আঞ্চলিকভ্রমণ

পটুয়াখালীর রাঙাবালী চোখ জুড়ানো রূপালী রূপ সৌন্দর্য

জাকির মাহমুদ সেলিম, পটুয়াখালী প্রতিনিধি: পটুয়াখালী জেলার সর্বদক্ষিনে বঙ্গোপসাগরের পাদদেশে উত্তরে চালিতাবুনিয়া নদী, আগুনমূখা নদী ও চর বিশ্বাস, পশ্চিমে রামনাবাদ চ্যানেল ও কলাপাড়া উপজেলা পূর্বে চর ফ্যাশন উপজেলার চর কুররী- মুকরী এবং দক্ষিনে বঙ্গোপসাগর।

রাঙাবালী উপজেলার নামকরনের সঠিক ইতহাস জানা যায় নি। তবে কথিত আছে যে, সাগর বক্ষে নতুন বালুচর সৃষ্টির ফলে কালের বিবর্তনে এই বালুচরের বালু লাল ছিল। এই ‘লাল’ শব্দটি আঞ্চলিক ভাষায় রাঙা নামে পরিচিত। এ থেকেই রাঙাবালি নামের উৎপত্তি। ইতিহাসবিদরা জানিয়েছেন, ১৭৮৪ সালে কিছু রাকাইন জনগোষ্ঠী আরাকান রাজ্য থেকে পালিয়ে এসে এ অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। তখন থেকে এ অঞ্চলে জনবসতির পত্তন হয়।

২০১১ সালের ৭ জুন নিকারের (ন্যাশনাল ইপপ্লিমেন্টেশন কমিটি ফর এ্যাডমিনিস্ট্রেশন রিফর্ম) ১০৫তম সভায় রাঙাবালী উপজেলার প্রশাসনিক অনুমোদন হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সে বছর ১৩ জুন বাংলাদেশ গেজেট প্রকাশিত হয়।

সাগর কন্যা খ্যাত পটুয়াখালী সাগর পাড়ের উপজেলা রাঙাবালীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান। পটুয়াখালীর সর্বদক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের কোলে প্রাকৃতির অপার সৌন্দর্য নিয়ে জেগে আছে সোনার চর। পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলা থেকে ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব এবং পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা থেকে ৪০ কিলোমিটার পূর্বে বুড়াগৌরাঙ্গ নদের মোহনায় বঙ্গোপসাগরে সোনার চর দ্বীপটির অবস্থান। সোনার চর পূর্ব-পশ্চিমে ৪ কিলোমিটার এবং উত্তর-দক্ষিণে আড়াই কিলোমিটার। আয়তন ১০ বর্গকিলোমিটার। গোটা দ্বীপটি যেন সাজানো-গোছানো এক বনভূমি। রয়েছে কেওড়া, সুন্দরী, গড়ান, হেঁতাল, গোলপাতাসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। নিভৃত সোনার চরে শুধু নানান ধরনের বৃক্ষের সমাহারই নয়, রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রাণীও। হরিণ, শিয়াল, মহিষ, বন্যশূকর, বানর এ বনের বাসিন্দা। রয়েছে চার কিলোমিটার সমুদ্রসৈকত। নগরের কর্মচাঞ্চল্য থেকে বহুদূরে এই সৈকতের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য এখনো অনেকের কাছে অজানা।

এ অঞ্চলের ম্যানগ্রোভ বন মৌ-চাষীদের মধু আহরণের অভয়ারণ্য। সোনার চর সংলগ্ন মাত্র ২ কি.মি. পশ্চিমে রয়েছে চর হেয়ার সমুদ্র সৈকত ও সংরক্ষিত বনাঞ্চল। প্রায় ৪.৬ বর্গকিলোমিটারের দ্বীপের ৩ কি.মি. দীর্ঘ এ সমুদ্র সৈকত সর্ব দক্ষিণ অংশটি বঙ্গোপসাগর মুখি। ছোটবড় অসংখ্য লাল কাঁকড়ার এই দ্বীপটির অন্যতম বিশেষ আকর্ষণ হলো একই জায়গায় দাঁড়িয়ে সুর্যাস্ত ও সুর্যোদয় দেখা যায়।

উপজেলা সদর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে জাহাজমারা সৈকত। রাস্তার দুই পাশে সারি সারি সবুজ বন। জাহাজমারা সৈকতে সারি সারি ঝাউবন আর পাখ-পাখালির কলরবে মুখরিত পরিবেশ। চকচকে বালিতে লাল কাঁকড়ার ছোটাছুটি আর সাদা ঝিনুকের সমারোহ। দেখা মিলবে পাতি তিসাবাজ, সাদা কলার্ড মাছরাঙা, পানকৌড়ি, সাদা বক, খেকশেয়ালসহ নানা ধরনের পাখ-পাখালি আর বন্যপ্রাণী।

জাহাজ মারা সমুদ্র সৈকতের সামান্য দক্ষিণে চর তুফানিয়া দ্বীপ। চারদিকে নদী ও সাগর, মাঝখানে দাঁড়িয়ে সবুজ বনাঞ্চলে সৃষ্ট এই দ্বীপ। প্রায় চার কিলোমিটার সমুদ্রতট ঘিরে রয়েছে বিশাল ঝাউবাগান।
সেখানেও প্রায় ১ কি.মি. দীর্ঘ সৈকত। দেখা মিলবে পাতি তিসাবাজ, সাদা কলার্ড মাছরাঙা, পানকৌড়ি, সাদা বক, খেকশেয়ালসহ নানা ধরনের পাখ-পাখালি আর বন্যপ্রাণী। সাগর ও নদী তীরে সহজ সরল মানুষের বাস, যারা আপ্যায়নেও আন্তরিক। পটুয়াখালী জেলার রাঙাবালী উপজেলার সদরে আছে স্বল্প খরচে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension