প্রধান খবরযুক্তরাষ্ট্র

গণতন্ত্র সম্মেলনে বাইডেন: আমাদের সময়ের প্রধানতম চ্যালেঞ্জ গণতন্ত্র

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উদ্যোগে দ্বিতীয়বারের মতো ‘গণতন্ত্র সম্মেলন’ শুরু হয়েছে। সম্মেলনে বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে বাইডেন বলেছেন, গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা বর্তমান সময়ের গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ।

৩০ মার্চ (বুধবার) দুই দিনের যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ‘সামিট ফর ডেমোক্রেসির’ দ্বিতীয় শীর্ষ সম্মেলন উদ্বোধন করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সশরীর ও ভার্চুয়াল মাধ্যমের সংমিশ্রণে আয়োজিত এবারের এই সম্মেলনে ১২০টি দেশ যুক্ত রয়েছে। এই তালিকায় বাংলাদেশ নেই।

বুধবার (২৯ মার্চ) দুই দিনব্যাপী সম্মেলনটির উদ্বোধন করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ভাষণে বাইডেন বলেন, ’যদি আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়, আমাদের সময়ের প্রধানতম চ্যালেঞ্জ কী, আমি বলব গণতন্ত্র। গত কয়েক বছরে এই গণতন্ত্র কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছিল। কিন্তু আশার কথা হলো, বর্তমানে এটি আবার শক্তিশালী হতে শুরু করেছে। অন্যদিকে স্বৈরতন্ত্র ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে। এটা বড় সুখবর।’

সহ আয়োজক
২০২২ সালের প্রথম সম্মেলনের একক আয়োজক ছিল যুক্তরাষ্ট্র। তখন সমালোচনা ওঠে, যুক্তরাষ্ট্র সবার ওপর মাতব্বরি করছে। গণতন্ত্রের নামে অন্যদের নিজের অনুগত রাখতে চেষ্টা করছে।

এমন সমালোচনার পর চলতি সম্মেলনে চারটি দেশকে সহআয়োজক করা হয়েছে। দেশগুলো হলো, দক্ষিণ কোরিয়া, জাম্বিয়া, কোস্টারিকা এবং নেদারল্যান্ডস।

অর্থ বরাদ্দ
এবারের সম্মেলনে বাইডেন ৬৯ কোটি ডলারের বাজেট ঘোষণা করেছেন। সারা বিশ্বে নির্বাচনকে অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে এবং গণমাধ্যমকে শক্তিশালী করতে বাজেটের বড় একটা অংশ ব্যয় করা হবে। তা ছাড়া দুর্নীতি দমন ও নজরদারি ব্যবস্থার নীতিমালা প্রণয়ন ইত্যাদির জন্যও বাজেটের গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ ব্যয় করা হবে।

গত বছর গণতন্ত্র সম্মেলনে ৪২ কোটি ৪০ লাখ ডলারের বাজেট ঘোষণা দিয়েছিলেন বাইডেন।

যারা আমন্ত্রণ পেয়েছেন
এবারের সম্মেলন মোটাদাগে অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমন্ত্রিত ১২১টি দেশের নেতাদের প্রায় সবাই অনলাইনে সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন। প্রতিটি দেশের কিছু কর্মকর্তা ওয়াশিংটনে সরাসরি অংশ নিয়েছেন।

এবার যেসব দেশ আমন্ত্রণ পেয়েছে তাদের মধ্যে লক্ষ্যণীয় ছিল ইসরায়েল ও ভারত। কারণ জো বাইডেনের সঙ্গে পরোক্ষ বাকবিতণ্ডার এক দিন পর গণতন্ত্র সম্মেলনে অংশ নিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

বাইডেন ও নেতানিয়াহুর বিতণ্ডার বিষয় ছিল ইসরায়েলের বিচার বিভাগের সংস্কার। এক মাসের বেশি সময়ের বিক্ষোভকে উপেক্ষা করে সম্প্রতি নিজেদের বিচার বিভাগকে ঢেলে সাজিয়েছে নেতানিয়াহু সরকার। দেশটির বিরোধী দল ও বিশেষজ্ঞদের মতে এই সংস্কার ইসরায়েলের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে দুর্বল করবে।

চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণকারী ডানপন্থি নেতানিয়াহু এবার চরম উগ্রপন্থিদের নিয়ে সরকার গঠন করেছেন। কয়েক মাস আগে তার সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে অধিকৃত জেরুজালেমে ফিলিস্তিনি হত্যা বেড়েছে। হামলা হয়েছে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায়। অন্যদিকে সিরিয়ায়ও বিমান হামলা বাড়িয়েছে নেতানিয়াহু সরকার।

অন্যদিকে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর লোকসভার সদস্যপদ বাতিলের উত্তেজনার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেসি সম্মেলনে বক্তৃতা দিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গণতন্ত্রের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে মোদি বলেন, ’ভারত গণতন্ত্রের সূতিকাগার। মহাভারতে নেতাদের সঙ্গে ক্ষমতা চর্চার কথা বলা হয়েছে। গণতন্ত্র কোনো কাঠামো নয়, এটি একটি মেজাজ।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি ২০১৪ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ভারতে গণতান্ত্রিক পরিবেশের ক্রমশ অবনতি হয়েছে। কমেছে মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা। এসব সত্ত্বেও চীন ও রাশিয়ার কথা মাথায় রেখে ভূরাজনীতির সমীকরণ মেলাতে নরেন্দ্র মোদিকে এবারের সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

যারা আমন্ত্রণ পাননি
এবার যাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি তাদের মধ্যে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হাঙ্গেরির প্রধান ভিক্টর অরবান অন্যতম। এ দুটি দেশ ন্যাটোর সদস্য।

বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, এবার যারা আমন্ত্রণ পেতে পারত কিন্তু পায়নি তাদের মধ্যে বাংলাদেশ, সিঙ্গাপুর এবং থাইল্যান্ড অন্যতম।

চীন ও রাশিয়ার সমালোচনা
ডয়চে ভেলে জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রধানতম প্রতিদ্বন্দ্বী চীন ও রাশিয়াকে স্বাভাবিকভাবেই আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। আর অনেকটা নিয়ম মেনেই যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র সম্মেলনের তীব্র সমালোচনা করেছে চীন ও রাশিয়া।

চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিঞ্জ বলেন, ’এসব সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দ্বন্দ্বকে উসকে দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। গণতন্ত্রের নামে বিশ্বে বিভক্তি বাড়াচ্ছে।’

অন্যদিকে ওয়াশিংটনে নিয়োজিত রুশ রাষ্ট্রদূত আনাতোলি আন্তোনভ যুক্তরাষ্ট্রে ‘কপট’ মন্তব্য করে বলেন, ’যুক্তরাষ্ট্র নিজেই বর্ণবাদ, বন্দুক সহিংসতা, দুর্নীতি ও সামাজিক বৈষম্যে জর্জরিত। ইরাক, লিবিয়া এবং আফগানিস্তানে গণতন্ত্র রপ্তানি করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যা করেছে, তা আমাদের জানা আছে।’

সূত্র : এএফপি, ডয়চে ভেলে

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension