিল।

আজ যেসব রাজ্যে ভোট চলছে

বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা থেকে যেসব রাজ্যের পোলিং স্টেশনগুলো ভোট গ্রহণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে সেগুলো হলো: অন্ধ্র প্রদেশ, অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, বিহার, ছত্তিশগড়, জম্মু ও কাশ্মীর, মহারাষ্ট্র, মনিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, ওড়িশা, সিকিম, তেলেঙ্গানা, ত্রিপুরা, উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এবং লক্ষদ্বীপ।

এর মধ্যে কিছু কিছু রাজ্যে, যেমন অন্ধ্র প্রদেশ এবং নাগাল্যান্ডে, একদিনে ভোট গ্রহণ শেষ হয়ে গেলেও উত্তর প্রদেশেরমত অনেক রাজ্যে কয়েকটি ধাপে ভোট গ্রহণ চলবে। িপশ্চিমবঙ্গে ভোট চলবে সাত দফায়।

নির্বাচনের মূল ইস্যু

এই সহস্রাব্দের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত কোটি কোটি ভারতীয় দারিদ্রমুক্ত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এখনো তাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। মোদির নেতৃত্বে বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম অর্থনীতির স্বাভাবিক গতিতে কিছুটা ভাটা পড়েছে।

বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ৭% এর আশেপাশে থাকলেও দেশটির অন্যতম প্রধান সমস্যা বেকারত্ব।

কর্মসংস্থান সংক্রান্ত নেতিবাচক পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হচ্ছে না, এমন অভিযোগ রয়েছে মি. মোদির সরকারের বিরুদ্ধে। এমনকি সম্প্রতি ফাঁস হওয়া এক সরকারি নথিতে দেখা যায় ১৯৭০’এর দশকের পর বর্তমানে ভারতে কর্মসংস্থানের অভাব তূলনামূলকভাবে সবচেয়ে প্রকট। কৃষি খাত থেকে আয়ও অনেকটাই স্থিতিশীল পর্যায়ে পৌঁছেছে। কৃষিপণ্যের মাত্রাতিরিক্ত সরবরাহের কারণে পণ্যের দাম কমে যাওয়ায় কৃষকদের ওপর ঋণের বোঝা বেড়েছে।

প্রত্যাশিতভাবেই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে দুই প্রধান দলই গ্রামের দরিদ্র শ্রেণির চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়েছে।

ভারতের কৃষকদের জীবনমান উন্নয়নে বিপুল পরিমাণ কল্যাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিজেপি। আর কংগ্রেসের প্রতিশ্রুতি দেশের দরিদ্রতম ৫ কোটি পরিবারের জন্য ন্যূনতম আয় নিশ্চিত করার প্রকল্প বাস্তবায়ন।

ফেব্রুয়ারিতে ভারত শাসিত কাশ্মীরে পাকিস্তান ভিত্তিক একটি জঙ্গি সংগঠনের আত্মঘাতী আক্রমণে অন্তত ৪০ জন ভারতীয় প্যারা মিলিটারি পুলিশ মারা যাওয়ার পর জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টিও নির্বাচনের অন্যতম প্রধান একটি ইস্যু হিসেবে প্রাধান্য পাচ্ছে।

ওই ঘটনার পর পাকিস্তানে বিমান হামলা করে ভারত।

তারপর থেকেই ক্ষমতাসীন বিজেপি’র নির্বাচনী প্রচারণায় জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টি অন্যতম প্রধান ইস্যু হিসেবে উঠে এসেছে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension