বিনোদন

মহানায়কের ৭৮তম জন্মদিন, নেই কোন আয়োজন

রূপসী বাংলা বিনোদন ডেস্ক: ঢাকাই সিনেমায় সুদর্শন নায়ক বলতে যে’কজন সত্তর-আশির দশকে বাঙালি দর্শকের মন জয় করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম বুলবুল আহমেদ। সাদাকালো পর্দার অভিনেতা হয়েও কালের সীমানা পেরিয়ে রঙিন হয়ে আছেন তিনি।

ঢাকাই চলচ্চিত্রে তাকেই প্রথম ‘মহানায়ক’ বলা হয়। ২০১০ সালে সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি দেন তিনি। অথচ তার স্মৃতি যেন এখন ভুলতে বসেছে শোবিজ সংশ্লিষ্টরা। আজ এই মহানায়কের ৭৮তম জন্মদিন। তার ৭৮তম জন্মবার্ষিকীতে তেমন কোনো আয়োজন চোখে পড়েনি কোথাও। চলচ্চিত্রপাড়া থেকেও পাওয়া যায়নি তার স্মৃতিচারণের কোনো খোঁজ খবর।

প্রতিবেশী দেশ কলকাতাতে মহানায়ক উত্তম কুমারকে ঘিরে কতো আয়োজন করা হয়। স্মরণ করা হয় রাষ্ট্রীয়ভাবে। সেখানে হাজির হতে দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকেও। কিন্তু আমাদের এই মহানায়ককে ঘিরে এমন আয়োজন আজকাল চোখেই পড়ে না। রাষ্ট্রীয় পরিচালনার প্রতিষ্ঠান এফডিসিতেও পাওয়া যায়না বুলবুল আহমেদের কোনো চিহ্ণ!

একজন মহানায়কের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলো স্মরণ করতে না পারাটা সত্যি হতাশার। তবে বুলবল আহমেদকে স্মরণ করছে তার অনুরাগীরা। নিজের পরিবারেও স্মরণীয় তিনি বেদনা মিশ্রিত ভালোবাসায়। আজ সকালে বুলবুল আহমেদ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে পথশিশুদের সাথে কেক কেটে জন্মদিন পালন করেন তার মেয়ে ঐন্দ্রিলা আহমেদ।

বুলবুল আহমেদের মেয়ে ঐন্দ্রিলা বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, এমন দিনে আমার এবং আমার মায়ের মন খুব খারাপ থাকে। বাবার অভাবটা খুব বেশি অনুভব করি আমি। সারাক্ষণ শুধু বাবার কথা মনে পড়ে, বাবার সঙ্গে কাটানো সময়গুলোর কথা মনে পড়ে। বাবার জন্মবার্ষিকীতে তেমন কোন আয়োজন নেই। প্রতিবারের মত কিছু ঘরোয়া আয়োজন থাকে। বাবার জন্য দোয়া ও মিলাদ পড়ানো হয়। এবারও তাই থাকছে। আজ সকালে ‘বুলবুল আহমেদ ফাউন্ডেশন’ পথশিশুদের সাথে বাবার জন্মদিনের কেক কেটেছে। আমিও সেখানে ছিলাম। এছাড়া আর কোথাও কোন তেমন আয়োজন দেখছি না বাবাকে নিয়ে। প্রতিবার বিভিন্ন টেলিভিশনে বাবাকে নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও সিনেমা প্রচার করা হয়। এবারও থাকছে কিনাসেটাও বলতে পারছি না।

প্রসঙ্গত, ১৯৪১ সালের আজকের এই দিনে পুরান ঢাকার আগামসি লেনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ঢাকাই সিনেমার এই মহানায়ক। তার আসল নাম তাবারক আহমেদ। বাবা-মা আদর করে বুলবুল বলে ডাকতেন। বুলবুল আহমেদ পড়াশোনা করেছেন ঢাকার কলেজিয়েট স্কুল, নটরডেম কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে কিছুদিন সিলেট এমসি কলেজেও পড়াশোনা করেছেন। পড়াশোনা শেষে তৎকালীন ইউবিএল ব্যাংক টিএসসি শাখার ম্যানেজার হিসেবে চাকরি জীবন শুরু করেন। শেষপর্যন্ত নিজেকে অভিনয়েই জড়িয়ে নেন।

১৯৬৪ সালে আবদুল্লাহ আল মামুনের পরিচালনায় ‘বরফ গলা নদী’ নাটকে প্রথম অভিনয় করেন বুলবুল। এরপর একে একে তিনি প্রায় চার শতাধিক নাটকে অভিনয় করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- মালঞ্চ, ইডিয়েট, মাল্যদান, বড়দিদি, আরেক ফাল্গুন, শেষ বিকেলের মেয়ে। বুলবুল আহমেদের চলচ্চিত্র জীবন শুরু হয় ১৯৭৩ সালে আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমামের (ইউসুফ জহির) ‘ইয়ে করে বিয়ে’ ছবির মাধ্যমে।

বুলবুল আহমেদ ‘মহানায়ক’, ‘সীমানা পেরিয়ে’, ‘সূর্য্য কন্যা’, ‘ধীরে বহে মেঘনা’, ‘জীবন নিয়ে জুয়া’, ‘রূপালী সৈকতে’, ‘বধূ বিদায়’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’, ‘দি ফাদার’ নামে অসংখ্য চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। তবে বুলবুল আহমেদ বাংলা চলচ্চিত্রে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে আছেন ‘রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত’, ‘দেবদাস’ ও ‘মহানায়ক’ ছবি দিয়ে। এই ছবিগুলো তাকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়।

অভিনয়ের বাইরেও তিনি ছিলেন একজন কালজয়ী নির্মাতা। পরিচালক হিসেবে নির্মাণ করে গিয়েছেন ‘ওয়াদা’, ‘মহানায়ক’, ‘ভালো মানুষ’, ‘রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত’, ‘আকর্ষণ’, ‘গরম হাওয়া’, ‘কত যে আপন’ এর মত কালজয়ী ছবি।

অভিনয়ের জন্য বুলবুল আহমেদ চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন। ১৯৭৭ সালে ‘সীমানা পেরিয়ে’, ১৯৭৮ সালে ‘বধু বিদায়’, ১৯৮০ সালে ‘শেষ উত্তর’ ও ‘১৯৮৭ সালে ‘রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত’ ছবির জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে নেন।

বুলবুল আহমেদ বিয়ে করেছিলেন অভিনেত্রী ডেইজি আহমেদকে। এই দম্পতির তিন সন্তান। তারা হলেন, মেয়ে ঐন্দ্রিলা ও তিলোত্তমা এবং ছেলে শুভ।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension