আন্তর্জাতিকএশিয়া

স্বাধীনতা চাইলে যুদ্ধ, তাইওয়ানকে হুমকি চীনের

তাইওয়ান প্রশ্নে দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে আছে চীন। তাইওয়ানকে পেইচিং সরকার নিজেদের অঞ্চল বলে দাবি করছে বহু বছর।

কিন্তু তাইওয়ানের স্থানীয় রাজনীতিতে নিজেদের স্বাধীন হিসেবে দেখার প্রবণতাও অনেক দিনের। স্বাধীনতার দাবি ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সূত্র ধরে তাইওয়ান ইস্যুতে বরাবরই যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের স্বার্থ দেখে আসছে।

ফলে একাধিকবার দক্ষিণ চীন সাগরে তাইওয়ান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র-চীন মুখোমুখি হয়েছে।

তাইওয়ার ইস্যুতে সম্প্রতি চীন সাগরে নৌবহর পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। স্বাধীনতা চাইলে যুদ্ধের মুখোমুখি হওয়ার কড়া বার্তা দিয়ে তাইওয়ানকে হুমকি দিয়েছে চীন। গত এক সপ্তাহ ধরে তাইওয়ানের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে চীনের বোমারু ও জেট বিমানকে টহল দিতে দেখা যায়। এরপরই যুক্তরাষ্ট্রকে এ বিষয়ে পেইচিংয়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করার অনুরোধ করে তাইওয়ান সরকার। আর তাতেই রুষ্ট হয়ে এমন হুমকি দিল চীন।

গত বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে চীনের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়। তাতে পেইচিংয়ের তরফ থেকে হুমকি দিয়ে তাইওয়ানকে জানানো হয়, স্বাধীনতা মানে যুদ্ধ। নিজেদের ভূখণ্ডের বিষয়ে বিদেশি হস্তক্ষেপ কোনওভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। চীনা সৈন্যরা এ ধরনের ঘটনার যোগ্য জবাব দেওয়ার জন্য সবসময় প্রস্তুত আছে।

এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র উ কিয়ান বলেন, ‘তাইওয়ানের অবৈধভাবে নির্বাচিত হওয়া সরকার ওই দ্বীপরাষ্ট্রকে স্বাধীন ঘোষণা করে এই এলাকায় অশান্তি তৈরির চেষ্টা করছে। কিন্তু চীনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে পরিচিত ওই এলাকাকে কখনই অন্যের হাতে তুলে দেওয়া সম্ভব নয়। চীন সরকার এ প্রচেষ্টা আটকানোর জন্য সবরকম চেষ্টা করবে। সে কারণে দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য তাইওয়ানের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে ওই এলাকায় তৎপর হয়ে উঠেছে পিপলস লিবারেশন আর্মি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিদেশি মদদে তাইওয়ানের শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্টের কোনো চেষ্টাই সফল হতে দেওয়া হবে না। যেসব বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি স্বাধীনতার অর্জনের নামে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে তাদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে। আগুন নিয়ে খেলতে গেলে নিজেদেরই পুড়তে হবে।’

এদিকে চীনের এ হুমকির কড়া জবাব দিয়েছে তাইওয়ানও। তাদের তরফ থেকে স্পষ্ট করে জানানো হয়, ‘চীনের উচিত এ বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া। আর এ নিয়ে চিন্তার সময় তারা যেন দ্বীপরাষ্ট্রের মানুষের আবেগকে কম শক্তিশালী না মনে করে। নিজেদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য যেকোনো লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে তাইওয়ানের নাগরিকরা।’

চীনের হুমকির পর যুক্তরাষ্ট্র তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানায়। চীনের হুমকিকে ওয়াশিংটন প্রশাসন ‘দুর্ভাগ্যজনক’ হিসেবে আখ্যা দেয়। পেন্টাগনের তথ্য সচিব জন কিরবি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এমন মন্তব্য আশা করিনি। তাইওয়ান নিয়ে যুদ্ধ বাধার মতো কোনও পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার কারণ আমরা দেখি না।’ যুক্তরাষ্ট্রের জো বাইডেন প্রশাসন শুরু থেকেই তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের ওপর চাপ প্রয়োগের নীতি গ্রহণ করেছে।

বিবিসির বিশ্লেষক রবিন ব্র্যান্টের মতে, চীন তাদের সীমান্তে সম্মুখ সমরে গিয়েছে এমন ইতিহাস কম। কিন্তু একমাত্র ব্যতিক্রম তাইওয়ানের ক্ষেত্রে। আজকের এই আধুনিক তাইওয়ান গৃহযুদ্ধের ফল। শি চিনপিংয়ের নেতৃত্বে চীন বারবার বলে আসছে যে, তারা প্রয়োজনে সামরিক শক্তি ব্যবহার করবে তবু তাইওয়ানের স্বাধীনতার দাবিকে গ্রাহ্য করবে না।❐

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension