বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

করোনা পরিস্থিতিতে বেড়েছে ভিডিও কলিং সফটওয়্যারের ব্যবহার

করোনাভাইরাসের সংকটকালে সবকিছু সচল রাখতে বিদেশের মতো দেশেও চালু হয়েছে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ বা ঘরে বসে কাজ করার নিয়ম। কিন্তু ঘরে বসে কাজ করা এবং তা ঠিকভাবে হচ্ছে কিনা মনিটর করা, কর্মীরা সময়মতো কাজ শুরু করলো কিনা ইত্যাদি যথাযথভাবে দেখার প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে ওয়ান টু ওয়ান যোগাযোগ খুব বেশি কার্যকর হয় না বলে প্রোগ্রামার বা প্রযুক্তিকর্মীরা খুঁজে বের করেছেন জনপ্রিয় সব ভিডিও কলিং সফটওয়্যার। এরমধ্যে কয়েকটি তো জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছে।

দেশে এই সময়ে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে জুম, মাইক্রোসফট টিমস, গুগল মিট, গুগল ক্লাসরুম, হাউজ পার্টি, ওয়েবেক্স ইত্যাদি অ্যাপভিত্তিক এই ভিডিও কলিং সফটওয়্যারগুলো। দেশের ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান আইএসপিএবি ও তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রেনিউর ল্যাব সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র আরও জানায়, শিগগিরই আসছে ফেসবুকের মেসেঞ্জার রুম, ভারতের জিও’র জিও মিট নামের অ্যাপ। এগুলো একটা আরেকটাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আসছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘করোনা সংকটে অনেক প্রযুক্তি এগিয়ে গেছে। আবার কিছু প্রযুক্তি পিছিয়েও পড়েছে। যেমন জুম এগিয়েছে অনেক। এই সময়ে কোন প্রযুক্তি এগিয়ে গেলো, কোন পণ্য পিছিয়ে পড়লো—সেগুলোও আমাদের খোঁজ রাখতে হবে। কারণ, যেসব প্রযুক্তি হয়তো আরও অনেক পরে আসতো, কিন্তু করোনার কারণে আগেই চলে এসেছে।’ তিনি মনে করেন, যে প্রযুক্তি চলে এসেছে তাকে ধরে রেখে বর্তমানের প্রযুক্তি নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। তিনি জানান, আইসিটি বিভাগের সব ধরনের সংবাদ সম্মেলন, মিটিং, অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মিটিং তিনি জুম ব্যবহার করেই করছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ সময়ে অনলাইনে পড়াশোনাও একটা নতুন ট্রেন্ড সেট করেছে। অন্যান্য সময়ে অনলাইনে পড়াশোনার চল খুব একটা দেখা যায়নি। প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, ইংরেজি মাধ্যম ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাস, পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মোবাইল অপারেটরগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ প্যাকেজ অফার করছে।

দেশে এই করোনা সংকটে জনপ্রিয়তার শীর্ষে চলে এসেছে জুম ভিডিও কমিউনিকেশনস ইনক’র জুম ক্লাউড মিটিংস। এটির রয়েছে মিটিংস, ভিডিও ওয়েবনিয়ার, কনফারেন্স রুম, ফোন সিস্টেম ও চ্যাট। গার্টনার, ট্রাস্ট রেডিয়াস ও জি ক্রাউন এরই মধ্যে জুমকে এক নম্বর স্থান দিয়েছে (গ্রাহক রিভিউয়ের ভিত্তিতে)। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশেও এটি শীর্ষে। মেসেঞ্জার গ্রুপ ভিডিও চ্যাটে আট জনকে যুক্ত করার সুযোগ দিয়েছে, হোয়াটসঅ্যাপ আগে ছয় জনকে দিলেও বর্তমানে আট জনকে গ্রুপ ভিডিও কল করতে দিচ্ছে। ফেসবুক নিয়ে আসছে মেসেঞ্জার রুম। এতে একসঙ্গে ৫০ জন ভিডিও কলে যুক্ত হতে পারবেন।

এ বিষয়ে আইএসপিএবি’র সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, ‘আমরা আমাদের নেটওয়ার্কে দেখতে পাচ্ছি জুম শীর্ষে রয়েছে। এরপরে রয়েছে (ক্রমিক অনুসারে নয়) মাইক্রোসফটের টিমস, গুগল মিট, গুগল ক্লাসরুম, মেসেঞ্জার, সিসকোর ওয়েবেক্স ইত্যাদি। এসবের মধ্যে কিছু কিছু অ্যাপস একক ও গ্রুপ টিউশনিতে ব্যবহার হচ্ছে, যা ইতিবাচক। অনলাইন ক্লাস বা পড়াশোনায় অ্যাপস কাজে লাগছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেশের বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো সুরক্ষিত নিরাপত্তার জন্য তাদের মিটিংয়ে ব্যবহার করছে সিসকোর ওয়েবেক্স।’ বিশ্বের করোনা ভাইরাসজনিত সংকট তৈরি না হলে এসব প্রযুক্তির ব্যবহার সীমিত পরিসরেই থাকতো বলে তিনি মনে করেন।

তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রেনিউর ল্যাবের প্রধান নির্বাহী আরিফ নিজামি বলেন, ‘জুমের বাজার মূল্য এই সময়ে অনেক বেড়েছে। এটা জুমের জনপ্রিয়তার কারণেই হয়েছে।’ তিনি জানান, ফেসবুক ঘোষণা দিয়েছে, খুব শিগগিরই তারা মেসেঞ্জার রুম নিয়ে আসছে। ভারতের জিও সবার জন্য চালু করতে যাচ্ছে জিও মিট নামের অ্যাপ। তিনি জানালেন, দেশে হাউজ পার্টি নামের একটি ভিডিও কলিং সফটওয়্যার বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। এটিতে আট জন যুক্ত হওয়া যায়। সাধারণত স্টার্টআপ, তরুণ শ্রেণি, মিলেনিয়ামসদের (২০০০ সালের পরে জন্ম যাদের) পছন্দের তালিকার শীর্ষে রয়েছে সফটওয়্যারটি।◉

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension