খেলাবাংলাদেশ

কাঁদতে কাঁদতে তামিম যা বললেন

তাঁর অপেক্ষায় ছিলেন সবাই। আগেই জানিয়ে রেখেছিলেন সংবাদ সম্মেলন করবেন। দুপুর দেড়টা বাজার আগেই চট্টগ্রামের জুবলি রোডে হোটেল টাওয়ার ইনে মাথায় কালো টুপি, গায়ে কালো টি-শার্ট পরে এলেন তামিম ইকবাল। এসেই জানিয়ে দিলেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তিনি আর খেলবেন না। সংবাদ সম্মেলনের একপর্যায়ে তিনি কেঁদেই দিলেন। কান্নায় কথাই বলতে পারছিলেন না বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ওপেনার। মাত্রই ‘সাবেক’ হয়ে যাওয়া বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়কের সংবাদ সম্মেলনের পুরোটাই থাকল এখানে—

এ রকম একটা অবস্থায় মানুষ বক্তব্য লিখে নিয়ে আসে। আমি আসলে প্রস্তুত না।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে গতকালকের ম্যাচটাই আমার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিচ্ছি। এটার পেছনে কোনো সাডেন (আকস্মিক) সিদ্ধান্ত ছিল না। আমি এ বিষয়ে ভাবছিলাম। এটার ভিন্ন ভিন্ন কারণ আছে।

আমি মনে করি, আমার এখানে এটা বলার আছে। এটা না যে, হুট করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটা নিয়ে আমি কয়েক দিন ধরে কথা বলছিলাম। এমনকি আমার পরিবারের সঙ্গেও কথা বলছিলাম। আমি মনে করি, আমার জন্য এটাই সঠিক সময়। আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিচ্ছি। আমি লোকজনকে ধন্যবাদ জানাই। আমার কাছে মনে হয়, এটা তাদের প্রাপ্য।

আমি সব সময় একটা কথা বলছি যে, আমি খেলেছি (কান্নায় ভেঙে পড়েন, কিছুক্ষণ পর পানি খান), আমি সব সময় বলছি যে, আমি ক্রিকেট খেলি আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য। আমি জানি না, ১৬ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে আমি কতটুকু কী করেছি…। সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ।

আমার সবচেয়ে ছোট চাচা যে, যিনি ইন্তেকাল করছেন—ওনার নাম আকবর খান। তাঁর হাত ধরেই আমার প্রথম ক্রিকেট টুর্নামেন্ট খেলা। আমি তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। তপন দা নামে একজন কোচ আছেন, যাঁর কাছে আমি ঋণী। ছোটবেলা থেকে (আবার আবেগাক্রান্ত হয়ে কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে, চোখ মুছে)… যার কাছে আমি ছোটবেলা থেকে অনুশীলন করছি, আমি তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। যেসব খেলোয়াড়ের সঙ্গে আমি অনূর্ধ্ব-১৩, ১৫, ১৭, ১৮, ১৯, প্রিমিয়ার লিগ, জাতীয় লিগ, জাতীয় দলে খেলেছি। যাদের সঙ্গে আমি খেলেছি, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ। বিশেষ করে যারা জাতীয় দলে আমার সতীর্থ ছিল তাদের, নিঃসন্দেহে ক্রিকেট বোর্ডকেও। তারা আমাকে সুযোগ দিয়েছে দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করার এবং অধিনায়কত্ব করার।

আসলে আমার বেশি কিছু বলার নাই। একটা বিষয় আমি নিঃসন্দেহে বলব, আমি ম্যানেজ করার চেষ্টা করেছি (আবার কান্নায় ভেঙে পড়েন)। হয়তো আমি যথেষ্ট ভালো ছিলাম না, আমি জানি না। তবে যতক্ষণ আমি মাঠে ছিলাম, চেষ্টা করেছি শতভাগ দেওয়ার। আমি আসলে অনেক কিছু বলতে চাই, কিন্তু বলতে অক্ষম হয়ে পড়েছি। আশা করি, আপনারা এই পরিস্থিতিকে সম্মান করবেন। আমি এত বছর যখন খেলেছি, যখন আমি ছাড়ছি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খুব সহজ নয়, আপনারা আশা করি বুঝতে পেরেছেন।

আপনাদের ডাকা হয়েছে, সব গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ। আপনাদের কাছে আমার একটাই অনুরোধ, সামনে যাঁরা ক্রিকেট খেলবেন আপনারা তাঁদের কথা ভালো লিখবেন, খারাপ লিখবেন। ক্রিকেটে থাকবেন, বাউন্ডারির বাইরে যাবেন না। কেউ ভালো খেললে ভালো খেলেছে বলবেন। কেউ ভালো না খেললে সমালোচনা করবেন, ঠিক আছে। আমার অনুরোধ, যারা ক্রিকেট খেলছে এখন, তারা খুবই খুবই গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় বিশ্বকাপের জন্য। আমি আশা করি, দলের একজন সদস্য হিসেবে, এটা আমি অনুরোধ করব যে, দলকে সমর্থন করুন। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আবারও একই কথা বলছি, আমি সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমি আবারও একটা জিনিস পুনরাবৃত্তি করি, আমি আমার বাবার স্বপ্নপূরণের জন্য ক্রিকেট খেলা শুরু করেছিলাম, জানি না কতটুকু কী করেছি। তবে আমি আমার সর্বোচ্চটা করার চেষ্টা করেছি। যদি কারও কাছে কোনো অপরাধ করে থাকি, তবে ক্ষমাপ্রার্থী। সবাইকে ধন্যবাদ। যাঁরা আমাকে ক্রিকেটার হিসেবে বেড়ে উঠতে সহায়তা করেছেন, একজন মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠতে সহায়তা করেছেন, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে। আমার মা, আমি তাঁকে ভুলতে পারি না। আমার ভাইদের, আমার স্ত্রী, আমার দুই সন্তান—আমার এই জার্নিতে তারা অনেক ভুগেছে। তাদের অনেক ধন্যবাদ জানাই। এর চেয়ে আমার বেশি কিছু বলার নেই।

এটাই অনুরোধ করব, আমার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের বিষয়টি নিয়ে আর বেশি গুতাগুতি কইরেন না। কেন, কেন, কী হতে পারত, কী হতে পারত না। এটা এখানেই শেষ করি। সব সময় বলি, দল ব্যক্তির চেয়ে অনেক বড়। দলের দিকে মনোযোগ রাখুন।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension