ভারত

চীনের হুমকি মোকাবিলায় যেভাবে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া-ভারত

চীনের হুমকি মোকাবিলায় নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর করছে ভারত-অস্ট্রেলিয়া। চীনের সঙ্গে উত্তেজনা বৃদ্ধির এ সময়ে উভয় দেশ তাদের রপ্তানি বাজার ও সামরিক বাহিনীকে সমৃদ্ধ করতে চায়।

প্রভাবশালী মার্কিন দৈনিক দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক নিবন্ধে এসব কথা উল্লেখ করে বলা হয়, ভারত ও অস্ট্রেলিয়া উভয়ই চীনের ওপর তাদের নির্ভরতা কমাতে আগ্রহী। বিগত ৭০ বছরে ভারত-অস্ট্রেলিয়া সম্পর্ক ধীরগতিতে হলেও শক্তিশালী হচ্ছে।

২০০৮ সালে বেইজিং অলিম্পিকে চীনের জাতীয়তাবাদী আগ্রাসী আচরণে অস্ট্রেলিয়াকে বেশ অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছিল। দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের আধিপত্যে ভারতও উদ্বিগ্ন। চীনকে নিয়ে দুই দেশের উদ্বেগের ফলে ২০০৯ সাল থেকে ভারতের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করে।

ওই বছর অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী কেভিন রাড ভারত সফর করেন। ওই সময় দুই দেশের মধ্যে নতুন প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এরপর অস্ট্রেলিয়া ভারতে ইউরেনিয়াম রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রও ভারতের প্রতি তার পারমাণবিক নীতি পরিবর্তন করে।

শুধু তা-ই নয়, উন্নত প্রকৌশলীর মাধ্যমে সহায়তা দিতে চুক্তি স্বাক্ষর করে। ফলে চীনকে মোকাবিলার অভিন্ন লক্ষ্য এই দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের উন্নতিতে বড় ভূমিকা রেখেছে।

সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ চার দিনের ভারত সফর শেষ করেছেন। তিনি ৮ থেকে ১১ মার্চ ভারত সফর করেন।

অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এবার অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর ছিল ভিন্ন। দুই দেশেরই অভিন্ন প্রতিপক্ষ চীনকে মোকাবিলার বিষয়টি সফরে বেশি আলোচনায় এসেছে।

আগে দুই দেশের নেতারা নানা উদ্দেশ্যে পরস্পরের দেশ সফর করলেও চীনকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মোকাবিলার বিষয়টি তখন কোনো নেতার মাথায় ছিল না। সর্বশেষ এই সফরেও অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক বা অন্যান্য বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

তবে অস্ট্রেলিয়ার মূল উদ্দেশ্য, চীনের ওপর থেকে তার অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক শক্তি ও প্রভাবকে মোকাবিলা।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ বার্ষিক বৈঠকের পরে হায়দরাবাদ হাউজে সাংবাদিকদের কাছে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ জানান, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের একাধিপত্য কমাতে মার্কিন নেতৃত্বাধীন চার দেশীয় জোট কোয়াডের অন্যতম প্রধান দুই সদস্য রাষ্ট্র ভারত ও অস্ট্রেলিয়া নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা আরো বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আলবানিজ বলেন, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে বহুপক্ষীয় সম্পর্ক বিরাজমান। উন্মুক্ত, উদার, আইনের শাসন মানা ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল তৈরির জন্য আমরা একত্রে কাজ করব। সন্ত্রাস দমনে বাড়ানো হবে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা। এ ছাড়া পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন প্রকল্প, সৌরবিদ্যুৎ ও হাইড্রোজেন প্রকল্প নিয়ে চলতি বছরই দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরের চেষ্টা করব আমরা। এ ব্যাপারটিকে আমরা উভয়েই গুরুত্ব দিচ্ছি। কারণ, জীবাশ্ম জ্বালানি পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ।

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের পর ভারতকে ‘শীর্ষস্তরের কৌশলগত অংশীদার’ হিসেবে ঘোষণা করেন। এই প্রথম কোনো অস্ট্রেলিয়ান নেতা ভারতের বিষয়ে এই সংজ্ঞা ব্যবহার করলেন।

কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও ভারতে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক হাই কমিশনার পিটার ভার্গিস বলেন, ‘আমরা সম্পর্কের একটি মধুর জায়গায় রয়েছি এবং এটি স্বাধীন ভারতের গত ৭৫ বছরের মধ্যে এটি অবশ্যই সবচেয়ে শক্তিশালী।’

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের তথ্যমতে, ভারত ও অস্ট্রেলিয়া উভয়ই চীনের উপর তাদের নির্ভরতা কমাতে আগ্রহী।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension