
দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান
অর্থ পাচারের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র ১১ বাংলাদেশির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বিবেচনা করছে-বিদেশি গণমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশের বিষয়টি আমাদের দেশের জন্য একটি সতর্কবার্তা। বস্তুত দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও সুশাসন নিশ্চিত করার স্বার্থে অর্থ পাচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের নিজেদেরই কঠোর হওয়া দরকার। অর্থ পাচার আমাদের দেশে যে একটি বড় সমস্যা, তা বহুল আলোচিত।
যেসব উপায়ে অর্থ পাচার হয়ে থাকে তাও বহুল আলোচিত। দেশ থেকে নানাভাবেই অর্থ পাচার হচ্ছে। আমদানি ও রপ্তানির আড়ালেও অর্থ পাচারের ঘটনা ঘটে থাকে। ওভার ইনভয়েসিং (আমদানিতে মূল্য বেশি দেখানো) এবং আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের (রপ্তানিতে মূল্য কম দেখানো) মাধ্যমে এসব অর্থ পাচার হয়।
এছাড়া একটি চক্র বৈদেশিক মুদ্রায় প্রবাসীদের রেমিট্যান্স সংগ্রহ করে তা বিদেশেই রেখে দেয়, আর দেশে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত টাকায় এর দায় শোধ করা হয়। এসব ছাড়াও আরও নানাভাবে অর্থ পাচার হচ্ছে। পাচারের ছিদ্রগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করে তা বন্ধের পদক্ষেপ নেওয়া গেলে রোধ হতে পারে অর্থ পাচার।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে আরও তৎপর হতে হবে এবং নজরদারি বাড়াতে হবে। জানা যায়, ২০১৮, ২০১৪ ও ২০০৭ সালে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার বেড়ে গিয়েছিল। এ বছরগুলো বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক আলোচিত ছিল। চলতি বছরও নির্বাচনি বছর হওয়ায় অতীতের মতো বেশি অর্থ পাচারের আশঙ্কা রয়েছে।
অর্থ পাচারের একটি বড় কারণ দুর্নীতি। দুর্নীতি রোধ করা গেলে অর্থ পাচার কমবে। দুর্নীতির ব্যাপারে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। ক্ষমতাসীন অথবা তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দুর্নীতিতে জড়ানোর সুযোগ বেশি থাকে। কাজেই ক্ষমতাসীন দলকেই দুর্নীতি রোধে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।
সাধারণত রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থির হলে অর্থ পাচারের প্রবণতা বেড়ে যায়। কাজেই দেশে যাতে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি না হয়, সেজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। দেশে বিনিয়োগের আকর্ষণীয় পরিবেশ সৃষ্টি হলে অর্থ পাচারের প্রবণতা কমবে। অর্থ পাচার রোধে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংককে নিতে হবে বাড়তি সতর্কতা। দুর্নীতি ও অর্থ পাচার রোধে প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে। পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনাটাও জরুরি। দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে অর্থ পাচার ও দুর্নীতি রোধে কর্তৃপক্ষকে কঠোর হতে হবে।