
ভূমিকম্পে তুরস্ক-সিরিয়ায় প্রাণহানি : আমাদেরও শিক্ষা নিতে হবে
ভূমিকম্পে তুরস্ক-সিরিয়া এক মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়িয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। শুধু তুরস্কেই মারা গেছে ৩ হাজার ৪১৯ জন। আর সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬০২ জনে।
বলা হচ্ছে, তুরস্কে প্রায় এক শতকের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প এটি। গত সোমবার ভোরে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার এই ভূকম্পনে নিহতের সংখ্যা প্রতি ঘণ্টায় বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, এই মৃত্যুর সংখ্যা ৮ গুণ বাড়তে পারে। এ সময় লোকজন গভীর ঘুমে মগ্ন থাকায় কারণে ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহত বেশি হয়েছে।
তুরস্ক ও সিরিয়া দুটি দেশেই হাজার হাজার ভবন ধসে পড়েছে। ভূমিকম্পে ব্যাপকসংখ্যক মানুষের প্রাণহানিতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। তবে এই ভূমিকম্প আমাদের জন্য অশনিসংকেত।
বাংলাদেশের দুদিকের ভূ-গঠনে শক্তিশালী ভূমিকম্পের শক্তি জমা হয়েছে। এর একটা হচ্ছে উত্তর-পূর্বকোণে সিলেট অঞ্চলে ডাউকি ফল্টে, আরেকটা হচ্ছে পূর্বে চিটাগং ত্রিপুরা বেল্টে পাহাড়ি অঞ্চলে। এখানে দুটি বড় ধরনের ভূমিকম্প বাংলাদেশের দ্বারপ্রান্তে অবস্থান করছে। উত্তর প্রান্তে যেটা ডাউকি ফল্ট, এখানে সংকোচনের হার হচ্ছে প্রতি ১০০ বছরে এক মিটার।
গত ৫০০-৬০০ বছরে বড় ধরনের ভূমিকম্পের কোনো রেকর্ড নেই। তার মানে পাঁচ-ছয় মিটার চ্যুতি ঘটানোর মতো শক্তি অর্জন করেছে। এটা যদি রিখটার স্কেলে প্রকাশ করা হয় তাহলে এটা ৭ দশমিক ৫ থেকে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প সৃষ্টি করতে পারে। আর এখান থেকে ঢাকা শহর হচ্ছে দেড়শ কিলোমিটার। যে কোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে। রাজধানী ঢাকার আশপাশে বড় মাত্রার ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে ঢাকা মহানগরীর।
ঢাকার মধ্যে বড় ভূমিকম্প সৃষ্টির মতো ভূতাত্ত্বিক অবস্থা না থাকলেও সিলেট ও চট্টগ্রামে শক্তিশালী ভূমিকম্প হলে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ঢাকাও। ঢাকা শহরে সিটি করপোরেশন এলাকায় রয়েছে ৪ লাখের বেশি ভবন। রাজউক এলাকায় যে সংখ্যা ১২ লাখেরও বেশি, যার অধিকাংশই ভূমিকম্প সহনীয় নয়।
বুয়েটের সঙ্গে যৌথভাবে সরকারের সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি সিডিএমপির এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সাড়ে ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে ঢাকার ৭২ হাজার ভবন ধসে পড়বে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় কতটা প্রস্তুত বাংলাদেশ- প্রশ্ন সামনে আসছে। ভূমিকম্প এমন এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যাকে প্রতিরোধ করার কোনো উপায় মানুষের আয়ত্তে নেই।
এমনকি এর পূর্বাভাস দেয়াও সম্ভব হয় না। তাই ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখার পূর্বপ্রস্তুতিই আসল। কিন্তু গরিব দেশগুলোতে সে ধরনের প্রস্তুতি থাকে না, ফলে এসব দেশে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হয়। জাতিসংঘ দুর্যোগ ঝুঁকি সূচকের তথ্যানুযায়ী, ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে বিশ্বের ঝুঁকিপূর্ণ ২০টি শহরের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানেই রয়েছে ঢাকার নাম। যে কোনো সময় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা অমূলক নয়। কাজেই এ ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের সরকার বা জনগণ কতটা প্রস্তুত, সেটা বিবেচনায় আনা খুবই জরুরি।