যুক্তরাষ্ট্র

ট্রাম্প কি পিছিয়ে পড়লেন

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিগত বছরটা একেবারেই ভালো কাটেনি। একের পর এক তদন্ত, মামলা-মোকাদ্দমায় তিনি ফেঁসেছেন। এর মধ্যে বহুল আলোচিত ক্যাপিটল হিলের দাঙ্গা নিয়ে তদন্তও রয়েছে। মধ্যবর্তী নির্বাচনেও ট্রাম্পকে তেঁতো স্বাদ পেতে হয়েছে। এ ছাড়া ফ্লোরিডায় তার বিলাসবহুল বাড়িতে এফবিআইয়ের নজিরবিহীন তল্লাশি ও রাষ্ট্রীয় নথি খুঁজে পাওয়া নিয়েও কম জল ঘোলা হয়নি। এদিকে আগামী মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প আবারও দাঁড়াবেন বলে ঘোষণা দিয়ে বসে আছেন। তবে এত মামলা-মোকাদ্দমা, বাধা-বিপত্তি ডিঙিয়ে তার ক্ষমতায় ফেরা আদৌ সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে ‘নানা মুনির নানা মত’।

ক্যাপিটল হিল দাঙ্গা নিয়ে কংগ্রেসের আইণপ্রণেতাদের তদন্ত কমিটি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে গত বছরের ডিসেম্বেরে চারটি ফৌজদারি অভিযোগের সুপারিশ করেছে। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতৃত্বাধীন কমিটি ট্রাম্পকে বিচারের মুখোমুখি করতে বিচার বিভাগ বরাবর প্রস্তাবে সর্বসম্মতিক্রমে ভোট দিয়েছে।

২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল হিলে অবস্থিত মার্কিন পার্লামেন্ট ভবনে ট্রাম্পের হাজারও সমর্থক নজিরবিহীন হামলা চালান। তারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের পরাজয় মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনকে স্বীকৃতি দেয়ার আনুষ্ঠানিকতায় বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করেন।

কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের নির্বাচিত কমিটি ক্যাপিটল হিলের দাঙ্গার ঘটনা নিয়ে প্রায় ১৮ মাসের তদন্ত শেষে গত ডিসেম্বরে এক চূড়ান্ত বৈঠক করে। তারা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে চারটি অভিযোগ আনার সুপারিশ করে। এগুলো হলো- বিদ্রোহে প্ররোচণা, সাহায্য-সহযোগিতা কিংবা অনুকূল পরিবেশ তৈরি, দাপ্তরিক কাজে বাধা, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি প্রতারণা এবং মিথ্যা বিবৃতি দেয়ার ষড়যন্ত্র। ট্রাম্প অবশ্য কংগ্রেসের তদন্ত কমিটিকে ‘ক্যাঙ্গারু কোর্ট’ বলে উপহাস করেছেন।

এদিকে ডিসেম্বরের শেষ প্রান্তে এসে ট্রাম্পের আয়কর নথি শেষ পর্যন্ত প্রকাশই করেছেন ডেমোক্র্যাটরা। এ নিয়ে দীর্ঘ আইনি লড়াই করেও ট্রাম্প সফল হননি। প্রকাশিত আয়কর নথিতে ২০২০ সালে ট্রাম্পের ফেডারেল আয়কর না দেয়ার তথ্যটির বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে তিনি মাত্র ৭৫০ ডলার আয়কর দিয়েছিলেন। ২০১৮ সালে অবশ্য তিনি প্রায় ১০ লাখ ডলার আয়কর দিয়েছেন। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আয়কর নথি প্রকাশের ঘটনা ট্রাম্পের জনপ্রিয়তায় বড় কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না।

রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটির সাবেক মুখপাত্র ডগ হেই মনে করেন, ট্রাম্পের আয়করের নথিটি এখন প্রকাশিত হলেও তা জনমনে তেমন প্রভাব ফেলবে না। কারণ, ট্রাম্পের আয়করের বিষয়টি নিয়ে আগেও বিভিন্ন খবর বেরিয়েছে। তাই নথি না দেখলেও ট্রাম্পের আয়করসংক্রান্ত তথ্যগুলো লোকে আগে থেকেই জানেন। তাই এমন নথি প্রকাশ করে মানুষের মনোভাব পাল্টানোর সম্ভাবনা কম। ডেমোক্র্যাটিক কৌশলবিদ আমেশিয়া ক্রসও একই রকম কথা বলেছেন। তার মতে, কোনো কিছুতেই ট্রাম্পের ভোটাররা বদলাবেন না।

যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকানরা তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী দেশজুড়ে ‘লাল ঢেউয়ের’ আলোড়ন তুলতে পারেননি। তারা খুব সামান্য ব্যবধানে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ নিতে পেরেছেন। অন্যদিকে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেট ডেমোক্র্যাটদের হাতেই রয়ে গেছে। মধ্যবর্তী নির্বাচনে ট্রাম্প বড় প্রভাব বিস্তার করতে চেয়েছিলেন। বেশ কয়েকজন প্রার্থীর পক্ষে তিনি জোরেশোরে প্রচারও চালিয়েছেন। তবে তাদের কেউই ট্রাম্পের মুখে জয়ের মিষ্টি তুলে দিতে পারেননি। ট্রাম্পের পছন্দের প্রার্থী পেনসিলভানিয়ার মেহমেত ওজ এবং জর্জিয়ায় হার্শেল ওয়াকার ডেমোক্র্যাট প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে হেরেছেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন পরিস্থিতি ট্রাম্পের জন্য একটি বড় ধাক্কা। এই ফলাফল ট্রাম্পের নির্বাচনে বিজয়ী হিসেবে তৈরি হওয়া ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। ফ্লোরিডার পাম বিচে ট্রাম্পের বিলাসবহুল বাড়ি মার-এ-লাগোতে গত আগস্টে নজিরবিহীন তল্লাশি চালায় এফবিআই। তারা ট্রাম্পের বাড়ি থেকে তিন শতাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও গোপন রাষ্ট্রীয় নথি জব্দ করে। এ নিয়েও ট্রাম্প বিস্তর ঝামেলায় আছেন।

এদিকে এত অভিযোগের পাহাড় মাথায় করে ঘুরে বেড়ানো এমন একজন নেতাকে জনগণ গ্রহণ করবেন না বলেই মনে করেন রোনাল্ড স্টকটন। মিশিগান-ডিয়ারবর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এই ইমেরিটাস অধ্যাপক মনে করেন, ট্রাম্পের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে গেছে। ট্রাম্প যেখানেই যান সেখানেই ঝামেলায় পড়েন। লোকজন এমন চাপ পছন্দ করেন না।

অধ্যাপক স্টকটনের মতে, এসব কারণে জনতা ট্রাম্পের বিপক্ষে যাবেন। তবে এ ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করেন ওয়াশিংটনভিত্তিক থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক আরব আমেরিকান ইনস্টিটিউটের (এএআই) সভাপতি জেমস জোগবি। তার মতে, ট্রাম্পের বিশাল একটি সমর্থক গোষ্ঠী রয়েছে। গণমাধ্যম, সরকার, ডেমোক্রাটরা ট্রাম্পকে যত বেশি আক্রমণ করবেন, তার সমর্থকরা আরও বেশি সোচ্চার হয়ে উঠবেন।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension