অসংক্রামক রোগ হ্রাসে হেঁটে যাতায়াতের নিরাপদ পরিবেশ তৈরির আহ্বান
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট আয়োজিত কর্মশালায় বক্তারা বলেছেন, শারীরিক পরিশ্রমের পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকায় শিশু-কিশোরদের মধ্যে অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি ক্রমেই বেড়ে চলেছে। বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াতের মাধ্যমে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে ইতিবাচক ভূমিকা রাখা সম্ভব। শিক্ষার্থীরা নিরাপদে হেঁটে যাতায়াতে সক্ষম হলে সকল বয়স ও সামর্থ্যরে জনগণ উপকৃত হবে। একটি অন্তর্ভূক্তিমূলক শহর গড়ে তুলতে হেঁটে যাতায়াতের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতের বিকল্প নেই।
আজ বৃহস্পতিবার বেঙ্গলী মিডিয়াম হাই স্কুলের অডিটোরিয়ামে ‘অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াত’ শীর্ষক ওই কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা প্রমা সাহা।
তিনি বলেন, ঢাকা শহরে পর্যাপ্ত মাঠ-পার্কের অভাবে শিশুরা প্রয়োজনীয় শারীরিক পরিশ্রমের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়, যা ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে এবং শিশুদের মধ্যে নেতিবাচক মানসিকতা তৈরি হয়। বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াতের মাধ্যমে সহজেই শিশুদের শারীরিক পরিশ্রমের চাহিদা পূরণ সম্ভব। হেঁটে যাতায়াতের ফলে গাড়ির সংখ্যা কমে দুর্ঘটনা ও যানজট হ্রাস এবং যাতায়াত খরচ সাশ্রয় হয়।
গাড়ির ওপর নির্ভরশীলতা কমলে বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে।
কর্মশালায় ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুল এর প্রতিষ্ঠাতা এম এ মান্নান মনির। তিনি বলেন, বর্তমানে শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের সুযোগ নেই বললেই চলে। খেলাধূলার সুযোগের অভাবে তারা মোবাইলসহ বিভিন্ন ডিভাইসে আসক্ত হয়ে পড়ছে।
হেঁটে বিদ্যালয়ে যাতায়াতের মাধ্যমে শারীরিক কার্যক্রম ও সামাজিকীকরণের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। একটি শহর যদি শিশুদের হাঁটার উপযোগী হয়, তাহলে সকল বয়স ও সামর্থ্যরে মানুষ উপকারভোগী হবেন।
ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের সিনিয়র প্রকল্প ব্যবস্থাপক জিয়াউর রহমান বলেন, অসংক্রামক রোগ হ্রাসে শিশুদের বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াতের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় ২০১৪ সাল থেকে ‘হেঁটে যাই বিদ্যালয়, দেহ-মন-সুস্থ রয়’ শীর্ষক একটি কর্মসূচি পরিচালনা করছি। ব্যক্তিগত গাড়ির পরিবর্তে হেঁটে যাতায়াত করলে শরীর ও মন ভালো রাখার পাশাপাশি দূষণ, দুর্ঘটনা, যানজট, জ্বালানি অপচয়সহ বিভিন্ন সমস্যা হ্রাসে অবদান রাখা সম্ভব।
সভাপতির বক্তব্যে বেঙ্গলী মিডিয়াম হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নারায়ণ চন্দ্র দাস বলেন, একজন মানুষকে সুস্থ থাকতে হলে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটতে হয়।
হাঁটা সকলের প্রাথমিক যাতায়াত মাধ্যম। কাজেই হাঁটার পরিবেশ উন্নয়নে কোনো বিকল্প নেই। এই বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী হেঁটে যাতায়াত করে। হেঁটে যাতায়াতের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত হলে তারা সকলেই উপকৃত হবে।
কর্মশালায় শিক্ষার্থীরা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে স্কুলে হেঁটে যাতায়াতের ক্ষেত্রে তাদের বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধান তুলে ধরে। হেঁটে যাতায়াতের সমস্যা হিসেবে শিক্ষার্থীরা সড়কে নির্মাণকাজের উপকরণ ফেলে রাখা, ফুটপাতে মোটর বাইক চলাচল ও অবৈধ পার্কিং, আবর্জনা, ব্যক্তিগত গাড়ির আধিক্য, অনিরাপত রাস্তা পারাপার, ইভটিজিং ইত্যাদিকে তুলে ধরেন। তারনা’র সমাধান হিসেবে ফুটপাতে বাইক চলাচল আইনের মাধ্যমে নিষিদ্ধকরণ, প্রতিবন্ধকতাহীন ফুটপাত নিশ্চিত করণ, জেব্রা ক্রসিং প্রদান, ইভটিজিং বন্ধে কমিউনিটি পুলিশের সহায়তা নিশ্চিতকরণ ইত্যাদি সুপারিশ করেন।