
বহু বধ্যভূমি এখনো তালিকাভুক্ত হয়নি
স্বাধীনতা অর্জনের ৫০ বছর অতিক্রম করেছে বাংলাদেশ। অথচ এই অর্ধশতাব্দীতেও মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতার সূর্যসন্তানদের হত্যা করে ফেলে রাখা অনেক বধ্যভূমি আজও সরকারি তালিকায় স্থান পায়নি। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের তালিকায়, ২৮০টি বধ্যভূমির নাম থাকলেও, বেসরকারি হিসেবে এই সংখ্যা প্রায় হাজার। ফলে সরকারি তালিকার বাইরে থাকা বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণেও নেই কোনো উদ্যোগ। এমনকি তালিকাভুক্ত বধ্যভূমিগুলোতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য প্রকল্প নেওয়া হলেও যথাসময়ে কাজ শেষ হয়নি।
সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব বলেন, ‘দেশে প্রায় চার হাজার বধ্যভূমি রয়েছে। এর মধ্যে সরকার কিছু সংরক্ষণ করেছে। আসলে এগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণ না করা মানে সেগুলো ধ্বংস করতে সহায়তা করা। মুক্তিযুদ্ধের পর ৫১ বছর চলে যাচ্ছে। বধ্যভূমিগুলো মুক্তিযুদ্ধের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। দেশের বিভিন্ন জায়গায় অনেক বধ্যভূমি দখল হয়ে গেছে। খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই বধ্যভূমিগুলো চিহ্নিত করে সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে।’
মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা ও নির্যাতন নিয়ে গবেষণা করছে ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি। এক জরিপ শেষে সংস্থাটি জানিয়েছে, সারাদেশে পাঁচ হাজারের মতো বধ্যভূমি রয়েছে। এগুলোর মধ্যে তারা ৯৪২টি বধ্যভূমি তারা শনাক্ত করতে পেরেছে। যদিও সে তালিকা এখনো প্রকাশ করেনি কমিটি।
গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর (গণহত্যা জাদুঘর) ৬৪ জেলার ৩২টিতে জরিপ শেষ করেছে। জাদুঘর ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, ৩২ জেলার জরিপে পাওয়া তথ্যানুযায়ী বধ্যভূমির সংখ্যা ৭২৫টি। গণহত্যার সংখ্যা ১৩ হাজার ৬৫০টি। গণকবর আছে এক হাজার একটি এবং নির্যাতনকেন্দ্রের সংখ্যা এক হাজার ৬২টি। আমাদের জরিপে দেশের আনাচেকানাচে অসংখ্য বধ্যভূমি ও গণকবরের সন্ধান মিলছে।
জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা ও মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক গণহত্যায় ব্যবহৃত বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণ এবং স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণে ৪৪২ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্প গ্রহণ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর একনেক বৈঠকে অনুমোদন পাওয়া এ প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০১৮ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। এই প্রকল্পের অধীনে গণপূর্ত অধিদপ্তরের মাধ্যমে ৪০ জেলার ১১০ উপজেলায় ২৮০টি বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের পাশাপাশি রায়েরবাজার বধ্যভূমির আনুষঙ্গিক কাজও সম্পাদন করার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব এবং বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় সমস্যায় পড়তে হয়েছে ভূমি অধিগ্রহণ করতে গিয়ে। কারণ প্রকল্প শুরু হয়েছিল স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর। এই দীর্ঘ সময়ে বেশিরভাগ বধ্যভূমি অযতেœ-অবহেলায় পড়ে ছিল। তা ছাড়া অধিকাংশ বধ্যভূমির জায়গা ব্যক্তিমালিকানাধীন হওয়ায় সেখানে বাড়িঘরসহ অন্যান্য স্থাপনাও নির্মিত হয়েছে। ফলে বধ্যভূমি ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা জটিল হয়েছে। তবে নির্ধারিত ২৮০টি বধ্যভূমির মধ্যে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে ২০টিতে। বর্তমানে ১৬টি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের কাজ চলছে। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।