প্রধান খবরবাংলাদেশমুক্তিযুদ্ধযুক্তরাষ্ট্র

একাত্তরের গণহত্যায় পাকিস্তানকে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়ার প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের দুই কংগ্রেসম্যানের

একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতাকে যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা কংগ্রেসে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া এবং পাকিস্তানকে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়ার প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন দুই কংগ্রেসম্যান। এ ঘটনাকে ইতিবাচক ও বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ।

সরকারের পক্ষ থেকে ওই প্রস্তাব উত্থাপনকারী দুই কংগ্রেসম্যান স্টিভ শ্যাবট ও রো খান্নাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে বাংলাদেশ সরকার দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন দেশে আমাদের দূতাবাসগুলো ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা এ ব্যাপারে কাজ করছেন। যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি সভায় অন্য কংগ্রেসম্যানরাও যেন সম্মতি দেন, সেজন্য সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।

গত শুক্রবার মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি সভায় ভারতীয়—আমেরিকান ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান রো খান্না ও রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান স্টিভ শ্যাবটের উত্থাপিত প্রস্তাবে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতাকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশে গণহত্যার স্বীকৃতি’ শীর্ষক ওই প্রস্তাবে পাকিস্তানকে বাংলাদেশের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি জীবিত মানবতাবিরোধী অপরাধী ও দোসরদের আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বিচার করার আহ্বান জানানো হয়।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরাও মার্কিন কংগ্রেসে প্রস্তাবটি উত্থাপনকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদুত হুমায়ুন কবীর এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রস্তাবটি একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বাইডেনের কাছে যাবে। টার্কিশ গণহত্যার স্বীকৃতি পেতে আর্মেনিয়ার বহু বছর লেগেছে। তাই বাংলাদেশ সরকারকে এ বিষয়ে লেগে থাকতে হবে। প্রবাসী বাংলাদেশি, বিভিন্ন সংগঠনসহ সব দেশি—বিদেশি অংশীজনকে এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত করতে হবে।

ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষে থাকার পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন কংগ্রেসে প্রস্তাবটির উত্থাপন অবশ্যই ইতিবাচক অগ্রগতি। এখন দেখার বিষয়, অন্য কংগ্রেসম্যানরা কী প্রতিক্রিয়া দেখান। যুক্তরাষ্ট্র স্বীকৃতি দিলে বহু দেশও বাংলাদেশের গণহত্যার স্বীকৃতি দেবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র শুধু পাকিস্তানের পক্ষেই ছিল না; বরং তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করেছে। অথচ ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকা মিশনে কর্মরত মার্কিন কূটনীতিকদের একাধিক তারবার্তা ও প্রকাশিত সংবাদে এ দেশে পাকিস্তানিরা গণহত্যা চালাচ্ছে এমন তথ্য ছিল। দেশটির শীর্ষ নীতিনির্ধারকরা সেগুলো আমলে নেননি; বরং বাংলাদেশে পাকিস্তানের গণহত্যার নীরব দর্শকই ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষে না থাকলেও স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৪ এপ্রিল স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় দেশটি। তবে গত ৫০ বছরে বন্ধুরাষ্ট্র ও উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সরকার মুক্তিযুদ্ধ, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিষয়ে তাদের অবস্থানের খুব বেশি পরিবর্তন দেখাতে পারেনি। যদিও ১৯৭১ সালে দেশটির অনেক রাজনীতিক, শিল্পী, সাংবাদিক বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জনমত গঠনে সহযোগিতা করেন। অন্যদিকে স্বাধীনতার এত বছরেও গণহত্যাসহ সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চায়নি পাকিস্তান।

এমন বাস্তবতায় মার্কিন কংগ্রেসের এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, মনে রাখতে হবে, যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে পাকিস্তান ও তার সহযোগী বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর লবি কম শক্তিশালী নয়। এ প্রস্তাব আলোচনায় গেলে তারা বাধা দেবে। এটি বিবেচনায় রেখে যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের দূতাবাস এবং প্রবাসী বাঙালিদের বহুমাত্রিক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি জাতিসংঘের যেসব দেশ বাংলাদেশের প্রতি বন্ধুত্বভাবাপন্ন, দ্রুত তাদের সরকারকে একাত্তরের গণহত্যার স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করতে হবে।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension