প্রধান খবরযুক্তরাষ্ট্র

গাজা দখল নেবে যুক্তরাষ্ট্র: ট্রাম্প

গাজা যুদ্ধে উদ্বাস্তু হওয়া ফিলিস্তিনিদের উপত্যকাটির বাইরে স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের পরামর্শ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুদ্ধ বিধ্বস্ত অঞ্চলটি নতুন করে নির্মাণে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি মালিকানা নেওয়ারও প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। এমনকি, ভূখণ্ডটিতে মার্কিন সেনা মোতায়েনের কথাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না এই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট।

গতকাল মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের সময় তিনি এ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। এ সময়ে গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্তির বিষয়েও দুই নেতার কথা হয়েছে। খবর অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি)।

ট্রাম্পের এই প্রগলভ প্রস্তাবে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যকার যুদ্ধবিরতি স্থায়ী করার পরবর্তী ধাপের আলোচনা আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে। দুই পক্ষের কাছে বন্দিদের মুক্তির বিষয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে।

গাজায় মানবিক সহায়তা ও পুনর্গঠন নিয়ে যখন কথা হচ্ছে, তখন এসব উসকানিমূলক কথাবার্তাও বাড়িয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। গেল ১৫ মাসের যুদ্ধে পুরো গাজা অঞ্চল মাটিতে মিশে গেছে। সেখানে মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে বলে খবরে উঠে এসেছে।

এখন গাজার ১৮ লাখ মানুষকে উপত্যকাটির বাইরে নিয়ে পুনর্বাসনের কথা বলছেন যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রেসিডেন্ট। অথচ এ অঞ্চলটি তাদের মাতৃভূমি, এখানেই তাদের জন্ম ও বেড়ে উঠেছেন। অঞ্চলটিকে ট্রাম্প এখন যুক্তরাষ্ট্রের বলে দাবি করছেন, সম্ভবত সেনা মোতায়েনের কথাও ভাবছেন।

ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি না, লোকদের ফিরে যাওয়া উচিত। তারা তো এখন গাজায় বসবাস করতে পারবেন না। আমি মনে করি, তাদের জন্য আরেকটি জায়গা দরকার। এটি এমন একটি জায়গা হওয়া উচিত, যা লোকজনকে সুখী করতে পারবে।’

‘যুক্তরাষ্ট্রের উচিত গাজার মালিকানা নিয়ে নেওয়া। এরপর ফিলিস্তিনিদের অন্য কোথাও পুনর্বাসন করে উপত্যকাটি পুনর্নির্মাণ করতে হবে, যাতে সেটি ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেয়ারায়’ রূপান্তর হয়ে যায়, যেখানে ‘ফিলিস্তিনিসহ সারা বিশ্বের মানুষ’ বসবাস করবেন’, বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

ইতালীয় শব্দ রিভেয়ারা বলতে উপকূলীয় অঞ্চল বোঝায়। ট্রাম্প বলেন, ‘আমি আশ্বস্ত করতে পারি, এটা বিশ্বমানের হবে। লোকজনের জন্য এটা খুবই চমৎকার হবে—ফিলিস্তিনিদের, আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফিলিস্তিনিদের নিয়েই আলোচনা করছি।’

ট্রাম্পকে সতর্ক করে দিয়ে মিসর, জর্ডান ও অন্য মার্কিন মিত্ররা বলছেন, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের অন্য কোথাও পুনর্বাসন করলে মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা হুমকিতে পড়বে, সংঘাত দীর্ঘায়িত হয়ে যাবে। পাশাপাশি কয়েক দশক ধরে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের যে কথা যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্ররা বলে আসছে, সেটিও দুর্বল হয়ে যাবে।

কিন্তু এই ধ্বংসস্তূপ থেকে ফিলিস্তিনিদের অন্য কোথাও যাওয়ার বিকল্প নেই বলে দাবি করছেন ট্রাম্প। আর তার শীর্ষ সহযোগী বলছেন, পুরো অঞ্চলটি পুনর্নির্মাণে তিন থেকে পাঁচ বছর সময় লাগবে।

গেল সপ্তাহে গাজাবাসীকে অন্য কোথাও পুনর্বাসনে ট্রাম্পের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন মিসরীয় প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি ও জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ। কিন্তু ট্রাম্পের দাবি, মিসর-জর্ডান ও অন্য কয়েকটি দেশ এ বিষয়ে তার সঙ্গে একমত হয়েছে।

ট্রাম্প বলেন, কয়েক দশক ধরে দেখছেন যে গাজায় সবাই মারা যাচ্ছেন। বছরের পর বছর ধরে এমনটা ঘটছে। এখানের সবাই মৃত। লোকজনকে স্থায়ীভাবে পুনর্বাসন করে আমরা একটি সুন্দর এলাকা পেতে পারি, সুন্দর বাড়িঘর, যেখানে তারা সুখে থাকতে পারবেন। কোনো গোলাগুলি হবে না, কেউ হত্যাকাণ্ডের শিকার হবে না, কেউ ছুরিকাঘাতে মরবে না, যেটা গাজায় এখন ঘটছে।

গাজা পুনর্গঠনে সেনা মোতায়েনের কথাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তিনি। অঞ্চলটি নতুন করে গড়ে তুলতে দীর্ঘমেয়াদি মার্কিন মালিকানার স্বপ্ন দেখছেন ট্রাম্প। নিরাপত্তা ঘাটতি পূরণে আমেরিকান সেনা মোতায়েনের সম্ভাব্যতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যেটা করা দরকার, সেটিই আমরা করব।’

এমন এক সময় গাজা নিয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা বলছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, যখন ভূখণ্ডটিতে হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension