
মো.আসিফুর রহমান
আসিফ ও খাদিজার গল্পটা শুরু হয়েছিল এক বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায়। আকাশে মেঘের গর্জন, আর রাস্তার পাশে ছোট্ট একটা চায়ের দোকানে আশ্রয় নিয়েছিল খাদিজা। তার হাতে ভিজে যাওয়া একটা বই, চোখে অপেক্ষার ছায়া। আসিফ ঢুকল সেই দোকানে, কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে, চশমার কাচে বৃষ্টির ফোঁটা। দুজনের চোখাচোখি হতেই যেন সময়টা একটু থমকে গেল। চোখাচোখির সময়টা যেন এক মায়াবী মুহূর্ত। আসিফের চোখে একটা কৌতূহল মিশ্রিত উষ্ণতা, আর খাদিজার চোখে লাজুক হাসির সাথে একটু অবাক ভাব। দুজনের দৃষ্টি মিলতেই যেন একটা অদৃশ্য সুতোয় বাঁধা পড়ে, যেখানে কথা না বলেও অনেক কিছু বলা হয়ে যায়। চারপাশের কোলাহল যেন ম্লান হয়ে আসে, আর তাদের মাঝে শুধু একটা নীরব বোঝাপড়া গড়ে ওঠে। সেই মুহূর্তে বাতাসে একটা মিষ্টি উত্তেজনা ভেসে বেড়ায়, যা শুধু তারাই টের পায়।
এই বইটা কি আপনার ভালো লাগে?’ খাদিজা হঠাৎ জিজ্ঞেস করল।
আসিফ মৃদু হেসে বইয়ের পাতা উল্টে বলল, “হ্যাঁ, তবে বৃষ্টির দিনে এর চেয়ে বেশি ভালো লাগে কারো সঙ্গে গল্প করা।’
খাদিজার ঠোঁটে লজ্জামাখা হাসি ফুটে উঠল।
দিন গড়িয়ে সেই সন্ধ্যা থেকে তাদের দেখা হতো প্রায়ই। কখনো নদীর ধারে বসে সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে, কখনো পুরোনো শহরের গলিতে হাঁটতে হাঁটতে। আসিফের গল্পে থাকত স্বপ্নের রঙ, আর খাদিজার চোখে ফুটে উঠত সেই স্বপ্নের প্রতিচ্ছবি। একদিন, নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে আসিফ বলল, ‘তুমি জানো, খাদিজা, তোমার চোখে আমি আমার পুরো পৃথিবী দেখতে পাই।’
খাদিজা চুপ করে তার হাতটা ধরল, বাতাসে তার ওড়না উড়তে থাকল।
এক শীতের সকালে, আসিফ খাদিজার হাতে একটা ছোট্ট চিঠি দিল। তাতে লেখা, ‘তুমি আমার বৃষ্টি, তুমিই আমার রোদ।’
খাদিজা পড়ে হাসল, আর আসিফের কাঁধে মাথা রেখে বলল, ‘আর তুমি আমার সব ঋতুর গল্প।’
তারপর থেকে তাদের দিনগুলো ভরে উঠল ছোট ছোট মুহূর্তে— হাসিতে, স্বপ্নে, আর একে অপরের সান্নিধ্যে। বৃষ্টি হোক বা রোদ, আসিফ আর খাদিজা জানত, তাদের ভালোবাসা সব আবহাওয়ায় একই রকম উজ্জ্বল থাকবে। বসন্তে, যখন ফুল ফোটে আর প্রকৃতি নতুন জীবন পায়, ভালোবাসা হয়ে ওঠে সেই সবুজ আর গোলাপি রঙের মতো— আশা আর উচ্ছ্বাসে ভরা।
গ্রীষ্মে, তপ্ত দিনের মাঝেও এটি শীতল ছায়ার মতো, লাল আর কমলা রঙে উষ্ণতা ছড়ায়। বর্ষায়, যখন আকাশ ঝরে পড়ে, ভালোবাসা সেই ধূসর মেঘের মাঝে রামধনুর সাত রঙ হয়ে ঝলসে ওঠে— ভিজে গিয়েও আনন্দে ভরিয়ে তোলে।
শরতে, পাতাঝরা দিনে, এটি সোনালি আর বাদামি রঙে শান্ত সৌন্দর্য নিয়ে আসে। হেমন্তে, শিশিরের স্পর্শে, এটি রূপোলি আভায় চমকায়। আর শীতে, ঠান্ডা কনকনে হাওয়ার মাঝে, ভালোবাসা উষ্ণ কম্বলের মতো গাঢ় লাল আর গভীর নীলে প্রকাশ পায়। প্রতি ঋতুতে এর রঙ বদলায়, কিন্তু উজ্জ্বলতা কখনো কমে না— যেন এক চিরন্তন আলোকবর্তিকা।