ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক হবে ন্যায্যতার ভিত্তিতে: ছাত্রদের ইউনূস
ভারতের সাথে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক দরকার মন্তব্য করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “সেই সম্পর্ক হবে ন্যায্যতা এবং সমতার ভিত্তিতে।”
প্রতিবেশীর সঙ্গে পারস্পরিক সমান সম্মানের ভিত্তিতে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে সার্ককে আরও কার্যকর করতে উদ্যোগ নেওয়ার কথাও বলেছেন তিনি।
রোববার বিকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়ে তিনি এ কথা বলেন।
পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম সাংবাদিকদেরকে আলোচনার বিষয়ে জানান।
মাহফুজ বলেন, “শিক্ষার্থীদের এক প্রশ্নের উত্তরে ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে বর্তমান সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন ড. ইউনূস। সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করবেন বলে প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন।”
এই মতবিনিময়টি হলো সরকারের এক মাস পূর্তিতে। প্রবল ছাত্র জনতার গণ আন্দোলনের মুখে গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন ঘটে। ভারতে উড়ে যান আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিন দিন পর ৮ অগাস্ট সন্ধ্যায় শপথ নেয় মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মত বিনিময়ের এই প্রেক্ষাপট তুলে ধরে মাহফুজ আলম বলেন, “ছাত্ররা তাদের মতামত জানিয়েছেন। নানা সংস্কার কাজে হাতে দেওয়ার বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টা তাদের অবহিত করেছেন। সরকারের অন্যান্য উপদেষ্টারা মতামত দিয়েছেন।
“ঢাকা ও আশেপাশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ১৫০ জনের মত শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। এখানে শুধু সমম্বয়কই শুধু নয়, যারা আন্দোলনে বিভিন্ন স্থানে নেতৃত্বে ছিলেন তারা ছিলেন। প্রধান উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের বলেছেন, তারা যেন অন্তত মাসে একবার তাদের মতামত জানান।”
শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা, এই প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, “দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা হচ্ছে। সরকার সবার মতামত গ্রহণ করে সরকার তার অবস্থান পরিষ্কার করবে। তবে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ যে অপরাজনীতি করেছে সেই রাজনীতি যেন ক্যাম্পাসে ফিরে না আসে সেটা আমাদের অঙ্গীকার।”
মাহফুজ আলম বলেন, “ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি নিয়ে প্রতিটি ক্যাম্পাসে আলোচনা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে এখন স্পষ্ট গাইডলাইন দেওয়া হয়নি। কোন ফরম্যাটে রাজনীতি হবে, সেই আলোচনা সব জায়গায় চলছে। আমরা চাই সমাজের বিভিন্ন অংশ ও ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাইরে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হোক। এরপর যে সারসংক্ষেপ আসবে সেই প্রেক্ষিতে সরকার তার অবস্থান পরিষ্কার করবে।”
সরকার পতন আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে একটি ফাউন্ডেশনের কাজ চলমান রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “তার মাধ্যমে শহিদ পরিবারগুলোর পুনর্বাসন এবং তাদের রাষ্ট্রীয় সুবিধা ও সম্মান নিশ্চিতের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা কথা বলেছেন।”
সরকার পতনের পর হত্যা মামলায় গণহারে আসামি করার বিষয়ে এক প্রশ্নে মাহফুজ বলেন, “এ ব্যাপারে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার, এগুলো কোনোভাবেই হতে দেওয়া যাবে না। কোনো ব্যক্তি তার ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে হামলা মামলা করতে পারবে না। তবে যারা ‘ফ্যাসিবাদের’ দালাল ও দোসর হিসেবে যারা কাজ করেছে, তাদের বিচার অবশ্যই হবে।”
অন্য এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “সারা দেশে মাজার ও মন্দিরে হামলা কিংবা ব্যক্তি আক্রোশের কারণে হামলার বিষয়ে আইন যেভাবে বলে সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা ‘ফ্যাসিস্টের দালালি’ বা দোসর হিসেবে কাজ করেছেন, জনগণ তাদের বিচার করবে না। আইন তাদের বিচার করবে।
“জনগণ শুধু এইটুকু খেয়াল রাখবে যে, এ বিষয়ে যেন কোনো কম্প্রমাইজ না হয় এবং যারা শহিদ বা আহত হয়েছেন, তাদের সাথে যেন বেইমানি না হয়। এ বিষয়ে সরকার কঠোর হচ্ছে।”
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম, উপ প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীর এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বিডিনিউজ২৪