জোর করে দেখা করার কিছু নাই: ইউনূস-মোদী বৈঠক নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠকের বিষয়ে দীর্ঘদিনের পদ্ধতি মেনে এগোনোর কথা বলেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
তবে সে পদ্ধতি কি, তা খোলাসা না করে তিনি বলেছেন, “এটার একটা পদ্ধতি আছে, সেই অনুযায়ী আমরা এগোব। এটা এমন না যে, এক মাস আগে আমরা বলে রাখি যে, ‘আমরা দেখা করতে চাই তোমাদের সাথে; করবা কি-না’। এটা নরমাল যে সিস্টেম আছে, সে অনুযায়ী আগাবে।
“বিষয়টা হল, তারা যদি চায় যে, আমাদের সাথে দেখা করবে না, আমাদের জোর করে দেখা করার তো কিছু নাই, তাই না?”
শনিবার এক খবরে হিন্দুস্তান টাইমস লিখেছে, চলতি মাসের চতুর্থ সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে অধ্যাপক ইউনূসের বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকা। তবে, এখনো সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানায়নি ভারত সরকার।
দুদেশের মধ্যে যোগাযোগের বিষয়ে জানাশোনা আছে, এমন ব্যক্তিদের বরাতে ভারতীয় গণমাধ্যমটি লিখেছে, “এ সপ্তাহে ভারতীয় একটি গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইউনূসের বিভিন্ন মন্তব্যের প্রেক্ষাপটে মনে হচ্ছে, বৈঠকটি হবে না। ইউনূসের বক্তব্যগুলো নয়াদিল্লী ভালোভাবে নেয়নি।”
সম্প্রতি পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ইউনূস। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ফেরত না চাওয়া পর্যন্ত ভারতে অবস্থানকালে সাবেক ওই প্রধানমন্ত্রীর চুপ থাকা উচিত।”
এ বিষয়ে রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “এটা নিয়ে এখনও আমি কিছু বলতে চাই না।
“কারণ, আমাদের কাছে কোনো কনফার্মেশন নাই যে, হচ্ছে অথবা হচ্ছে না। বস্তুত, মোদী যে (নিউ ইয়র্কে) যাচ্ছেন, এটার শতভাগ নিশ্চয়তা আমরা এখনও পর্যন্ত পাইনি। একটা সম্ভাবনা আছে যে, উনি যাবেন।”
মোদীর সঙ্গে ইউনূসের বৈঠক বাংলাদেশ চেয়েছে কি-না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আপনি আপনার কথা আমার মুখে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।”
নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসাবে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসসহ সাতজনের একটি তালিকা প্রকাশ পেয়েছে।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “সাতজনের যে তালিকা প্রকাশ হয়েছে, সেটা সঠিক। তবে, এর আগেও একটা তালিকা আছে, যেটাতে আমি আছি, মানে আমি যাচ্ছি।”
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা এবং গণমাধ্যমকর্মীসহ প্রায় ২০ জনের একটি প্রতিনিধিদল যাচ্ছে জাতিসংঘে।
মোট কতজন অধিবেশনের জন্য যাচ্ছেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “১০-১২ জন সর্বোচ্চ, এর চেয়ে বেশি হবে না। আমরা একেবারে সীমিত সংখ্যক যাচ্ছি।”
‘আর একজন রোহিঙ্গাকেও আশ্রয় দিতে রাজি না’
সংঘাতের মধ্যে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ আশ্রয় দিতে না চাইলেও এ জনগোষ্ঠীর সদস্যরা নতুন করে অনুপ্রবেশ করছে।
সম্প্রতি অন্তত ১২ হাজার রোহিঙ্গার ঢুকে পড়া এবং সীমান্তের ওপারে আরও অনেকে ঢুকে পড়ার অপেক্ষা করার কথা তুলে ধরে এক প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, “আমরা খুব স্পষ্টভাবে বলেছি যে, আমরা আর একজন রোহিঙ্গাকেও আশ্রয় দিতে রাজি না।
“কিন্তু কিছু ঢুকে যাচ্ছে, এটা আমরা জানি। সেটাকে আমরা যতটুকু পারা যায় ঠেকানোর চেষ্টা করছি। বিজিবি যেটা করছে, প্রতিদিনই পুশ ব্যাক করছে, যাদেরকে আমরা ধরতে পারছি।”
ঢুকে পড়ার কারণ হিসাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, “একটা বড়সড় এলাকা নিয়ে তারা ঢুকছে, এটা বলতে হয়। সব যে আমরা ধরতে পারছি… সামর্থেরও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, সে কারণে পারছি না। কিন্তু আমরা যেখানে পারছি সেখানে কিন্তু ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, “ইউএনএইচসিআর চায় যে আমরা তাদেরকে আশ্রয় দিই। কিন্তু আমরা তাদেরকে স্পষ্ট করেছি, যে ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আমরা আশ্রয় দিয়েছি, আমরা আমাদের ভূমিকা যতটুকু হওয়ার কথা, তার চেয়ে বেশি করেছি।
“আমাদের পক্ষে আর সম্ভব না। যারা আমাদেরকে উপদেশ দিতে আসে বা চায়, তারা বরং তাদেরকে নিয়ে যাক।”
রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকানোর জন্য ‘আরেকটু গভীরভাবে’ আলাপ-আলোচনা করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, রোববার বিজিবি মহাপরিচালকের সঙ্গে তার বৈঠক হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও একটি বৈঠক হয়েছে।