মনের প্রতিধ্বনিমুক্তমত

বসন্ত ও ভালবাসা

বসন্ত কুমার দাস। বয়েস চল্লিশের কোটায়। পাদুকা শ্রমিক। মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামে বাড়ি। উল্টোদিকের আমাদের গ্রাম কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার মৌবাড়িয়া । দু গ্রামের মাঝে কেবল মাথাভাঙ্গা নদী।

বেশ কিছুদিন আগে বসন্তের হার্টের দুটি ভাল্বই নষ্ট হয়ে যায়। ভর্তি করা হয় ঢাকার হৃদরোগ হাসপাতালে। ভর্তির পর থেকেই শুরু হয় টাকা জোগাড়ের সংগ্রাম। ডাক্তার ধারণা দেয় ২ লাখ ১৫ হাজার টাকা লাগবে। ওর পরিবার থেকে জোগাড় হয় ৭০ হাজার টাকার মতো। বাকি টাকা জোগাড়ের প্রতীজ্ঞা নেয় আমাদের গ্রামের যুবারা। শুরু হয় অতি দরিদ্র বসন্তকে বাঁচানোর উদ্যোগ। প্রথমে ওরা পাড়ার প্রতি বাড়ি থেকে টাকা সংগ্রহ করে। পরে গ্রামের বাইরে যারা চাকরি করে তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় করে ফেলে। ইতোমধ্যে ভাল্বও বিনে পয়সায় জোগাড় হয়ে যায়।

কাল শুনলাম বসন্তের অপারেশন সাকসেসফুল। ওর জ্ঞান ফিরে এসেছে। বেশ কিছুটা টাকা অতিরিক্ত রয়ে যায় এ কারণে। এ টাকা দিয়ে বসন্তের আগামী দিনের ওষুধ ও সংসারের খরচপাতিতে ব্যয় হবে।

আমাদের গ্রামে কোনও হিন্দু পরিবার নাই। যারা ছিল ‘৪৭-এ ইন্ডিয়ায় চলে গেছে। গ্রামে তিনটা চায়ের দোকান। আমি জানি আজও হয়ত দোকানগুলোতে বসন্তদের জন্য আলাদা চায়ের কাপ আছে। আমি বাড়ি গেলে বসন্তের কাছে জুতা পালিশ করে একটু বেশি টাকা দিতাম। গ্রামের বন্ধুদের অভিযোগ, ‘তুই দাম বাড়িয়ে দিচ্ছিস।’

প্রতিবছর এখনও দেখি কোরবানির খাশির মাংশ সমাজ থেকে বসন্তর জন্য আলাদা করে দেয়া হয়। এতে কারও কোনও আপত্তি দেখি নি।

যারা এ উদ্যোগ নিয়েছে বিশেষ করে লিটন, মুন্না এদের ধন্যবাদ দিয়ে নিজেকে ছোট করব না। বসন্তরা বেঁচে থাকুক এসব উদ্যোগে – মানবতাও বাঁচে সাথে। বসন্তের রঙে রঙিন হোক ফাগুন আর মানুষের ভালবাসা বিকোক এভাবেই।

লেখক: সম্পাদক, উঠান সাহিত্য পত্রিকা।

 

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension