বাংলাদেশ

সারাদেশে এক দাবি, ধর্ষকের ফাঁসি চাই

রূপসী বাংলা নিউজ ডেস্ক: দেশে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। শিশু, বালিকা, তরুণী, নারী এমনকি শতবর্ষী বৃদ্ধাকেও ছাড়ছে না নরপশুরা। এখন অবস্থা এমন যে- স্কুলে-কোচিংয়ে সন্তানকে দিয়ে মা নিরাপদ বোধ করেন না, পাশের বাড়িতে খেলতে গেলেও থাকে দুশ্চিন্তা। এমনকি মক্তব-মাদরাসায় ধর্মীয় শিক্ষা দিতে সন্তানকে পাঠিয়েও শান্তি নেই। স্কুল-কলেজ, মক্তব-মাদরাসায় এখন যৌন নির্যাতন-ধর্ষণ মহামারী আকার ধারণ করেছে। মূলত যৌন-নির্যাতন ও ধর্ষণের কঠোর বিচার না হওয়ায় দিন দিন এ ধরনের অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সবশেষ রাজধানীর ওয়ারিতে শিশু সায়মাকে ধর্ষণ করে হত্যার ঘটনায় সারাদেশের মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। সোস্যাল মিডিয়ায় চলছে আলোচনা-সমালোচনা ও নিন্দার ঝড়। দেশজুড়ে এখন একটাই দাবি বার বার উঠে আসছে আর তা হলো- ধর্ষকের ফাঁসি। বিশেষ করে শিশু ধর্ষণের শাস্তি একমাত্র ফাঁসিই হতে পারে বলে দেশজুড়ে দাবি উঠেছে।

এদিকে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাসে বাংলাদেশে ৩৯৯ জন শিশু ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছে বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন। তাদের এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ধর্ষণের পর একজন ছেলে শিশুসহ মোট ১৬ জন শিশু মারা গেছে। ছয়টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত ৪০৮টি সংবাদ বিশ্লেষণ করে সংস্থাটি এই তথ্য পেয়েছে।

প্রতিবেদনের আরো বলা হয়েছে যে, অন্তত ৪৯টি শিশু (৪৭ জন মেয়েশিশু ও ২ জন ছেলেশিশু) যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। এর আগে ২০১৮ সালে ৩৫৬টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছিল বলে জানিয়েছিল সংস্থাটি। এর মধ্যে মারা গিয়েছিল ২২ জন এবং আহত হয়েছিল ৩৩৪ জন। শিশু ধর্ষণের ঘটনা আংশকাজনকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম এক বিবৃতিতে অভিভাবক, শিশু সংগঠন, মানবাধিকার সংস্থা ও তরুণদের সম্মিলিতভাবে এই অপরাধ ঠেকাতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।

অন্যদিকে রাজধানীর ওয়ারীর বনগ্রামের স্কুলছাত্রী সামিয়া আফরিন সায়মাকে (৭) ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় ‘ধর্ষক’ হারুন অর রশিদকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। হারুনের ফাঁসির দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে সোস্যাল মিডিয়া। সর্বত্র তার ফাঁসির দাবি উঠেছে।

সোনারগাঁ থেকে হারুন অর রশিদকে গ্রেপ্তারের পর রোববার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগে অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আব্দুল বাতেন সংবাদ সম্মেলন করে হত্যার বর্ণনা দিয়েছেন। এর আগে পুলিশের ওয়ারী বিভাগের ডিসি ইফতেখার আহমেদ ‘ধর্ষক’ হারুন অর রশিদকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। গ্রেপ্তার হারুনের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ। ঘটনার পর থেকে সে পলাতক ছিল। মোবাইল ফোনও বন্ধ রাখে হারুন। পরে পুলিশ তার অবস্থান শনাক্ত করে সোনারগাঁ থেকে গ্রেপ্তার করে।

শিশু সামিয়া আফরিন সায়মাকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় নাহিদ বোরহান নামের একজন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ওয়ারীর শিশু সায়মার ধর্ষণ ও হত্যাকারী হারুনুর রশীদ। প্রশাসনকে ধন্যবাদ। এই জানোয়ারের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।

হারুনের গ্রেপ্তার হওয়া ছবিসহ তার পোস্টের নিচে এ কে সাইফুল ইসলাম নামের একজন লিখেছেন, এদের আমাদের কাছে ছেড়ে দেয়া হোক। ওদের মতো পশুদের চামড়া তুলে লবণ এবং লংকা গুঁড়া লাগিয়ে রোদে শুকাতে দিতে হবে। শুকানোর পর আবার লবণ মরিচ দিতে হবে। এভাবে বার বার দিতে হবে। সঙ্গে অই বেহায়া যন্ত্রটাকে কেটে সমান করে দিতে হবে। তা দেখে যদি সুবিধাবাদী, লোভী, বাটপার মানবতার অবতার কোনো কথা বলতে আসে এদেরও একই কাজ করতে হবে। তাহলে দেখবেন সমাজে একটা ধর্ষণ নাই। কোনো মা-বোনকে ভয়ে আতংকিত থাকতে হবে না।

মোহেমা আক্তার নামের একজন লিখেছেন, প্লিজ, ধর্ষণের শান্তি মৃত্যু- ‘দণ্ড’ (দণ্ড) করুন। – প্রধানমন্ত্রী।

শিশু সামিয়া আফরিন সায়মা ছবি পোস্ট করে এস কে লাভলী নামের আরো একজন লিখেছেন, নিচের এই ছবিটা আমাকে খুব কস্ট (কষ্ট) দিচ্ছে, কিছুতেই মন সরাতে পারছিনা….। আমিও এক কন্যা সন্তানের হতভাগ্যো মা… পেটের দায়ে যখন বাসা থেকে বাহির যা-ই… তখন কাজে মন বসাতে খুব কস্ট (কষ্ট) হয়… মন থাকে বাসায় পড়ে, আমার মেয়ে ঠিক আছে তো…? কোনো বিপদ ওকি মারছে না তো…? একটু পর পর কল দিচ্ছি একবার কল রিসিভ না করলে মনের ভয়ে কত কিছুই না ভেবে হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়। যদি কোনো বিপদ হয়ে যায় তাহলে আমি কি করব কিভাবে বাঁচব… আল্লাহর কসম আমি যদি জীবনে একবারও এমন কোন জানোয়ারের দেখা পাই… কচু কাটা করে কাটব, ওই জানোয়ারকে বুঝিয়ে দিব বাকি জানোয়ারদের যে-ই এ-ই মেয়ে মানুষ তোকে দুনিয়াইতে আলো দেখিয়েছে আবার এ-ই মেয়ে মানুষই… কেটে কুত্তারে খাওয়াচ্ছি… হয়তো কুত্তাও ছুঁয়ে দেখবে না ওসব নরপিশাচের মাংস।

প্রীতি ওরিসা নামের একজন লিখেছেন, সরকার ধর্ষকের শাস্তিজনিত আইন মা-বাবার হাতে তুলে দিক। এতো এতো ট্যাক্স সরকারকে না দিয়ে সেই টাকা দিয়ে জনগণ প্রাইভেট গোয়েন্দা সেবা নিতে শুরু করুক। হে রাষ্ট্র এবার তবে বিশ্রাম নাও। আরআইপি।

অলিউল ইসলাম নামে একজন লিখেছেন, ধর্ষণ ও বলাৎকারের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হোক।

অন্যদিকে গ্রেপ্তারের পর ‘ধর্ষক’ হারুন অর রশিদের দেয়া তথ্যমতে ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়েছেন অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আব্দুল বাতেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সাড়ে ৬টার মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। ওই দিন মাকে বলে শিশু সায়মা আট তলায় যায়। সেখানে ফ্ল্যাট মালিক পারভেজের একটি বাচ্চা আছে তার সঙ্গে খেলা করতে। সেখানে গেলে পারভেজের স্ত্রী জানায় তার মেয়ে ঘুমাচ্ছে। সেখান থেকে বাসায় ফেরার উদ্দেশে লিফটে ওঠে সায়মা। লিফটেই সায়মার সঙ্গে দেখা হয় পারভেজের খালাতো ভাই হারুনের। হারুন সায়মাকে লিফট থেকে ছাদ দেখানোর প্রলোভন দেখিয়ে ছাদে নিয়ে যায়।

তিনি আরো বলেন, সেখানে অত্যন্ত পাশবিকভাবে সায়মাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। সায়মা চিৎকার করলে মুখ চেপে ধর্ষণ করে। সায়মাকে নিস্তেজ দেখে গলায় রশি লাগিয়ে টেনে নিয়ে যায় রান্নাঘরে। সেখানে সিঙ্কের নিচে রাখে। এরপর পারভেজের বাসায় না ফিরে গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার তিতাস থানার ডাবরডাঙ্গা এলাকায় পালিয়ে যায় হারুন।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension