
ইরানে পর্দা লঙ্ঘনের নতুন শাস্তি নিয়ে বিতর্ক
ইরানে জনসম্মুখে নারীদের হেডস্কার্ফ বা হিজাব না পরার জন্য নানা ধরনের শাস্তির বিধান রেখে নতুন একটি আইনের খসড়া করা হয়েছে। যা নিয়ে এরইমধ্যে দেশটির ইসলামি প্রজাতন্ত্রের নেতৃত্বের মধ্যেই বড় ধরনের বিতর্ক শুরু হয়েছে।
যার ফলে বর্তমানে দেশটির নারীদেরকে প্রায়ই কঠোর পোশাক বিধি লঙ্ঘন করতে দেখা যাচ্ছে।
মঙ্গলবার (৬ জুন) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সৌদি আরবভিত্তিক সংবাদামাধ্যম আরব নিউজ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৭৯ সালে দেশটির ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে জনসম্মুখে নারীদের চুল ও ঘাড় ঢেকে রাখা বাধ্যতামূলক করে একটি আইন পাস হয়। ওতে বলা হয়েছে, এ আইন অমান্যকারীদের জরিমানা বা দুই মাসের কারাদণ্ডের মুখে পড়তে হবে। বর্তমানে ইরানে এ আইন অমান্যকারীদের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে এবং খালি মাথায় রাস্তায় বের হচ্ছেন তারা।
গত সেপ্টেম্বরে এ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন ইরানের ২২ বছর বয়সী কুর্দি নারী মাহসা আমিনী। কিন্তু পরে পুলিশ হেফাজতে তার মৃত্যু হলে দেশব্যাপী বিক্ষোভে ফেটে পড়ে দেশটির নারীরা। এর পর থেকেই প্রতিবাদস্বরূপ ইরানজুড়ে নারীদের মধ্যে হিজাব না পরেই খালি মাথায় রাস্তায় বের হওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
ইরানের রক্ষণশীলরাই পার্লামেন্ট এবং নেতৃত্বে অধিপত্য বিস্তার করে আছে। তারা খুব যত্নের সঙ্গেই কঠোর এই পোশাক বিধিকে রক্ষা করে আসছে। তাদের বিশ্বাস, এই নিয়ম শিথিল করলে তা ‘সামাজিক রীতিতে’ গভীর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
কিন্তু বর্তমানে অনেক ইরানিই এ আইনের পরিবর্তনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মে’তে দেশটির বিচার বিভাগ এবং সরকার ‘সমাজকে রক্ষা করতে’ এবং ‘পারিবারিক জীবনকে শক্তিশালী করতে’ ‘হিজাব এবং নারীর মর্যাদার সংস্কৃতিকে সমর্থন’ করার পক্ষে একটি বিল প্রস্তাব করেছিল পার্লামেন্টে।
সেখানে যদি কোনো নারী জনসম্মুখে বা ইন্টারনেটে হিজাব পরে পর্দা না করে , তবে তার জন্য কারাদণ্ডের বিধান বাতিল করে জরিমানা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে দেশটির সমাজবিজ্ঞানী আব্বাস আবদি বলেছেন, ‘এ বিলটি হিজাব অপসারণকে একটি অপরাধ থেকে একটি অপকর্মে কমিয়ে এনেছে। যা অনেকটা ট্রাফিক লঙ্ঘনের মতো। কিন্তু এ জন্য বড় রকমের জরিমানাও রাখা হয়েছে। ‘
তিনি আরও বলেন, ‘আমিনীর মৃত্যুর এবং পরবর্তী প্রতিবাদের ধারবাহিকতায় সমাজ ‘আর এটা মেনে নিতে চায় না যে , আমরা একজন নারীকে বন্দী করে রাখি , এ কারণে যে সে বোরখা পড়ে না।’