
‘ইন্ডিয়া আউট’ থেকে ‘ওয়েলকাম ইন্ডিয়া’য় মালদ্বীপের ইউটার্ন
ভারতের একসময়ের ঘনিষ্ঠ অংশীদার মালদ্বীপ প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুর অধীনে সম্প্রতি চীনের সঙ্গে আরও বেশি জোটবদ্ধ হয়েছে। তবে দেশটির পররাষ্ট্রনীতি ‘ইন্ডিয়া আউট’ থেকে ‘ওয়েলকাম ইন্ডিয়া’-তে রূপ নিয়েছে।
মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ মুইজ্জু, যিনি তার চীনপন্থী নীতির জন্য পরিচিত। যা তাকে শেষ পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক বিরোধের দিকে নিয়ে যায়। সম্প্রতি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্মীদের সঙ্গে জরুরি চিকিৎসা পরিষেবা পুনরায় চালুর জন্য ভারতকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। দিনকয়েক পূর্বে, দ্বীপ-দেশটি ভারতের সঙ্গে একটি মুক্তবাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করেছে।
৯/১১ হামলার ‘সমঝোতা চুক্তি’ বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র৯/১১ হামলার ‘সমঝোতা চুক্তি’ বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র
এদিকে, মালদ্বীপের পর্যটন মন্ত্রী ইব্রাহিম ফয়সাল তার দেশকে একটি অন্যতম পর্যটন গন্তব্য হিসেবে প্রচার করতে। চলতি সপ্তাহে তিনি দেশটিতে একাধিক রোডশো পরিচালনা করতে ভারত সফর করেছেন। মালদ্বীপ সরকার এই রোডশোর নাম দিয়েছে ‘ওয়েলকাম ইন্ডিয়া’। ভারতীয় সেলেব্রেটি এবং নাগরিকরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি মালদ্বীপের কিছু মন্ত্রীর অসম্মানজনক মন্তব্যের প্রতিবাদে ‘বয়কট মালদ্বীপ’ প্রচারণা প্রচারের কয়েক মাস পর এ ঘোষণা আসে।
‘বয়কট মালদ্বীপ’ প্রচারণা ভারত থেকে পর্যটননির্ভর দ্বীপরাষ্ট্রটিতে পর্যটক আগমনকে অনেকটাই প্রভাবিত করেছে। যদিও, পরিস্থিতির এখন পরিবর্তন হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের মতে, মালদ্বীপ সরকার এখন ধীরে ধীরে কিন্তু স্থিরভাবে তার সুর পরিবর্তন করছে। কয়েক মাস আগে, দেশটির রাষ্ট্রপতি মুইজ্জুর ভারতবিরোধী অবস্থান ছিল। এখন মনে হচ্ছে তারা সেই ভাবমূর্তিটি বাদ দিতে এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গ্রহণ করতে চায়।
গত শুক্রবার রাষ্ট্রপতি মুইজ্জু তার দেশের স্বাধীনতা দিবস স্মরণে একটি বক্তৃতা দেওয়ার সময়, একটি ভারতের অপ্রত্যাশিত পদক্ষেপকে ধন্যবাদ জানান।
দ্বীপরাষ্ট্রটির ঋণ পরিশোধ সহজ করার জন্য ও দেশটির প্রতি ভারতের সমর্থনের জন্য রাষ্ট্রপতি মুইজ্জু ‘আন্তরিক কৃতজ্ঞতা’ প্রকাশ করেছেন। যার ফলে তার দেশ অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সক্ষম করেছে।
গত বছর, মুইজ্জু একটি ভিন্ন পরিস্থিতির সহায়তায় ক্ষমতায় এসেছিলেন। কারণ তিনি দেশে ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারণার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
মুইজ্জু আশা প্রকাশ করেন যে, নয়াদিল্লি এবং মালে আরও শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তুলবে এবং একটি মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষর করবে। এমনকি ভারতের সঙ্গে একটি মুদ্রা বিনিময় চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছেন বলে যোগ করেন তিনি।
খাদ্য, অবকাঠামো এবং উন্নত প্রযুক্তিগত মতো প্রয়োজনীয়তার জন্য মালদ্বীপ তার বৃহত্তর প্রতিবেশী ভারতের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করে। একাধিক কূটনৈতিক ভুল নীতি দেশটিকে একটি বড় অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলেছে।
টাইমস নাউ এক প্রতিবেদনে বলেছে, নয়াদিল্লী এবং মালের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা কেবল অর্থনৈতিক ঝুঁকিই তৈরি করে না বরং সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক এবং ভূরাজনৈতিক সম্পর্কেও উদ্বেগ বাড়ায়।
ক্ষমতায় আসার পর মুইজ্জু ভারতকে মালদ্বীপ থেকে তার সৈন্য প্রত্যাহার করতে বলেছিলেন। তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে, ২০২৪ সালের ১০ মে’র পর বেসামরিক পোশাকে থাকাসহ কোনো ভারতীয় সামরিক সদস্যকে তার দেশে অনুমতি দেওয়া হবে না। কারণ তিনি মনে করেন, মালদ্বীপে ভারতীয় সেনাবাহিনীর উপস্থিতি দ্বীপরাষ্ট্রটির সার্বভৌমত্বের জন্য একটি ‘হুমকি’ ছিল।
নয়াদিল্লি অবশ্য সময়সীমার আগে মালদ্বীপে অবস্থানরত সকল ভারতীয় সামরিক কর্মীদের ফিরিয়ে নিয়েছে। মালদ্বীপ সরকারের এই সিদ্ধান্ত তাদের নাগরিকদের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। কারণ চিকিৎসা ব্যবস্থা একটি বড় অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিল।
এদিকে, ভারতীয় সামরিক কর্মীদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর পর মালদ্বীপ ভারত থেকে উপহার পাওয়া ডর্নিয়ার বিমান এবং দুটি হেলিকপ্টার আবার ব্যবহার করা শুরু করেছে।
স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, জরুরি চিকিৎসায় ডর্নিয়ার বা হেলিকপ্টার ব্যবহার না করার জন্য সরকার সমালোচনার সম্মুখীন হওয়ার পর ডর্নিয়ার বিমানের কার্যক্রম পুনরায় শুরু করা হয়।
এডিশনডট এমভি’র এক প্রতিবেদন অনুসারে, মালদ্বীপ ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্স স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছে যে- ডর্নিয়ার বিমান এবং হেলিকপ্টারগুলোর মাধ্যমে চিকিৎসার ব্যবস্থা আবার শুরু হয়েছে।