বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে বিশ্ব


মো. জাহিদুল ইসলাম:
আধুনিক বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তি মানবজাতির জন্য আশীর্বাদ তুল্য। সময়ের সঙ্গে বিশ্বময় প্রযুক্তির প্রয়োগ যেমন বেড়েছে তেমনি এ প্রয়োগের একাধিক উদ্দেশ্যও সাধিত হয়েছে। এ বিশ্বে প্রযুক্তির ইতিহাস বহুকাল আগের। মানুষের জীবনযাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অনেকাংশে আমাদের এগিয়ে নিয়ে এসেছে। বর্তমানে প্রতিটি মানুষের জীবন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির স্পর্শে আলোড়িত এবং এর ব্যবহারের অনেক ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। শিক্ষাখাত, পরিবেশ, অর্থনীতি, রাষ্ট্রীয়, ব্যক্তিগত জীবন সহ সব কিছুতেই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আমাদের সাথে উতপ্রেতভাবে জড়িত রয়েছে। সর্বোপরি তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে পুরো পৃথিবী এখন ছোট হয়ে চলে এসেছে মানবজাতির হাতের মুঠোয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি হলো মূলত সমস্ত ডিভাইস, নেটওয়ার্কিং উপাদান, সফটওয়্যার এবং প্রযুক্তিগত সিস্টেমগুলোর সমষ্টিগত রূপ। বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বলে শেষ করা যাবেনা। দিনে দিনে শুধু এর ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং অত্যাধুনিক পদ্ধতি আবিষ্কার হচ্ছে। প্রযুক্তি হল সভ্যতার কাছে এক প্রকার আশীর্বাদস্বরূপ। আর তথ্যপ্রযুক্তি হলো সেই আশীর্বাদের সবচেয়ে বড় উপহার যার ব্যবহার প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই আধুনিক বিশ্বের সাথে পাল্লা দিয়ে চলতে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে সবাইকে দক্ষ হয়ে উঠতে হবে। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি। প্রযুক্তির অনেক প্রভাব রয়েছে। এটি অধিক সমৃদ্ধ অর্থনীতি বিকাশে সাহায্য করছে যা বর্তমানের বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। শিল্প বিপ্লবের পর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়ন পৃথিবীতে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ব্যপক উন্নতির ফলে সমগ্র বিশ্ব আজ মানুষের হাতের মুঠোই এসেছে। যা এখন গ্লোবাল ভিলেজে নামে পরিচিত। বিশ্বের সকল অগ্রসর ও উন্নয়নের পেছনে রয়েছে বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তি। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ছাড়া বর্তমান বিশ্বে কোন প্রকার উন্নয়ন সম্ভব নয়। বর্তমান বিশ্বকে বলা হয়ে থাকে তথ্য-প্রযুক্তির বিশ্ব। জীবন উন্নয়ন ও টেকসই বিশ্ব গড়তে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার আবশ্যক। আমাদের ব্যক্তিগত জীবনেও তথ্য প্রযুক্তির চাহিদা ব্যাপক। ঘুম থেকে উঠার পর থেকে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত এর অসম্ভব ব্যবহার চলছে। তথ্যপ্রযুক্তির উপাদানের তালিকা দিন দিন যেন বেড়েই চলেছে। তথ্যপ্রযুক্তির আওতায় ইন্টারনেট থেকে শুরু করে ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক এবং এর সাথে মোবাইল ফোন, ল্যান্ডলাইন টেলিফোন, রেডিও, টেলিভিশন, কম্পিউটার এইসব কিছুই অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও আরোও অনেক উপাদান যেমন স্মার্টফোন, ডিজিটাল টিভি, স্বয়ংক্রিয় রোবট, স্যাটেলাইট সহ আরোও অনেক ডিভাইস সমূহ সাম্প্রতিকভাবে তথ্যপ্রযুক্তির আওতায় যুক্ত রয়েছে। পারস্পরিক যোগাযোগ থেকে শুরু করে একটি দেশের সামরিক খাত পর্যন্ত এই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল। যে জাতি তথ্যপ্রযুক্তিতে যত বেশি দক্ষ সেই জাতি তত বেশি উন্নত। বৈজ্ঞানিকদের সবচেয়ে বিষ্ময়কর আবিষ্কার তথ্যপ্রযুক্তি। মানুষ ঘরে বসে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় দূরের মানুষের সাথে যোগাযোগ থেকে শুরু করে কেনা-বেচার কাজও করছে। তথ্যপ্রযুক্তি-বিদ্যা কাজে লাগিয়ে মানুষ বেকারত্ব দূর করতে পারছে । তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অনেকেই ঘরে বসে উপার্জন করতে পারছে। প্রযুক্তির ব্যবহার ছাড়া যেন এক মুহূর্তও চলা সম্ভব নয়। তাই তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও যুবকদের বেকারত্ব দূর করার জন্য আমাদেরকে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তির অনেকভাবে আমাদের জীবনযাত্রাকে করেছে উন্নত। আমরা যে বর্তমানে সহজেই যোগাযোগ করতে পারি তা তথ্যপ্রযুক্তির অবদান। তথ্যপ্রযুক্তি অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং পারস্পারিক লেনদেন সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে আছে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে মানুষের কাজকর্ম, যোগাযোগের মাধ্যম, শিক্ষা এবং জীবনযাত্রায় ব্যাপকভাবে পরিবর্তন এসেছে। এইভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধিতে তথ্যপ্রযুক্তির এর গুরুত্ব এতটাই স্মরণীয় হয়ে উঠেছে যে প্রযুক্তি ছাড়া আমরা নিঃশ্বাসও নিতে পারিনা। এই নতুন যুগকে তাই ডিজিটাল যুগও বলা হয়। তবে তথ্যপ্রযুক্তির সুযোগ সুবিধাগুলি এখন সব জায়গায় মানুষ সমানভাবে পাচ্ছেনা। ধনী দেশ বা ধনী মানুষেরা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির এই সুযোগ সুবিধা গুলো আগে পেয়ে যায় এবং ভোগ করে থাকেন। গরিব দেশ এবং সাধারণ মানুষেরা এখনও অনেকটা বঞ্চিত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির এসকল সুযোগ-সুবিধা হতে। তাই প্রযুক্তি ব্যবহারে বৈষম্য দূর করার ক্ষেত্রে যতটুকু সম্ভব পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। এর ফলে প্রযুক্তির সেবা সকলেই ভোগ করার সুবিধা পাবে। তথ্যপ্রযুক্তির উপকারের পাশাপাশি কিছু সমস্যা ও বয়ে নিয়ে আসছে। তথ্যপ্রযুক্তির নেতিবাচক দিক আমাদের ব্যক্তিগত জীবনের পাশাপাশি একই সাথে সমাজের জন্যেও সামগ্রিকভাবে ক্ষতিকর। ইন্টারনেটের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার বর্তমান তরুণ সমাজকে অপরাধের দিকে নিয়ে যেয়ে আসক্ত করে তুলছে। এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হ্যাক করে ব্ল্যাকমেইল করার মত বিষয়গুলি সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ডেকে আনছে। প্রযুক্তির ব্যবহারে একদিকে যেমন তৈরি করেছে নতুন কর্মসংস্থানের অন্যদিকে প্রযুক্তিতে অদক্ষ মানুষের জন্য তৈরি হয়েছে বেকারত্ব। এছাড়াও এত ভারচুয়ালিটির প্রসারতার ফলে মানুষের সাথে মানুষের দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। এর ফলে বাড়ছে সামাজিক অবক্ষয়। আমাদের প্রত্যেকের জন্য প্রযুক্তি অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। বর্তমান যুগে প্রযুক্তির ব্যবহার ছাড়া একদিন কাটানোর কথা কল্পনা করাও কঠিন। এসব প্রযুক্তি আমাদের জন্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে যা করে সেগুলোর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছি আমরা সবাই। একজন মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে আধুনিক প্রযুক্তির যেমন সুন্দর দিক রয়েছে ঠিক তেমনি কিছু কুৎসিত দিকও রয়েছে। তাই সেসব কুৎসিত দিকগুলোকে দূর করে আধুনিক প্রযুক্তিকে কীভাবে মানবকল্যাণে প্রয়োগ করা যায় সেদিকে সবাইকে নজর দিতে হবে। যাবতীয় কদাকার দিক দূর করার পাশাপাশি ভেদাভেদ ভুলে সভ্যতার সার্বিক উন্নয়নে প্রযুক্তি ব্যবহৃত হলে তবেই বিজ্ঞানের এ আশীর্বাদ যথার্থ সফলতা লাভ করবে। বর্তমান ডিজিটাল যুগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রসার আমাদের জীবনকে অনেকটাই সহজ এবং উপভোগ্য করে তুলেছে। তবে এর পাশাপাশি প্রযুক্তির অপব্যবহার কিছু সমস্যাও বয়ে এনেছে। আমাদের মূল কাজ হলো প্রযুক্তির খারাপ দিকগুলোকে দূরে রেখে এর ভাল দিকগুলো বেছে নেয়া। প্রযুক্তির প্রসারের যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিত করে আমাদের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে।
লেখক: নেটওয়ার্ক টেকনিশিয়ান (আইসিটি সেল)/জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension