
ক্ষমতার মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার
আমাদের দেশের সরকারি কর্মকর্তারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মাত্রাতিরিক্ত ক্ষমতা ভোগ করেন। অনেকে আবার অবসরে যাওয়ার পরেও রাষ্ট্রের সুযোগ-সুবিধা নিতে লজ্জা বোধ করেন না। ক্ষমতার দাপটও দেখান। জনসেবা, জনকল্যাণ, জনগণের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করাই যাঁদের একমাত্র কাজ হওয়ার কথা ছিল। কারণ তাঁরা বেতন-ভাতা পান সাধারণ মানুষের করের টাকায়। কিন্তু ঘটনা ঘটে উল্টো। গণমাধ্যমে ‘কার গাড়িতে কে চড়েন’ বিষয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। দেওয়ান মোহাম্মদ হানজালা ও শাহ্ নইমুল কাদের দুজনই শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ইইডি) সাবেক প্রধান প্রকৌশলী। প্রথমজন সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন তিন বছর আগে এবং দ্বিতীয়জন প্রায় দুই মাস আগে। অবসরে গেলেও দুজনই এখনো সরকারি গাড়ি ব্যবহার করছেন। এই গাড়ির জ্বালানি, চালকের বেতন, রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়সহ সব খরচ দেওয়া হচ্ছে ইইডির হিসাব শাখা থেকে।
জানা যায়, ইইডির প্রধান কার্যালয়ে গাড়ি আছে ৪১টি। এর মধ্যে ২৩টি গাড়ি ব্যবহার করেন এই দপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা। আর বাকি ১৮ গাড়ি অবৈধভাবে ব্যবহার করছেন সাবেক দুই প্রধান প্রকৌশলী ও অন্য দপ্তরের প্রভাবশালীরা।
আরও ভয়াবহ ব্যাপার হলো, প্রধান কার্যালয়ের যে ২৩ জন সরকারি গাড়ি ব্যবহার করছেন, তাঁদের মধ্যে তিনজন গাড়ির প্রাধিকারভুক্ত নন; অর্থাৎ তাঁরা সরকারি গাড়ি ব্যবহার করতে পারেন না। আমাদের জানা নেই, এক দপ্তরের গাড়ি অন্য দপ্তরের কর্মকর্তারা কীভাবে ব্যবহার করতে পারেন? এ রকম রোমহর্ষক ঘটনা ঘটেছে এই অধিদপ্তরে। যেমন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের তিনজন অতিরিক্ত সচিব, পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক বিভাগের এক সদস্য ও শিক্ষাবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাও ব্যবহার করছেন গাড়ি। এ ছাড়া একটি গাড়ি ব্যবহার করছেন শিক্ষা প্রশাসনের শীর্ষ এক ব্যক্তির আস্থাভাজন এক কর্মকর্তা। যদিও প্রাধিকার অনুযায়ী তিনি গাড়ি ব্যবহার করতে পারেন না। আর বাকি ৯টি গাড়ি ব্যবহৃত হচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-উপমন্ত্রী এবং তাঁদের সচিবদের দপ্তরে।
একটি গণতান্ত্রিক সমাজে জনপ্রতিনিধিরা নীতি নির্ধারণ করেন। আর আমলারা সেই নীতি মাঠপর্যায়ে প্রয়োগ করেন। আমলারা কিন্তু জনপ্রতিনিধি নন, তাই জনগণের কাছে তাঁদের জবাবদিহিও করতে হয় না। এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করেন আমলারা। জনপ্রতিনিধিরা চৌকস হলে আমলারা মাথায় ওঠার সুযোগ পান না। কিন্তু আমাদের দেশে তেমন যোগ্য জনবান্ধব জনপ্রতিনিধি কজন আছেন?
আমলাদের এ রকম অসংখ্য অনৈতিক ও অপরাধের ঘটনা বিভিন্ন সময়ে পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। কিন্তু দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর শাস্তির ব্যবস্থা করা হয় না। দেশে আইন আছে, কিন্তু এসব কর্মকর্তার ক্ষেত্রে কখনো আইনের শাসনের প্রয়োগ হয় না। এরপরও যদি তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তাহলে এর প্রভাব অন্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাকেও প্রভাবিত করতে পারে।