জেমস ওয়েব টেলিস্কোপে শিশু নক্ষত্রের জন্ম মুহূর্ত
জন্ম নিচ্ছে নতুন একটি নক্ষত্র। সেই নক্ষত্রের দুই মেরু থেকে ছড়িয়ে পড়ছে গোলাপি ও লালরঙা উজ্জ্বল গ্যাস ও ধূলিকণা। সম্প্রতি এমন বিরল এক দৃশ্যের ছবি ধরা পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপে। দৃশ্যটির বর্ণনা দিতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানান, ৪৬০ কোটি বছর আগে জন্মের সময় সূর্য কেমন দেখতে ছিল, জেমস ওয়েবের সম্প্রতি তোলা এ ছবি থেকে সে সম্পর্কে অনুমান করা যায়।
নতুন নক্ষত্রটির নাম এইচএইচ২১২। এটির বয়স হয়তো ৫০ হাজার বছরের বেশি নয়। ধোঁয়া ও ধূলিকণার বৃত্তাকার চাকতির মধ্যে অবস্থানের কারণে এটি তত উজ্জ্বল নয়। ছবিতে শুধু নক্ষত্রটির দুই মেরু থেকে নির্গত উজ্জ্বল গ্যাস দৃশ্যমান।
এইচএইচ২১২ মহাবিশ্বের ওরিয়ন নক্ষত্রপুঞ্জে অবস্থিত। পৃথিবী থেকে এটি এক হাজার ৩০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত।
পদার্থবিদ্যা অনুযায়ী, দুই দিকে এভাবে গ্যাস ও ধূলিকণার নির্গমনের অর্থ হলো একটি নক্ষত্রের জন্মগ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। ইংরেজিতে নবজাতক নক্ষত্রকে বলা হয় প্রটোস্টার।
নীহারিকার ঘন গ্যাস ও ধূলিকণা মহাকর্ষের প্রভাবে ঘুরতে ঘুরতে পরস্পরের কাছে আসে। ধূলিকণা ও গ্যাসের স্তূপ বড় হলে সেটির ভর বাড়ে। সেই সঙ্গে বাড়ে এর মহাকর্ষ বল। ফলে বাড়ে ঘূর্ণন। আরো বড় হয়ে এই স্তূপই পরিণত হয় প্রটোস্টারে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ৩০ বছর ধরে এইচএইচ২১২ নক্ষত্র নিয়ে গবেষণা করছেন। জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের নেওয়া ছবির আগে অন্যান্য টেলিস্কোপের তোলা ছবিগুলোতে কিভাবে নক্ষত্রটির পরিবর্তন হচ্ছে, বিজ্ঞানীরা তা-ও বোঝার চেষ্টা করেছেন।
জেমস ওয়েবের তোলা এই ছবি আগের অন্যান্য টেলিস্কোপের ছবির চেয়ে ১০ গুণ বেশি স্পষ্ট। নক্ষত্রের নামের শুরুতে দুটি এইচ দ্বারা হাইড্রোজেন অণুকে নির্দেশ করলেও এর আরেকটি অর্থ রয়েছে। এই দুটি এইচ দ্বারা হারবিগ-হারো বোঝানো হয়ে থাকে।
১৯৪০ ও ১৯৫০-এর দশকে মহাজাগতিক এই ধরনের বস্তু নিয়ে গবেষণার দুই অগ্রপথিক জর্জ হারবিগ ও গিয়েরমো হারোর নাম থেকে এসেছে হারবিগ-হারো কথাটি। অধ্যাপক ম্যাকরিয়ান বলেন, ‘প্রথমবারের মতো এ বস্তুটির এতটা স্বচ্ছ ছবি পেয়েছি। এ থেকে এসব উজ্জ্বল প্রবাহের ভেতরে কী ঘটছে তা বোঝা সম্ভব হবে।’
সূত্র: বিবিসি