যুক্তরাষ্ট্র

গাজায় যুদ্ধ বন্ধ না করলে বাইডেনকে ভোট দেবেন না মার্কিন মুসলিমরা

গাজায় যুদ্ধবিরতি দিতে ইসরায়েলকে রাজি করাতে অবিলম্বে পদক্ষেপ না নিলে ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ভোট দেবেন না মার্কিন মুসলিমরা। এমনকি নির্বাচনী অনুদান আটকে দিতে লাখ লাখ মুসলিম ভোটারকে ঐক্যবদ্ধ করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক পার্টির কিছু কর্মী ও মুসলিমরা।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে ইসরায়েলের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্কের সুবাদে গাজায় যুদ্ধবিরতিতে নেতানিয়াহুকে রাজি করানোর আহ্বান জানিয়েছে ন্যাশনাল মুসলিম ডেমোক্রেটিক কাউন্সিল। এর জন্য মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন তাঁরা।

এ সংগঠন মিশিগান, ওহাইও এবং পেনসিলভানিয়ার মতো চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ অঙ্গরাজ্যগুলোর ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতাদের নিয়ে গঠিত। মূলত এ অঙ্গরাজ্যগুলোর ওপর নির্ভর করে নির্বাচনের ফলাফল।

‘২০২৩ যুদ্ধবিরতির আলটিমেটাম’ শিরোনামে একটি খোলা চিঠিতে মুসলিম নেতারা ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আগ্রাসনকে সমর্থন করে এমন যেকোনো প্রার্থীকে পৃষ্ঠপোষকতা, সমর্থন বা ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকতে মুসলিম ভোটারদের ঐক্যবদ্ধ করার ঘোষণা দেন।

খোলা চিঠিতে কাউন্সিল লিখেছে, ‘আপনার সরকারের শর্তহীন সমর্থন, অর্থায়ন ও যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহ এ সহিংসতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এর কারণে বেসামরিক নাগরিক হতাহত হয়েছে এবং যারা আগে আপনার ওপর আস্থা রেখেছিল তারা আস্থা হারিয়েছে।’

মিনেসোটার অ্যাটর্নি জেনারেল ও কংগ্রেসে নির্বাচিত প্রথম মুসলিম, সাবেক মার্কিন প্রতিনিধি কিথ এলিসন এবং ইন্ডিয়ানার প্রতিনিধি আন্দ্রে কারসন এ সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাকালীন সহসভাপতি।

ইসরায়েলের হামলায় বাইডেনের ব্যর্থতাকে ঘিরে আরব ও মার্কিন মুসলিমদের মধ্য়ে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভের সর্বশেষ ইঙ্গিত এ চিঠি। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ঢুকে হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর থেকেই গাজায় নির্বিচারে বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল সোমবার জানায়, তিন সপ্তাহ ধরে চলমান বিমান ও স্থল হামলায় এখন পর্যন্ত ৮ হাজার ৩০৬ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৪৫৭টিই শিশু।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু গতকাল সোমবার বলেছেন, তিনি গাজায় কোনো ধরনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি দেবেন না। তাঁর সঙ্গে সুর মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, ‘এ মুহূর্তে যুদ্ধবিরতি থেকে শুধু হামাস লাভবান হবে।’

স্যাক্রামেন্টো ভ্যালি কাউন্সিল অন আমেরিকান–ইসলামিক রিলেশনসের (সিএআইআর) নির্বাহী পরিচালক বাসিম এলাকার বলেন, ‘২০২৪ সালের নির্বাচনে বাইডেনের দ্বিতীয় মেয়াদে জয়ের জন্য মুসলিম ভোট বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ২০২০ সালে মিশিগানের ১৬ ইলেক্টোরাল ভোটে মাত্র ২ দশমিক ৬ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে জয় পেয়েছিলেন বাইডেন।’

আগামীকাল বুধবার মিনেসোটা সফরে যেতে পারেন জো বাইডেন। গত সপ্তাহে মিনেসোটার মুসলিমরাও যুদ্ধবিরতির আলটিমেটাম দিয়েছেন। সে আলটিমেটামের মেয়াদ মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত। মিনেসোটার মুসলিমরা বলেন, প্রেসিডেন্ট তাঁদের এলাকা সফরে এলে তাঁরা বিক্ষোভ দেখাবেন।

এ বিষয়ে বাইডেনের পুনর্নির্বাচন প্রচারাভিযান সেলের পক্ষ থেকে এখনো কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

গত ২৬ অক্টোবর কয়েকজন মুসলিম নেতার সঙ্গে বৈঠকের আয়োজন করেন বাইডেন। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রশাসনের কর্মকর্তারা সংকট মোকাবিলায় বাইডেনের ভূমিকা নিয়ে উদ্বিগ্ন আরব ও মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে সম্প্রতি ইসরায়েলে গিয়ে নিজেকে ‘ইহুদি জাতীয়তাবাদী’ (জায়োনিস্ট) বলে দাবি করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। বাইডেন আগের যেকোনো সরকারের চেয়ে বেশি আরব মার্কিন ও মুসলিমকে রাজনৈতিক পদে নিয়োগ দিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি প্রথম দুই মুসলিম ফেডারেল বিচারকও নিয়োগ দিয়েছেন।

মিনেসোটায় সিএআইআরের নির্বাহী পরিচালক জায়লানি হুসেইন বলেন, বাইডেনের ২০২৪ সালের পুনর্নির্বাচিত হওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ অঙ্গরাজ্যের মার্কিন মুসলিম নেতারাও একই দাবি জানাবেন।

হুসেইন বলেন, ‘আমরা আশা করছি, উইসকনসিন, ওহাইও এবং অন্য অঙ্গরাজ্যগুলো এই সপ্তাহে একই পদক্ষেপ নেবে।’ তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতির আহ্বান না জানালে ২০২৪ সালে বাইডেনের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া ছাড়া তাঁর আর কোনো উপায় নেই। তিনি আরও বলেন, তিনি একজন ব্যক্তি হিসেবে কথা বলছেন, সিএআইআরের পক্ষ থেকে নয়।

২০২০ সালের নির্বাচনে প্রায় ৭০ শতাংশ মার্কিন মুসলিমই বাইডেনের পক্ষে ছিলেন বলে জানান হুসেইন।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension