
সরকার হেফাজতে ইসলামকে যেভাবে নির্মূল করতে চেয়েছিল, সেভাবে জনগণের দল বিএনপিকে নির্মূল করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) রাজধানীর গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এমন কথা বলেন তিনি।
‘বিএনপির দশা হেফাজতের মতো হবে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এ কথা বলেন ফখরুল।
সেই সঙ্গে তিনি ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিতে চালানো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেন।
প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে মঙ্গলবার আলোচনা হয়। সে প্রসঙ্গ তুলে ফখরুল বলেন, ‘সভা মনে করে এই উক্তি উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিরোধী দলের সংবিধানসম্মত গণতান্ত্রিক কর্মসূচিগুলোকে বাধাগ্রস্ত করবার হুমকি।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বিএনপির স্থায়ী কমিটি মনে করে ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে এই সরকার যেভাবে অসংখ্য আলেম-ওলামা ও মাদ্রাসার কিশোর ছাত্রদের হত্যা করেছে। পরবর্তীতে অসংখ্য হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে অনেককে এখনও কারাগারে আটক রেখেছে, এটা তারই স্বীকারোক্তি।’
বৈঠকে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হামলা ও হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করা হয়।
বিএনপি নেতাকর্মীদের মামলা দিয়ে, পুরোনো মামলায় হয়রানি করতে সরকার নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালে আমাদের ১৯ জনের প্রার্থিতা বাতিল করে দিল। তারা আর নির্বাচন করতে পারেনি। একইভাবে এখন যা চলছে, পত্রপত্রিকায় দেখি আমাদের কাদের কতগুলো মামলা আছে এবং সেগুলো ত্বরান্বিত করার দিকে এগোচ্ছে তারা। কয়েকদিন আগে হাইকোর্ট থেকে স্টে করা আব্বাস সাহেবের (বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস) একটি মামলা আবার শুরু হচ্ছে দেখলাম। এভাবে দেখবেন প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের টার্গেট একটা বিএনপিকে নির্মূল করা। সেই কারণেই তারা এসব করছে।’
তিনি বলেন, ‘কিন্তু পরিণতি কী হবে? মানুষ কিন্তু বিএনপিকে চায়। বিএনপির রাজনীতি মানুষের রাজনীতি। এত অত্যাচার-নির্যাতনের পরও আমি প্রায়ই বলি, ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠেছে। এটাকে তো রোধ করার কোনো উপায় নেই। মনে রাখতে হবে, বিএনপি হচ্ছে পিপলস পার্টি, জনগণের দল। শত চেষ্টা করলেও এ দলকে নির্মূল করা যাবে না।’
এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, তাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বা তার স্ত্রী জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে যে মামলা আছে, সেসবের কোনো ভিত্তিই নেই। এসব মামলার মাধ্যমে তাদেরকে বাংলাদেশ থেকে এবং রাজনীতি থেকে দূরে রাখার একটা প্রচেষ্টা মাত্র।
মির্জা ফখরুল সোমবার (৩১ অক্টোবর) রাতে অনুষ্ঠিত বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত জানাতে ওই সংবাদ সম্মেলন করেন।
তিনি বলেন, ‘সভায় সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রধানমন্ত্রীর উক্তি ‘সামনের বছর দুর্ভিক্ষ হতে পারে’ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সভা মনে করে এই উক্তিতে এটা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, সরকার আপৎকালীন খাদ্য মজুদ করতে ব্যর্থ হয়েছে। একই সঙ্গে খাদ্যশস্য আমদানি গত চার মাসে প্রায় ৩৭ শতাংশ হ্রাস পাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।’
এর কারণ হিসেবে সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতির অভিযোগ করেন তিনি। ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘সভা মনে করে সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য অধিদপ্তরের নজিরবিহীন দুর্নীতি, উদাসীনতা ও অযোগ্যতার কারণে খাদ্যনিরাপত্তা চরম হুমকির সম্মুখীন। একই সঙ্গে দুর্নীতির কারণে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে ব্যয়ের ফলে ডলার সংকট হওয়ায় এলসি খুলতে না পারা আমদানিকে ব্যাহত করছে। ডলার সংকট সৃষ্টির জন্য সম্পূর্ণভাবে সরকারের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করা হয়। রিজার্ভ থেকে অনৈতিকভাবে ডলার সরিয়ে নেওয়া, প্রবাসীদের বৈদেশিক আয় থেকে বিদেশে হুন্ডি করে, প্রতিবছর ৭-৮ বিলিয়ন পাচার করে এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে ফেলেছে।’
সভায় গ্যাসের অভাবে সার কারখানা বন্ধ করে সারের মূল্যবৃদ্ধি, বীজের মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুৎ ও ডিজেলের অভাবে সেচ ব্যাহত হওয়ায় খাদ্যশস্য উৎপাদন ব্যয় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ফখরুল বলেন, ‘কৃষকরা ধানসহ খাদ্যশস্য উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। এসবের মূল কারণ সরকারের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা। সব মিলিয়ে খাদ্যনিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।’
সভা থেকে সরকারের পদত্যাগ আহ্বান করে বিএনপি।
স্থায়ী কমিটির সভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
সভায় উপস্থিত ছিলেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।