
খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হচ্ছে ডিমও
সামর্থ্যরে বাইরে যাওয়ায় আগে অনেকে গরু বা খাসির মাংস বাদ দিয়েছেন নিয়মিত খাবার তালিকা থেকে। কিছু কিছু মাছ এবং সবজিও পাতে তোলার সুযোগ নেই নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের। নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে সুষম খাবার নিশ্চিত করা তাদের জন্য যেন বিলাসিতা। এর মধ্যে আমিষের উৎস হিসেবে কম আয়ের মানুষের ভরসা ছিল ডিম। তবে নতুন করে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার অজুহাতে গেল এক সপ্তাহে পণ্যটির দামের যে উল্লম্ফন হয়েছে তাতে করে অনেকে ডিমও খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে শুরু করেছেন।
বাজারদর নির্ধারণকারী সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য মতে, গত সপ্তাহেও ডজনপ্রতি ডিমের দাম ছিল ১২০ টাকার মতো। এখন এক ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায়। অর্থাৎ ডিমের দাম এক লাফে ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গতকাল সোমবার সরেজমিনে রাজধানীর মতিঝিল, বকশীবাজার, পান্থপথ ও কারওয়ান বাজার এলাকার বিভিন্ন ডিমের দোকান ও খাবার হোটেল ঘুরে দেখা গেছে সব পর্যায়ে ডিমের দাম পিসপ্রতি ৫ থেকে ৬ টাকা বেড়েছে।
গতকাল বকশীবাজার এলাকায় কথা হয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী আব্দুল হামিদের সঙ্গে। তিনি জানান, তার সকালের নাস্তার বাজেট ছিল ৪০ টাকা। এই বাজেটের মধ্যে দুটো রুটি ২০ টাকা ও একটি ডিম ভাজি নিতেন ২০ টাকায়। কিন্তু এখন একটি ডিমের দাম রাখা হচ্ছে ২৫ টাকা। তাই আব্দুল হামিদ তার নাস্তায় এনেছেন পরিবর্তন। তিনি এখন রুটির সঙ্গে ডিমের বিকল্প হিসেবে সবজি দিয়ে সকালের নাস্তার কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন।
কারওয়ান বাজারের ডিমের ক্রেতা মো. হাসান বলেন, আগে মেহমান এলে বাসায় কিছু না থাকলে চট করে একটা ডিম ভেজে দিতাম। বা টাকা-পয়সার একটু টানাটানি আছে, ডিম নিয়ে বাসায় আসতাম। এখন যে অবস্থা, ডিম খাওয়াও ছেড়ে দিতে হবে।
রাজধানীতে আব্দুল হামিদের বা হাসানের মতো হাজারো মানুষ তাদের ব্যয় অনুযায়ী আয় না বাড়ায় খাবারে এনেছেন পরিবর্তন। বাজারে দিন দিন ব্যয়ের খাত বাড়লে সেভাবে বাড়ছে না আয়। যার জন্য নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষদের দুবেলা দুমুঠো খাবার জোগাড়ে নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে।
আব্দুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত কয়েকদিন আগেও ২০ টাকা করে হোটেলে ডিম ভাজি কিনতে পাওয়া যেত। কিন্তু হঠাৎ করেই একটা ভাজা ডিমের ৫ টাকা বৃদ্ধি পেতে দেখে অবাক হয়েছি। আমার ৩৩ বছর বয়সে এই প্রথম ডিমের দাম এতটা বাড়তে দেখেছি। শুধু কি ডিম? বাজারে সব দ্রব্যমূল্যের দাম বেশি।
রাজধানীর বিভিন্ন খাবার হোটেলে খবর নিয়ে জানা যায়, গত কয়েকদিন আগের রান্না করা ডিম ২৫ টাকা ও ভাজা ডিম বিক্রি হতো ২০ টাকা করে। কিন্তু গেল শনি-রবিবার থেকে ২৫ টাকার রান্না ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা এবং ২০ টাকার ভাজা ডিম বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা করে।
হোটেল মালিকরা বলছেন, বর্তমানে নিত্যপণ্যের বাজার বাড়তি। তাই বেশি দামে কিনে বেশি দামেই বিক্রি করতে হয়। এখন একটি ডিম ১৪-১৫ টাকা কিনে ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছে দিতে তেল, কর্মচারী, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও দোকান ভাড়ার খরচ যুক্ত হয়। সব খরচ মিলিয়ে একটি ডিম বিক্রি হয় ২৫-৩০ টাকা করে।
পান্থপথের মক্কা রেস্তোরাঁর ম্যানেজার দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের হাতে একটি ডিম কেনা পড়ে ১৪ টাকার বেশি। এই ডিম ভাজতে ৩ টাকার তেল, ২ টাকার পেঁয়াজ, গ্যাস, হোটেল ভাড়া, কর্মচারী খরচ, বিদ্যুৎ বিলসহ খরচ রয়েছে আরও ৪ টাকা। অর্থাৎ সব মিলিয়ে একটা ডিম ভাজতে খরচ পড়ে ২৩ টাকার মতো। আমাদের বিক্রি হয় ২৫ টাকা। আর রান্না ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা করে।
মতিঝিলে কথা হয় রিকশাচালক বকুলের সঙ্গে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমরা দিনে ৪৫০-৫০০ টাকা ভাড়া মারতে পারি। রিকশার মালিককে দিতে হয় ২৫০ টাকা। খাইতে হয় ফুটপাতে। আগে ডিম বা আলু ভর্তা দিয়ে ভাত খাইলে খরচ হইত ৪০-৫০ টাকা। এহন একটা ডিমের দামই নেয় ৩০ টাকা কইরা। ভাতের প্লেট ১০ টাকা নিলেও এহন অনেক ভাত কম দেয়।
ফুটপাতের ডিম বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গেল শনিবার থেকে তারা ফার্মের সেদ্ধ ডিম বিক্রি করছেন ২০ টাকা আর হাঁসের ডিম ২৫ টাকা করে। কিন্তু ৩ দিনের ব্যবধানের ৫ টাকা করে বেড়েছে। পান্থপথ এলাকায় ডিম বিক্রেতা রেজওয়ান দেশ রূপান্তরকে বলেন, পাইকারি বাজারে ডিম বেশি দামে কিনতে হয় বলে আমাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। গেল কয়েক দিন ধরেই ডিমের দাম বাড়ায় আগের থেকে আমাদেরও বিক্রি কমেছে অনেক। আগের তুলনায় এখনো বিক্রিও নেই লাভও তেমন হয় না। সব মিলিয়ে গত দুই মাস দোকান ভাড়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে।
এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ও মহল্লার দোকান ঘুরে দেখা যায়, প্রতি ডজন ডিমে ১৫ টাকা করে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ৩ দিন আগের ১৪৫ টাকায় বিক্রি হওয়া প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা ও এক হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা করে। অর্থাৎ ভোক্তা পর্যায়ে একটি ডিমের বিক্রি হচ্ছে ১৪ টাকা করে।