অগ্নিঝরা মার্চপ্রধান খবরবাংলাদেশমুক্তিযুদ্ধ

বিশ্বকে বলার মতো গল্প বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালিকে দিয়ে গেছেন:

বাংলাদেশকে নিজের ‘সেকেন্ড হোম’ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মায়ের মতো’ উল্লেখ করে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং বলেছেন, গর্বিত বুকে বিশ্বকে বলার মতো গল্প বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালিকে দিয়ে গেছেন।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ‘মুজিব চিরন্তন’ শীর্ষক ১০ দিনের আয়োজনের অষ্টম দিনের আয়োজনে বুধবার সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে লোটে শেরিং বাংলাদেশ-ভুটান কূটনৈতিক সম্পর্কর ৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষে প্রকাশিত ডাকটিকিট তুলে দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর হাতে।

সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গত এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অনেক সাফল্য এসেছে। বাংলাদেশ ও দেশের মানুষের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত আশাব্যাঞ্জক। ৫০ বছর ধরে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক রয়েছে। প্রতিবার বাংলাদেশে আসার সময় নিজের ‘সেকেন্ড হোম’ বলে মনে হয়।’

শেখ হাসিনাকে মায়ের চোখে দেখার কথা জানিয়ে লোটে শেরিং বলেন, ‘এই দেশের মানুষের সৌভাগ্য যে তারা শেখ হাসিনার মতো একজন নেতা পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পিতার স্বপ্ন পূরণে কাজ করে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনা এবং তার সরকার কোভিড পরিস্থিতি দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করছে।’

তিনি বলেন, “আজকে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী এবং এমন একটি দেশের ৫০তম বার্ষিকী উদ্‌যাপন করছি, যেটার জন্য তিনি পুরো জীবন ব্যয় করেছেন। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, অন্যকে বলার মতো একটি গল্প প্রত্যেক মানুষ ও জাতির অবশ্যই থাকা উচিত। বিশ্বের সব মানুষকে বলার মতো একটি চমৎকার গল্প বাংলাদেশকে দিয়ে গেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

লোটে শেরিং বলেন, ভুটানের রাজা যেভাবে সুখী মানুষের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছেন, ঠিক একইভাবে স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বক্তৃতার শেষে তিনি অন্নদাশঙ্কর রায়ের লেখা পঙ্‌ক্তি থেকে উচ্চারণ করেন, ‘যত দিন রবে পদ্মা মেঘনা যমুনা বহমান, তত দিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান…।’

সভাপতির বক্তব্যে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ভুটানের স্বীকৃতি দেওয়ার দিনটির কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণের আগেই রেডিওতে ভুটানের স্বীকৃতি দেওয়ার খবর শোনাটি ছিল অনন্য এক মুহূর্ত। ভারতে বাংলাদেশের শরণার্থীদের প্রতি ভুটানের স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তার কথাও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ভুটান বাংলাদেশের প্রাচীন বন্ধু। দুই দেশ একে অপরের সহযোগিতা করে যাচ্ছে। শিক্ষা, বাণিজ্য, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ছে। ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশের চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়াশোনার বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি শুধু ভুটানের না, তিনি বাংলাদেশেরও।

অষ্টম দিনের অনুষ্ঠানের প্রতিপাদ্য ছিল ‘শান্তি, মুক্তি ও মানবতার অগ্রদূত’। এদিন শুভেচ্ছা জানিয়ে ভিডিও বার্তা দেন ভারতের কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী এবং ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস।

বিশ্ব শান্তি ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা তুলে ধরে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানিত ফেলো রওনক জাহান অনুষ্ঠানে বলেন, শান্তি, মুক্তি ও মানবতার অগ্রদূত হিসেবে বঙ্গবন্ধুর ভাবমূর্তি ১৯৭১ সালে বিশ্ব জনমত গঠন ও অর্জনের ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছিল। বঙ্গবন্ধুর নীতি ছিল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা ও সুষম সমাজব্যবস্থার নীতি। তিনি নিজেকে প্রথমে মানুষ এবং পরে বাঙালি হিসেবে পরিচয় দিতেন। তিনি দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি চেয়েছিলেন। ধর্মীয় রাজনীতির বিরোধী ছিলেন তিনি।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে অভ্যর্থনা জানান। সঙ্গে ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানা। জাতীয় সংগীতের পর সম্মানিত অতিথি ও অন্যদের নিয়ে মঞ্চে আসন গ্রহণ নেন শেখ হাসিনা। মহামারির এ সময় তাদের সবার মুখে মাস্ক দেখা যায়।

ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে পাঠের পর অন্যান্য দিনের মতো মুজিব চিরন্তন থিমের ওপর টাইটেল অ্যানিমেশন ভিডিও এবং থিম সংগীত দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর অনুষ্ঠানের সঞ্চালক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন স্বাগত বক্তব্য দেন এবং থিমভিত্তিক একটি ভিডিও দেখানো হয়। প্রায় পাঁচ শ জন আমন্ত্রিত অতিথি উপস্থিত ছিলেন। স্পিকার, কূটনীতিক, রাজনীতিবিদ, সংস্কৃতিকর্মী, সাংবাদিক ও ভুটানের অতিথিরা ছিলেন দর্শকসারিতে।

সাংসদ ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর ধারণ করা বক্তব্য প্রচার করা হয় অনুষ্ঠানে। তিনি জাতীয় চার নেতা, সব মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনাদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।

অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির হাতে ‘মুজিব চিরন্তন’ শ্রদ্ধাস্মারক তুলে দেন সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। আলোচনা পর্ব শেষে বিরতির পর হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।❐

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension