
তাণ্ডবের পরদিন হাসপাতালে বলসোনারো
ব্রাজিলের রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় প্রেসিডেন্ট ভবন, কংগ্রেস (সংসদ) ও সুপ্রিম কোর্টে সমর্থকদের তাণ্ডবের একদিন পরই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট জেইর বলসোনারো। পেট ব্যথা নিয়ে সোমবার তিনি আমেরিকার ফ্লোরিডায় একটি হাসপাতালে ভর্তি হন। খবর বিবিসির।
সোমবার এ নিয়ে ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেন জেইর বলসোনারোর স্ত্রী মিশেল বলসোনারো। হাসপাতালে ভর্তি জেইর বলসেনারো নিজেও তার ছবি টুইটারে পোস্ট করেছেন।
সাবেক এই প্রেসিডেন্টকে ২০১৮ সালে ছুরিকাঘাত করা হয়েছিল। তারপর থেকেই তিনি মাঝেমধ্যে পেটে ব্যথায় ভোগেন।
তবে বলসেনারোর অবস্থা মারাত্মক কিছু নয় বলে তার পরিবারের ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে রয়টার্স।
ব্রাজিলে গত অক্টোবরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর থেকে যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছিল, তার বিস্ফোরণ ঘটে রোববার। ফল প্রত্যাখ্যান করা পরাজিত প্রার্থী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জেইর বলসোনারোর সমর্থকরা রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় প্রেসিডেন্ট ভবন, কংগ্রেস (সংসদ) ও সুপ্রিম কোর্টে তাণ্ডব চালায়।
বিবিসি বলছে প্রায় ১০ দিন আগে ব্রাজিল ছেড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান জেইর বলসেনারো। গত সপ্তাহে তিনি নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট লুইস ইনাসিও লুলা দা সিলভার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে অংশ নিতে অস্বীকার করেছিলেন। জানুয়ারির প্রথম দিনে ব্রাজিলের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথগ্রহণ করেন লুলা। তৃতীয়বারের মতো দেশটির প্রেসিডেন্ট হলেন প্রবীণ এই বামপন্থি রাজনীতিক।
এদিকে গত বছরের অক্টোবরে নির্বাচনে হেরে যাওয়া সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট বলসোনারোর হাজার হাজার কট্টরপন্থি সমর্থক লুলার জয় প্রত্যাখ্যান করেন। তারা পুনর্নির্বাচন, এমনকি পরিস্থিতি নিরসনে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপেরও দাবি জানিয়ে আসছিলেন। শেষ পর্যন্ত রোববার তাদের ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে।
গার্ডিয়ান, বিবিসি, আল জাজিরাসহ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বলছে, বলসোনারোর সমর্থকদের হামলার পর দেশটির প্রেসিডেন্ট ভবন এবং সুপ্রিম কোর্টের জিনিসপত্র চুরি হয়ে গেছে বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের এ তাণ্ডবকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ আখ্যায়িত করে স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেল গ্লোবো নিউজ জানায়, ‘তিনটি ভবনে অভ্যুত্থানচেষ্টায় সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করেছে।’
রোববার প্রায় তিন ঘণ্টা বলসোনারোর সমর্থকদের দখলে থাকার পর ভবনগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেয় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ঘটনার ভিডিওতে দেখা গেছে, কংগ্রেস ভবন ও সুপ্রিম কোর্টের জানালাসহ আসবাবপত্র ভাঙচুর করছেন বলসোনারোর সমর্থকরা। জ্বলছে আগুন। ভাঙাচোরা আসবাবপত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে এখানে-সেখানে। প্রেসিডেন্ট ভবন ও এর আশপাশে পতাকা গায়ে জড়িয়ে অবস্থান নিয়েছেন বলসোনারোর অনুসারীরা। এ সময় তাদের হাতে ইংরেজিতে লেখা ‘ইন্টারভেনশন’ প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। মনে করা হচ্ছে, এই লেখার মাধ্যমে ব্রাজিলিয়ান সেনাবাহিনীকে অচলাবস্থা নিরসনে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন হামলাকারীরা।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুসারে, কট্টর ডানপন্থি রাজনীতিক বলসোনারোর প্রায় তিন হাজার সমর্থক রাষ্ট্রের প্রধান তিনটি ভবনে এই হামলা চালিয়েছেন। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদেরও মারধর করতে দেখা যায় হামলাকারীদের।
এ ঘটনাকে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সমর্থকদের ক্যাপিটল হামলার ঘটনার সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। ট্রাম্প নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি আমেরিকার ক্যাপিটল হিল ভবনে হামলা হয়।
প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা রোববারের ঘটনাটির জন্য বলসোনারোকে দায়ী করে এক ভাষণে বলেছেন, এতে যারাই জড়িত থাকুক শাস্তি পেতে হবে।