আন্তর্জাতিকজাতিসংঘ

করোনার হালনাগাদ তথ্য চীনকে দিতেই হবে: ডব্লিউএইচও

করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে চীনফেরত যাত্রীদের ওপর বিভিন্ন দেশের সরকার ‘বৈষম্যমূলক’ বিধিনিষেধ দিচ্ছে বলে চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম অভিযোগ করেছে। এদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, করোনাভাইরাসে দৈনিক শনাক্ত হওয়ার হালনাগাদ তথ্য বেইজিংকে অবশ্যই প্রকাশ করতে হবে।

করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকে তিন বছর ধরে চীনের কর্তৃপক্ষ লকডাউন, লাগাতার পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা, সীমান্ত বন্ধ করে রাখার মতো কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে রেখেছিল। সরকারের ‘জিরো কোভিড পলিসি’র বিরুদ্ধে সম্প্রতি দেশটির বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়। এরপর কর্তৃপক্ষ ওই বিধিনিষেধ তুলে নেয় এবং তার পর পরই গত কয়েক সপ্তাহে করোনার সংক্রমণ নতুন করে ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ে।

দক্ষিণ কোরিয়া ও স্পেন গত শুক্রবার চীনফেরত যাত্রীদের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতসহ কয়েকটি দেশ চীন ভ্রমণকারী যাত্রীদের ওপর একই ধরনের বিধিনিষেধ দেয়। বেইজিং থেকে প্রকাশিত রাষ্ট্রীয় পত্রিকা গ্লোবাল টাইমস গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলেছে, করোনা নিয়ন্ত্রণে চীনের তিন বছরের সফল প্রচেষ্টাকে নস্যাৎ করতে বিভিন্ন দেশ এসব ‘ভিত্তিহীন’ ও ‘বৈষম্যমূলক’ বিধিনিষেধ আরোপ করছে।

বেইজিংয়ের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ৮ জানুয়ারি থেকে চীনে প্রবেশের পর কাউকে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে না। তবে যাত্রা শুরুর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সংগৃহীত করোনা নেগেটিভ (পিসিআর) টেস্টের সনদ দেখাতে হবে।

পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, করোনায় কোণঠাসা অবস্থায় পড়েছে চীন। দেশটির ‘জিরো কোভিড পলিসি’ এতদিন পর্যন্ত যেটুকু কার্যকারিতা অর্জন করেছিল, অমিক্রন বিএফ-৭ নামের নতুন ধরনের করোনার আবির্ভাবে তা ব্যর্থ হয়ে পড়েছে। করোনার নতুন ধরনটির লাগামহীন সংক্রমণে রীতিমতো বেকায়দায় পড়েছে সি চিন পিংয়ের সরকার। এমন পরিস্থিতি নিয়ে ফের উদ্বেগ জানিয়ে ডব্লিউএইচওর প্রধান তেদ্রোস আধানম গেব্রেয়াসুস গত শুক্রবার বলেছেন, করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে তারা চীনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি আলোচনা করেছেন। বর্তমান করোনা পরিস্থিতির সঠিক চিত্র পাওয়ার জন্য এবং সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির জন্য সংশ্লিষ্ট তথ্য ও পরিসংখ্যানে স্বচ্ছতা বজায় রাখার ওপর ডব্লিউএইচও বরাবরই গুরুত্ব দিয়েছে।

গেব্রেয়াসুস কয়েক দিন আগেই বলেছিলেন, তারা চীনে ফের করোনার প্রকোপ নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। বেইজিং এ-সংক্রান্ত তথ্য দেবে এবং ডব্লিউএইচওর সুপারিশগুলো পর্যালোচনা করে দেখবে বলে তারা আশাবাদী। টিকাদান কর্মসূচি আরও দ্রুত বাস্তবায়নে চীনকে সহায়তা দেয়া হবে।

তবে শুক্রবারের বক্তব্যে ডব্লিউএইচওর প্রধান বেইজিংয়ের সমালোচনা করে বলেন, চীনে কোভিড সংক্রমণের উৎস সম্পর্কে অনেক তথ্যই এখনো অপ্রকাশিত রয়েছে। আক্রান্তের হালনাগাদ তথ্য ও পরিসংখ্যান প্রকাশে অবশ্যই দেশটির কর্তৃপক্ষকে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।

সংক্রমণের আশঙ্কায় চীনফেরত যাত্রীদের নিয়ে কড়াকড়ি শুরু করেছে বহু দেশ। যাত্রীদের কাছ থেকে কোভিড টেস্টের নেগেটিভ রিপোর্ট চাইছে যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যসহ আরও কয়েকটি দেশ। এ প্রসঙ্গে ডব্লিউএইচওর প্রধান বলেন, নিষেধাজ্ঞা জারি করাটাই স্বাভাবিক। কারণ, চীন থেকে পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। বিশ্বের একাধিক দেশ যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তা নিজেদের জনগণকে সুরক্ষিত রাখার জন্যই।

পশ্চিমা গণমাধ্যমের অভিযোগ, চীনে কোভিডের সংক্রমণে প্রতিদিন বহু মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। আক্রান্তও হচ্ছেন অনেকে। কিন্তু বেইজিং সে তথ্য গোপন করছে। আনুষ্ঠানিকভাবে তারা যে প্রতিবেদন প্রকাশ করছে, তাতে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা বাস্তব পরিস্থিতির তুলনায় অনেক কম।

কিন্তু বিদেশিদের চাপের মুখে বেইজিং নতি স্বীকার করতে নারাজ। তথ্য প্রকাশ তো দূরের কথা, সম্প্রতি করোনায় দৈনিক সংক্রমণ ও মৃত্যুর হিসাব প্রকাশও বন্ধ করে দিয়েছে চীনের কর্তৃপক্ষ।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension