বাংলাদেশ

আওয়ামী লীগ পিছু হটে না: শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার দল কখনো পিছু হটে না। বরং বিএনপির নেতারা মুচলেকা দিয়ে বিদেশে পালিয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, বিএনপি-জামায়াত খুনের রাজনীতি করেন মানুষের ভালো তারা চায় না।

রোববার রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে আওয়ামী লীগের জনসমাবেশে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, জনগণ নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই দেশ স্বাধীন হয়েছে। জিয়াউর রহমান মেজর থেকে মেজর জেনারেল হয়েছে। খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্যে কাজ করে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে স্লোগানে-স্লোগানে মুখর হয়ে উঠে পুরো রাজশাহী। স্লোগানে প্রাধান্য পায় আওয়ামী লীগ সরকারের নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও নির্বাচনী বার্তা। এছাড়া মাদরাসা মাঠে আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকার আদলে প্রস্তুত করা হয় মঞ্চ। পোস্টার-প্ল্যাকার্ডে সাজানো হয় সভাস্থল। বর্ণিল সাজে সাজানো হয় নগরীকে। ব্যানার, ফেস্টুন ও তোরণে ছেয়ে যায় গোটা শহর। শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা, পার্ক, স্থাপনা, ভবন ও দপ্তরগুলোকে সাজানো হয় বিশেষভাবে।

এই জনসভায় অংশ নিতে সকাল থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে মাদরাসা মাঠে জড়ো হয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। দুপুর ২টার আগেই বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী মাদরাসা মাঠ ও আশপাশের সড়কগুলোতে জড়ো হন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে জনগণ শান্তি পায়। বিএনপি জামাত সরকার মানুষ খুনের রাজনীতি করে। এই রাজশাহীতে তারা অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছে। পুলিশকে পিটিয়েছে। তারা বাংলাদেশের মানুষের কোনো ভাল সহ্য করতে পারে না। এটাই তাদের কাজ। জনগণের ভোট চুরি করেছে। রাজশাহীতে বাংলা ভাইয়ের নেতৃত্বে অস্ত্র হাতে নিয়ে মিছিল হয়েছে, পুলিশ তাদের পাহারা দিয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, তারা (বিএনপি) আমাদের নোটিশ দেয়, পালাবার সময় পাবে না। আওয়ামী লীগ কখনো পালায় না। পিছু হটে না। তারেক জিয়া মুচলেকা দিয়ে দেশ থেকে পালিয়ে গেছে, দুর্নীতি করে, তাদের পাচারকৃত ৪০ কোটি টাকা দেশে ফেরত এনেছি।

সরকারপ্রধান বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। বিদেশে থাকায় আমরা দুই বোন বেঁচে যাই। আমি জিয়াউর রহমানের ষড়যন্ত্র রুখে শুধুমাত্র দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নের লক্ষ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশে আসি। এই বাংলার মানুষের কথা ভেবেই দেশে এসেছি। পালাতে নয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার অনুপস্থিতিতে আমাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি বানানো হয়। আমি আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমি এমন একটি দেশে ফিরে আসি, যেখানে আমার কোনো বিচার চাওয়ার অধিকার ছিল না। জাতির পিতার খুনিদেরকে ইনডেমনিটি দিয়ে বিচারের হাত থেকে রেহাই দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। সে অবস্থায় আমি দেশে ফিরে আসি শুধু বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্য।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, রাজশাহী সারাজীবন অবহেলার ছিল। আপনারা এখানে নৌকায় ভোট দিয়েছেন। আমরা উন্নয়ন করেছি। রাজশাহীতে ১০ হাজার ৬৬০ কোটি টাকার উন্নয়ন করা হয়েছে। রাজশাহীতে ৪ হাজার কোটি টাকার কাজ চলছে। আজ যে কাজগুলো উদ্বোধন করা হলো এগুলো রাজশাহীবাসীকে আমার উপহার।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালের আগে জিয়া, এরশাদ বা খালেদা কেউই দেশের জন্য কাজ করেনি। এই রাজশাহী সবসময় অবহেলিত ছিল। ২০০১ সালের কথা চিন্তা করেন। বিএনপি জামাত জোট শুধু খুন, ধর্ষণ, রাহাজানি, লুটপাট করতো। নৌকায় ভোট দেয়ার কারণে একটি মেয়েকে নির্মমভাবে ধর্ষণ করে। আপনাদের কিসের এত রাগ? সেসময় বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন না করলে খালেদা কি প্রধানমন্ত্রী হতে পারত? তাহলে মানুষ নৌকায় ভোট দিলে আপনাদের এত রাগ কেন?

শেখ হাসিনা বলেন, এই রাজশাহীতে পদ্মার ভাঙন ঠেকাতে আমরা টি-বাঁধ করেছি। ২০০৯ সাল থেকে এই ১৪ বছর থেকে ৬ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকার উন্নয়ন করেছি এই রাজশাহী জেলা ও মহানগরে। এবারও অনেকগুলো উন্নয়ন প্রকল্প আপনাদের উপহার দিয়ে গেলাম।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার মানুষের জন্য কাজ করে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও বৈশ্বিক মহামারীর কারণে বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি হলেও আমরা থেমে থাকিনি। সাধারণ মানুষের যেন কষ্ট না হয় বেশি টাকায় বিদেশ থেকে খাদ্য কিনে মানুষের হাতে কম টাকায় পৌঁছে দিয়েছি। আমরা মানুষের জন্য কাজ করি। আর বিএনপি শুধু অগ্রিসন্ত্রাস করে মানুষ হত্যা করে। আপনারাই চিন্তা করেন বিএনপি-জামায়াত কীভাবে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারে?’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। আর তারা সেই ডিজিটাল প্লাটফরমে মানুষকে উসকানি দেয়। তারা শুধু মানুষকে হত্যা করতে পারে। তারা মানুষের উন্নতি সহ্য করতে পারে না।

আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট চেয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। সামনে আরও উন্নত করব। তাই নৌকায় ভোট দিয়ে আমাদের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যহত রাখুন। নৌকায় ভোট দিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত করুন।

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন, তথ্য ও প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, রাজশাহী-৫ আসনের সংসদ সদস্য মনসুর রহমান, রাজশাহী-৬ আসনের সংসদ সদস্য পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, রাজশাহী সদরের সংসদ সদস্য ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা, রাজশাহী-৩ আসনের আয়েন উদ্দীন, রাজশাহী-৪ আসনের এনামুল হক, রাজশাহী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মীর ইকবাল।

এছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন সভামঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension