মুক্তমত

আসন্ন বাজেট ও নারীর ক্ষমতায়ন

ড. সুলতান মাহমুদ রানা


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময়ই নারীর ক্ষমতায়নে বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে বিশেষ মনোযোগ দিয়েছেন। বিগত ২০২২-২৩ অর্থবছরের নারী উন্নয়নের জন্য দুই লাখ ২৯ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল, যা মোট বাজেটের ৩৩.৮৪ শতাংশ এবং জিডিপির ৫.১৬ শতাংশ। এর আগের অর্থবছরের চেয়ে এই বরাদ্দ ৮৯৭ কোটি টাকা বেশি। প্রাসঙ্গিকভাবে বলে রাখা ভালো, ২০০৯-১০ অর্থবছরে নারী উন্নয়নে বরাদ্দ ছিল ২৭ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা। শেখ হাসিনার সদিচ্ছায়ই নারীর ক্ষমতায়নে এমন ক্রমাগতভাবে বাজেট বৃদ্ধির বিষয়টি গোটা জাতির নারী উন্নয়নের অন্যতম নির্দেশক হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সরকার নারীর যথার্থ মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় অর্থনৈতিক, সামাজিক, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে নারীশিক্ষার বিস্তার, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ সব ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধে ব্যাপক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।

শেখ হাসিনার মতো সৎ-সাহসী এবং দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই আজ বিশ্বের বুকে নারীর ক্ষমতায়নে রোল মডেল হতে পেরেছে বাংলাদেশ। উল্লেখ্য, বিশ্বরাজনীতিতে নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার অবস্থান ও ভূমিকা অতুলনীয়। শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হন এবং ২০০১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন, তিনি আবার ২০০৮ সালে ক্ষমতায় ফিরে আসেন। ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮-এ অনুষ্ঠিত একটি জাতীয় নির্বাচনে তাঁর দল সংসদে সর্বাধিক আসন লাভ করে। উইকিলিকসের সাম্প্রতিক সময়ের জরিপ অনুসারে শেখ হাসিনা নারীদের পুনরুত্থানের আইকন এবং বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে দায়িত্ব পালনকারী বিশিষ্ট নারী নেতা। ভারতের ইন্দিরা গান্ধী, ব্রিটেনের মার্গারেট থ্যাচার এবং শ্রী চন্দিকা কুমারাতুঙ্গাসহ খ্যাতিমান নারী সরকারপ্রধানদের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ায় শেখ হাসিনার নাম বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের জন্য দায়িত্ব পালনকারী বিশিষ্ট নারী নেত্রীর তালিকায় স্থান পেয়েছে।

বর্তমানে বাংলাদেশের নেতৃত্ব বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব এখন প্রশংসার মুখে। গত ২৪ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর তাঁর অর্জনে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন ও সরকারপ্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাফল্যগাথার প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন বিশ্বের প্রভাবশালী দেশের সরকারপ্রধান এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাপ্রধানরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ম্যাজিক্যাল নেতৃত্বে বাংলাদেশ যে বিশ্বে অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় অবস্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে, সেই কথাগুলোও বিশ্বনেতারা স্মরণ করেছেন অকপটে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে একজন সফল অর্থনৈতিক নেতা হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, ‘আপনি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি আপনাকে অনেক বছর ধরে অনুসরণ করছি। আপনি একজন সফল অর্থনৈতিক নেতা।’

বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেছেন, সব বাধা-বিপত্তি মোকাবেলা করে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো নেতৃত্ব প্রয়োজন। ক্রিস্টালিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ বিশ্বে একটি রোল মডেল। শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে দেশটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন অর্জন করেছে।’

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস এবং বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও করপোরেট সেক্রেটারি মার্সি টেমবন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নকেও অনুকরণীয় বলে অভিবাদন জানিয়েছেন তাঁরা। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস তাঁর টুইটে শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রদর্শনীর উদ্বোধনের ছবি দিয়ে লিখেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ও বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের অংশীদারির ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করতে পেরে আনন্দিত। দারিদ্র্য হ্রাস, নারীর ক্ষমতায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে বাংলাদেশের উদ্ভাবনী পদ্ধতি থেকে অনেক দেশ শিক্ষা নিতে পারে।’

তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন সাফল্য থেকে অনেক দেশ শিক্ষা নিতে পারে। রেকর্ড সময়ের মধ্যে দারিদ্র্য হ্রাস, নারীর ক্ষমতায়ন, দেশব্যাপী বিদ্যুতায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তার উদ্ভাবনী পদ্ধতির জন্য স্বতন্ত্র।

শেখ হাসিনা ম্যাজিকেই গত এক যুগে বদলে গেছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। দারিদ্র্য বিমোচন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয়, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হ্রাসসহ বেশ কিছু সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি বিশ্বনেতৃত্বকে চমকে দিয়েছে। স্বাধীনতার ৫২ বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, যখনই আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার নেতৃত্ব দিয়েছে, তখনই বাংলাদেশের অগ্রগতির চিত্রটি ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। আর দেশরত্ন শেখ হাসিনার বিগত প্রায় সাড়ে ১৪ বছরের ধারাবাহিক নেতৃত্বের কারণে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেছে।

বর্তমান সরকারের অন্যতম লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়া। এ লক্ষ্য পূরণের জন্য বেশ কিছু খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে সরকার। এর মধ্যে পোশাক খাতের বিশ্বব্যাপী বাজার সৃষ্টি করা, জাহাজ নির্মাণ, ওষুধ ও ওষুধের উপাদান, তথ্য-প্রযুক্তি, হালকা প্রকৌশল ও যানবাহন তৈরি, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, কৃষি ও কৃষিপণ্য আধুনিকীকরণসহ ৩২ খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে সরকার। পাশাপাশি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছে এই সরকার।

‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম’-এর পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৪তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। বিখ্যাত সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান ‘গোল্ডম্যান স্যাকস’ ১১টি উদীয়মান দেশের তালিকায় বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবল-২০২১’ রিপোর্ট অনুসারে ২০৩৫ সাল নাগাদ ১৯৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের স্থান হবে ২৫তম।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ গত কয়েক বছরে আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি অর্জন করেছে। শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্ব, সুদূরপ্রসারী চিন্তা ও প্রজ্ঞার ফসল নারীর ক্ষমতায়ন ও অগ্রগতির জন্যই অর্থনৈতিক, সামাজিক, প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অভাবনীয় আর্থিক সমৃদ্ধি, উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে। তাই বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের নারীর সাফল্য আজ অনুকরণীয় ও অনুসরণীয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়াদে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছে।

লেখক : অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension