যুক্তরাষ্ট্র

ভূখণ্ড ছাড়তে ‘রাজি’ ইউক্রেন, ট্রাম্প-পুতিনের অনুকূলে যুদ্ধবিরতি কি হয়েই যাচ্ছে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ও ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের মেয়রের সাম্প্রতিক বক্তব্য যুদ্ধবিরতির আশা জাগাচ্ছে। তবে প্রশ্ন হলো, যুদ্ধবিরতি আসলে কত দূর? কারণ, ডোনাল্ড ট্রাম্প খুব তোড়জোড় করলেও তাঁর ক্ষমতায় আসার ১০০ দিনের বেশি পেরিয়ে যাওয়ার পরও যুদ্ধবিরতি এখনো আসেনি ইউক্রেনে।

কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিৎসকো ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলেছেন, শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে ইউক্রেনকে হয়তো জমি ছাড়তে হবে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে তিনি এমন মন্তব্য করেছেন। ক্লিৎসকো বলেন, একটি সম্ভাব্য পরিস্থিতি হলো…ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়া। এটি ন্যায্য নয়। তবে শান্তির জন্য, সাময়িক শান্তির জন্য হয়তো এটি একটি সমাধান হবে। সাময়িকভাবে।

মূলত রাশিয়ার যে দাবি, রণক্ষেত্রের বর্তমান অবস্থা অনুসারে যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন, সেটির পক্ষেই যেন সম্মতি ক্লিৎসকোর এই মন্তব্য। তবে ক্লিৎসকোর এই মন্তব্যই কেবল রাশিয়ার জন্য যুদ্ধবিরতির একমাত্র শর্ত নয়। কারণ, তাঁর প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বারবার বলেছেন, ইউক্রেন তার ভূখণ্ড ছাড়বে না। এ ছাড়া ইউক্রেনের ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেওয়া নিয়েও রাশিয়ার আপত্তি রয়েছে।

তারপরও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের বক্তব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে আশা জাগাচ্ছে, যেখানে ইউক্রেনকে সত্যিকার অর্থেই রণক্ষেত্রের বর্তমান পরিস্থিতি মেনে নিয়ে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়া লাগতে পারে। কারণ, ট্রাম্প কোনো চালবাজি না করে উভয় পক্ষকে একটি যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন। ট্রাম্প ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে মেনে নিতে জেলেনস্কির প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু জেলেনস্কি সেই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন।

নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ডোনাল্ড ট্রাম্প লিখেছেন, জেলেনস্কির এই প্রত্যাখ্যান ‘হত্যার ক্ষেত্রকে’ দীর্ঘায়িত করা ছাড়া আর কিছুই করবে না। কেউ তা চায় না। ট্রাম্প লেখেন, ‘আমরা একটি চুক্তির খুব কাছাকাছি। কিন্তু যার কাছে খেলার জন্য কোনো তাস নেই, সেই লোকটিই তাহলে এটি সম্পন্ন করুক।’

এদিকে টাইম ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন, ক্রিমিয়া রাশিয়ার সঙ্গেই থাকবে। তিনি বলেন, ‘ক্রিমিয়ার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।’ বরং তিনি দাবি করেন, এই বিতর্কিত বিষয় তাঁকে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা দিয়ে গেছেন।

মনে রাখা দরকার, ক্রিমিয়া ইউক্রেনের একটি দক্ষিণাঞ্চলীয় উপদ্বীপ। ২০১৪ সালে রাশিয়া এটিকে নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করে নেয়। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বারবার এই অঞ্চলকে রুশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ধারণা প্রত্যাখ্যান করেছেন। এ সপ্তাহে ট্রাম্প জেলেনস্কির সমালোচনা করে বলেছেন, ‘যদি তিনি ক্রিমিয়া চান, তাহলে ১১ বছর আগে এর জন্য লড়াই করেননি কেন?’

একই সাক্ষাৎকারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভকে যুদ্ধ শুরুর জন্য দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, যুদ্ধ শুরু হওয়ার কারণ ছিল যখন তারা ন্যাটোতে যোগদানের কথা বলতে শুরু করেছিল।’ ট্রাম্পের কথা থেকে এটি স্পষ্ট, ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া শর্ত মানতেই হবে, অন্য কোনো বিকল্প নেই।

এদিকে ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত বন্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ব্যাপক তোড়জোড় চালাচ্ছে। ১৭ এপ্রিল ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের একটি বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ একটি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব পেশ করেন। জবাবে ইউরোপীয় দেশগুলো ও ইউক্রেন একটি পাল্টা প্রস্তাব দিয়েছে। দুই পক্ষের প্রস্তাবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের নিরাপত্তা দেবে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের নেতৃত্বে গঠিত ‘আগ্রহীদের জোট।’ এই জোটে যুক্তরাষ্ট্র থাকবে না। অন্যদিকে ইউরোপীয়রা চায়, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশ ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুক। ন্যাটোর মতো একটি শক্তিশালী প্রতিশ্রুতি তারা চাইছে, যেখানে আক্রান্ত হলে ইউক্রেনকে সহায়তা করা হবে।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension