এশিয়াযুক্তরাষ্ট্র

পুরনো বন্ধু কিসিঞ্জারের মৃত্যুতে কী বলছে চীন?

১৯৭১ সালে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন হেনরি কিসিঞ্জার

২০০১ সালে ‘অন চীন’ নামে একটি বই প্রকাশ করেন তিনি, যেখানে চীনের কূটনীতি ব্যাখ্যা করার পাশাপাশি দুই দেশের সম্পর্কের ইতিহাস পর্যালোচনা করেন

যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্সে লিখেছেন, কিসিঞ্জার চীন-যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কী অবদান রেখেছেন তা ইতিহাস মনে রাখবে

ভাষান্তর: নাজমুস সাকিব রহমান

সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও কূটনীতিক হেনরি কিসিঞ্জারের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। গতকাল বুধবার শতবর্ষী কিসিঞ্জারের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থাগুলো তাদের প্রচারিত খবরে ‘চীনের জনগণের পুরনো বন্ধু’ সম্বোধন করে।

প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্ব সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছিলেন কিসিঞ্জার। এরপর তিনি প্রায় ১০০ বার চীন সফর করেছেন। ফলে তার মৃত্যুর পর চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থাগুলোর সুরে একটি স্বতন্ত্র পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোয় মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে বেইজিংয়ের সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।

রিচার্ড নিক্সন ও জেরাল্ড ফোর্ড— এ দুই সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন কিসিঞ্জার। এছাড়াও তিনি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭১ সালে প্রথমবারের মতো বেইজিং সফর করেন কিসিঞ্জার, যা পরের বছরের ফেব্রুয়ারিতে রিচার্ড নিক্সনের ঐতিহাসিক সফরের ভিত্তি স্থাপন করে।

কিসিঞ্জারের মৃত্যুর পর আজ বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে শোকবার্তা পাঠিয়েছেন শি জিনপিং। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই কিসিঞ্জারের কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি, রাজনৈতিক সাহস ও কূটনৈতিক প্রজ্ঞার উত্তরাধিকারী হতে হবে।

স্বাভাবিকভাবেই প্রায় একইরকম বার্তা প্রতিধ্বনিত হচ্ছে চীনে। সেন্ট্রাল টেলিভিশন কিসিঞ্জারকে ‘কিংবদন্তি কূটনীতিক’ হিসেবে অভিহিত করেছে, যেহেতু তিনি চীন-যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন গভীরভাবে প্রত্যক্ষ করেছিলেন।

অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত শি ফেং মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্সে (পূর্বে টুইটার নামে পরিচিত) লিখেছেন, কিসিঞ্জারের মৃত্যু ‘আমাদের দেশ ও বিশ্ব উভয়ের জন্যই এক বিরাট ক্ষতি’। শতবর্ষী এই ব্যক্তি চীন-যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কী অবদান রেখেছেন তা ইতিহাস মনে রাখবে। তিনি সবসময় চীনের জনগণের হৃদয়ে মূল্যবান পুরনো বন্ধু হয়ে বেঁচে থাকবেন।

গত জুলাইয়ে সর্বশেষ চীন সফর করেছিলেন কিসিঞ্জার। এ সময় প্রেসিডেন্ট শি তাকে বলেছিলেন, চীনের জনগণ তাদের পুরনো বন্ধু এবং চীন-যুক্তরাষ্ট্রকে কখনো ভুলবে না। দুই দেশের সম্পর্ক সবসময় কিসিঞ্জারের নামের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। এ সময় জুলাইয়ের সফরটি ‘বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে উল্লেখ করেন প্রেসিডেন্ট শি।

প্রতিউত্তরে কিসিঞ্জার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উভয়ের ভুল বোঝাবুঝি দূর করা উচিত। যুক্তরাষ্ট্র বা চীন— কেউই একে অপরকে প্রতিপক্ষ হিসেবে বিবেচনা করার খরচ বহন করতে পারবে না। যুদ্ধে লিপ্ত হলে তা দুই দেশের জনগণের জন্য কোনো অর্থবহ ফল আনবে না।

১৯৭১ সালে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন কিসিঞ্জার। তখন পাকিস্তান সফরে গিয়ে তিনি অসুস্থ হওয়ার কথা প্র্রকাশ করেছিলেন, যাতে গোপনে বেইজিং যেতে পারেন এবং চীনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে পারেন। এক বছর পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সন বেইজিং সফর করেন।

পরবর্তীতে ২০০১ সালে ‘অন চীন’ নামে একটি বই প্রকাশ করেন কিসিঞ্জার। সেখানে মার্কিন পাঠক ও শ্রোতাদের কাছে চীনের কূটনীতি ব্যাখ্যা করার পাশাপাশি দুই দেশের সম্পর্কের ইতিহাস পর্যালোচনা করার চেষ্টা করেছিলেন।

গত বছর চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া চীন নিয়ে কিসিঞ্জারের গভীর ধারণা তাদের দেশের অনেক নাগরিককে অনুপ্রাণিত করেছে বলে জানায়। একইসঙ্গে সিনহুয়া উল্লেখ করে, চীনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষার্থীদের বইটি পড়া প্রয়োজন।

ওয়াশিংটন পোস্ট অবলম্বনে

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension