প্রধান খবরবাংলাদেশ

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নির্দেশ মেনে কাজ করেছে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর নিয়ে অনেকে অনেক কথা বললেও একটা কথা স্বীকার করতে হবে, তাদের তিনি যখন যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন, তারা সেভাবেই কাজ করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা সেভাবে কাজ করেছে বলেই আমরা এই করোনাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি।’

গতকাল শনিবার প্রধানমন্ত্রী গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভার প্রারম্ভিক বক্তব্যে এসব কথা বলেন। তার সরকার করোনাভাইরাস মোকাবিলার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখার জন্য প্রাণপণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জনগণকে এটাই বলতে চাই, জনগণের সংগঠন হলো আওয়ামী লীগ এবং এই আওয়ামী লীগ জনগণের পাশে আছে। যেটা এবার দুর্যোগ, করোনা মহামারীর সময়েও প্রমাণ হয়েছে। কারণ, জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসই আমাদের একমাত্র সম্বল, সেটাই আমাদের শক্তি।’ ভূমিহীন এবং নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের সরকার যাতে সহায়তা করতে পারে সে জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মুজিববর্ষে আমাদের ঘোষণা প্রত্যেক গৃহহীনকে আমরা ঘর করে দেব।’

তিনি বলেন, একদিকে করোনা, তার মধ্যে এলো ঘূর্ণিঝড় (আম্পান) এবং বন্যা, সব মিলিয়ে সারা দেশের মানুষ একটা দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে ছিল। কিন্তু সে সময় আমাদের দল এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতি এলাকায় জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে মানুষের পাশে ছিল। যারা হাত পাততে পারেন না, এমন সব মানুষের কাছে এসব নেতাকর্মী রিলিফ পৌঁছে দিয়েছে, চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দেওয়া, এমনকি মৃতদেহ সৎকারেও অংশ নিয়েছে।

এসব খবর গণমাধ্যমগুলোয় না এলেও তার কাছে সেই তথ্য রয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা এ জন্য দল এবং সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মী এবং প্রশাসনে থাকা ব্যক্তিসহ সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও ভিডিপিসহ প্রত্যেকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করায় সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। সবাই একযোগে এভাবে আন্তকিতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনকে তিনি নজিরবিহীন বলেও উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় বিএনপির করা ঢালাও সমালোচনার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, অনেকেরই আমরা ভাষণ শুনি। অনেকে অনেক কথা বলে বা যেগুলো আমরা করে ফেলি বা নির্দেশনা দিই বা পদক্ষেপ নিই, তার ওপর আবার অনেককেই উপদেশ দিতেও দেখেছি। তার সরকারের করে দেওয়া স্বাধীন মতপ্রকাশের অপব্যবহার করে অনেকেই পত্রপত্রিকায় এবং ‘মিডিয়া টক শো’তে সরকারের বিষোদ্গার করে (অনবরত) গেলেও মানুষের পাশে দাঁড়ায় নি। বলেন প্রধানমন্ত্রী।

দেশের বিভিন্ন এনজিওর করোনাকালে কোনও ভূমিকা না থাকার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশে তো গরিব মানুষকে সেবা করার অনেক রকম প্রতিষ্ঠান, অনেক রকম কার্যক্রম আমরা দেখি। কিন্তু এই করোনাকালে তাদের কোনও কার্যক্রম আমরা দেখি নি। এটা হলো বাস্তবতা। তখন সবাই ঘরে, মানুষের পাশে আর কেউ নেই। তবে, মানুষের পাশে আওয়ামী লীগ থেকেছে, কারণ এটা জনগণের সংগঠন।

করোনার কারণে বিশ্ব অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়লেও দেশে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে তার সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপের উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ৫ লাখ কোটি টাকার ওপরে বাজেট দিয়েছি, যেটা একটা কঠিন কাজ ছিল। আমরা বলেছি খরচ করব সীমিত আকারে, যেটুকু প্রয়োজন সেটুকু। কিন্তু অর্থনীতি গতিশীল রাখার জন্য বাজেট আমরা ঠিক রেখেছি।

সংকট মোকাবিলায় সর্বস্তরের মানুষের জন্য সরকার প্রদত্ত প্রণোদনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাচাই-বাছাই করে তালিকা নিয়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে কৃষক, শ্রমিক, গার্মেন্টস শ্রমিক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষের কাছে নগদ অর্থ এবং সামগ্রী আমরা পৌঁছে দিয়েছি। কারণ সে সময় দুর্গত মেহনতি মানুষের নগদ টাকার যেমন দরকার ছিল, তেমনি বিভিন্ন সামগ্রী এবং খাদ্যেরও প্রয়োজন ছিল।

শেখ হাসিনা বলেন, কভিড-১৯-এর শুরুতেই আমি নির্দেশ দিয়েছিলাম খাদ্য উৎপাদন আমাদের ঠিক রাখতে হবে। কারণ করোনার জন্য বিশ^ব্যাপী মন্দা আসবে আর মন্দার সঙ্গে কিন্তু খাদ্যাভাব ও দুর্ভিক্ষও দেখা দিতে পারে। কাজেই কৃষক যেন মাঠে থাকে, উৎপাদন করতে পারে এবং বাংলাদেশে যেন সে পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়। আল্লাহর রহমতে সে অবস্থার সৃষ্টি বাংলাদেশে হয় নি।

আমলাতান্ত্রিত জটিলতায় দুর্যোগকালীন যেন তার নির্দেশ বাস্তবায়নে বিলম্ব না হয় সে জন্য সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, অর্থ (মন্ত্রণালয়), জনপ্রশাসন থেকে শুরু করে যাদের দরকার, তাদের একই টেবিলে বসিয়ে একসঙ্গে সিদ্ধান্ত দিয়ে, একসঙ্গে ফাইল করে অন দ্য স্পট সই করে নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি। ক্ষেত্রবিশেষে কিছু কিছু ফর্মালিটিজ শিথিল করেও প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিছু ফর্মালিটিজ আমরা শিথিল করেছি। হ্যাঁ, সেগুলো পরে করব, কিন্তু আগে আমার লোক নিয়োগ দিতে হবে।

করোনাকালীন বিভিন্ন দেশে লকডাউনের সময় প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য বিদেশে আর্থিক সাহায্য পাঠানোর পাশাপাশি বিশেষ বিমান পাঠিয়ে বিভিন্ন দেশে থাকা তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার তথ্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মানুষকে মানুষ হিসেবেই দেখি। তারা তো আমাদের দেশের নাগরিক। কাজেই তাদের ভালো-মন্দ আমাদেরই দেখতে হবে।

করোনাকালীন বিভিন্ন স্থানে সশরীরে যাওয়া না গেলেও তার সরকারের করে দেওয়া ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা নিয়ে দলের সাংগঠনিক কর্মকান্ড বাড়ানোর ওপরও গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাংগঠনিক শক্তি হচ্ছে সবচেয়ে বড়। তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক শক্তি রয়েছে, সেটা করোনা মোকাবিলায় যখন মাঠে নেমেছে, তখনই প্রমাণিত হয়েছে। করোনাকালীন দলের ৫২২ জন নেতাকর্মী মৃত্যুবরণ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এত বড় আত্মত্যাগ আর কোনও দল কিন্তু করে নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিভিন্ন জায়গায় সম্মেলন হলেও হয়তো করোনার কারণে কমিটি আমরা করতে পারি নি। খোঁজ নিতে কিংবা যেতে পারি নি। কাজেই আমার মনে হয় এখন একটা সময়, সেসব কাজ আমরা করতে পারব।❐

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension