আন্তর্জাতিকখেলা

ফিলিস্তিন কি কাতার বিশ্বকাপে সবচেয়ে বড় বিজয়ী ছিল?

স্পেনের বিপক্ষে জয়ের পর ফিলিস্তিনের পতাকা উড়ালেন মরক্কোর ফুটবলাররা। ইংল্যান্ড থেকে কাতারে যাওয়া কয়েকজন সমর্থক ইসরাইলি সাংবাদিকের লাইভ অনুষ্ঠানে আওয়াজ তুললেন ফিলিস্তিনের পক্ষে। মাঠ, ফ্যান জোন, রেঁস্তোরায় অনেকেই এড়িয়ে চলেছেন ইসরাইলিদের। এমন অনেক ঘটনার সাক্ষী কাতার বিশ্বকাপ। প্রশ্ন উঠছে, বিশ্বকাপের বড় বিজয়ী কি তাহলে ফিলিস্তিন? ২০শে নভেম্বর শুরু হয় বিশ্বকাপ আসর। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মূলকথা ছিল ভ্রাতৃত্ব আর ভালোবাসার বন্ধনে বিশ্বকে এক সুতোয় গাঁথা। কিন্তু এই প্রথম ফ্যান জোন, স্টেডিয়াম এমনকি খেলোয়াড়রাও প্রকাশ্যে ফিলিস্তিনের পক্ষে সমর্থন দিয়েছেন, ফিলিস্তিনের পতাকা উড়িয়ে তাদের স্লোগান ও গান গেয়েছেন। মাঠের নাটকীয় পারফরম্যান্সের বাইরে রাজনৈতিক দিক থেকেও কাতার বিশ্বকাপ গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন রেখে যাচ্ছে। আসর কেন্দ্র করে যেন মধ্যপ্রাচের রাষ্ট্রনায়কদের মাঝে সৌহার্দ্য ফিরে এসেছে। গত ১৮ই নভেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়।

দেখা যায়, দোহার একজন বাসিন্দাকে ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য জোর করছেন এক টিভি সাংবাদিক। কিন্তু ভদ্রলোক ইন্টারভিউ দিতে একদমই রাজি হচ্ছেন না।
কারণ, তিনি জানতে পারেন এই টিভি চ্যালেন ইসরাইলের। দু’দিন পর আরেকটি ভিডিও ভাইরাল হয়। লেবাননের একদল ফুটবল সমর্থক ইসরাইলি সাংবাদিককে সরাসরি এড়িয়ে চলেন। তাদের একজন চ্যালেন টুয়েলভকে বলেন, ‘ইসরাইল বলতে কোনো কিছুর অস্তিত্ব নেই। এটা ফিলিস্তিন।’ ইসরাইলি টিভি সাংবাদিক রাজ শেখনিক টুইটারে এ নিয়ে নিজের হতাশা ব্যক্ত করেছিলেন। ২৬শে নভেম্বর আরব ফ্যানরা তার সঙ্গে কথা না বলেই পাশ কেটে যান। সেদিন তার শেয়ার করা ভিডিওতে দেখা যায়, তিনজন নারী ও একজন পুরুষ ফিলিস্তিনের পতাকা নিয়ে বলছেন, ‘ইসরাইলের কিছুই নেই। সব ফিলিস্তিনের।’ ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ইসরাইলের সঙ্গে শান্তিচুক্তি ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ড’-এ সই করে মরক্কো। তবে দেশটির জনগণ তাদের শাসকদের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি। বিশ্বকাপ দেখতে কাতারে যাওয়া মরক্কোর ভক্ত-সমর্থকরা পদে পদে ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলেছেন। বেলজিয়ামের বিপক্ষে ২-০ গোলের জয়ের দিন স্টেডিয়ামে ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ ব্যানার নিয়ে হাজির হন তারা।

স্পেনের বিপক্ষে শেষ ষোলোতে জয়ের পর মরক্কোর ফুটবলাররা ফিলিস্তিনের পতাকা তুলে ধরেন ক্যামেরার সামনে। ইসরাইলি সাংবাদিক শেখনিকের শেয়ার করা ভিডিওতেই দেখা যায়, এক মরোক্কান ফ্যান চেঁচিয়ে বলছেন, ‘ইসরাইল নয় ফিলিস্তিন।’ শেখনিক তখন উচ্চস্বরে বলেন, ‘কিন্তু আমাদের মাঝে শান্তিচুক্তি আছে। তোমারা চুক্তিতে সই করেছো।’ স্থানীয় কাতারি জনগণ বেশ রুক্ষ আচরণ করেছেন ইসরাইলি সাংবাদিকদের সঙ্গে। লাইভ করার সময় সামনে গিয়ে ফিলিস্তিনের পতাকা উঁচিয়ে ধরা, তাদের সামনে প্রো-প্যালেস্টাইন স্লোগান দেওয়াসহ নানাভাবে বুঝানোর চেষ্টা করেছেন, তারা ইসরাইলকে ঘৃণার চোখে দেখেন। সৌদি আরব এবং তিউনিশিয়ার ভক্ত-সমর্থকরাও তাদের মতো করে ইসরাইলি আগ্রাসনের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়া-তিউনিশিয়া ম্যাচের সময় গ্যালারিতে ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ ব্যানার দেখা গেছে। কাতার-নেদারল্যান্ডস ম্যাচেও আলাদাভাবে নজর কাড়ে ফিলিস্তিনের পতাকা। মরক্কোসহ আব্রাহাম অ্যাকর্ড-এ সই করেছে সুদান, আরব আমিরাত ও বাহরাইন।

ইসরাইল আরব ও আফ্রিকার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর কাছে প্যালেস্টাইন ইস্যুকে নরমালাইজ করার চেষ্টা করছে। প্রশ্ন উঠেছে, আরবের সঙ্গে শান্তি চুক্তির পরও কেন এত মানুষ ইসরাইলের বিপক্ষে? প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক জার্নালিজম প্রফেসর এবং আল কুদস্‌ বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক মিডিয়া ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা দাউদ কুত্তাব আরব নিউজকে বলেন, ‘কোনো সন্দেহ ছাড়াই কাতার বিশ্বকাপে আরব জনগণ এবং বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ দেখিয়েছে, তারা মনেপ্রাণে ফিলিস্তিনিদের মুক্তির পক্ষে।’ কুত্তাব বলেন, ‘আরবের যে দেশগুলো শান্তিচুক্তিতে সই করেছে, তারা মনে করেছিল, এই চুক্তির ফলে ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরাইলি শাসকদের পলিসি উদার হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, ফিলিস্তিনিরা ঠিকই তাদের সেনাদের হাতে মারা যাচ্ছে। একজন সুপরিচিত প্যালেস্টাইন-আমেরিকান টিভি রিপোর্টারকে গুলি করে মারা হলো। ইসরাইলি আর্মি এ নিয়ে তদন্ত পর্যন্ত করতে রাজি হয়নি।’ প্রফেসর কুত্তাব মনে করেন, ইসরাইলে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর আগামীর সরকারের সামনে আরও কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে আরব জনগণ। বিশ্বকাপে স্পষ্ট হয়েছে, আর যাই হোক ফিলিস্তিন ইস্যুতে আরবদের মন জয় করা সহজ হবে না ইসরাইলের।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension